চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে বুধবার রাতের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বুধবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছাত্রীদের ও রাত ১০টার মধ্যে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভে থাকা শিক্ষার্থীরা বলছেন, হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা এই সিদ্ধান্ত মানি না। হল ত্যাগ করবো না। আমরা এই সিদ্ধান্ত বাতিল চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ অহিদুল আলম বলেন, সিন্ডিকেট থেকে বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এসেছে। আমাদের এ সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ছাত্রছাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।
রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়
রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয় বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবিতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষকদের উদ্ধার করে পুলিশ।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম ও আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। একইসঙ্গে বুধবার বিকাল ৩টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন রেজিস্ট্রার। তিনি বলেন, ইউজিসি থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিকাল ৩টার মধ্যে হল ত্যাগ করে করে নিরাপদ আবাসস্থলে অবস্থানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে বিকালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট সংলগ্ন বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে বিক্ষোভে নামেন। এ সময় সড়কের পাশে ইট মজুত করা হয়। যে কোনও ধরনের হামলা হলে তা প্রতিহত করতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুজয় বলেন, ‘দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও আন্দোলন দমানো যাবে না। যারা ছাত্রলীগের হামলায় নিহত এবং আহত হয়েছেন, অবশ্যই হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সেইসঙ্গে কোটা সংস্কার করা না পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপাচার্যের বাংলোয় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অফিস আদেশে বলা হয়, বুধবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬৪তম জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইউজিসি কর্তৃক প্রেরিত পত্রের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। বুধবার দুপুর ১টার মধ্যে ছাত্র হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থী ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রী হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে বলা হলো।
তবে হল ত্যাগের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিকালে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় দায়িত্বরত পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। সেইসঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিকাল ৩টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কয়েকশ শিক্ষার্থী বটতলা প্রাঙ্গণে সমবেত হন। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর হাতে লাটিসোঁটা দেখা যায়। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন তারা।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাজনিত কারণে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ছেলেদের বুধবার বিকাল ৪টার মধ্যে এবং মেয়েদের বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে আবাসিক হল ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সকালে যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে যবিপ্রবির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের ১০২তম জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের অনেকে ভার্চুয়ালি এবং সশরীরে অংশ নেন।
যবিপ্রবির উপাচার্য ও রিজেন্ট বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে ছেলেদের আবাসিক হল বিকাল ৪টার মধ্যে এবং মেয়েদের আবাসিক হল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সেইসঙ্গে বুধবার বিকালের মধ্যে আবাসিক হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সই করা এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করা হয়েছে। এরপর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত হল ছাড়েননি তারা।
নোবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নোবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার বিকালের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, নোটিশ জারির পর ক্যাম্পাসে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। বিকালে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা ‘মানি না মানবো না, হল আমরা ছাড়বো না’ স্লোগান দেন।
গত কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলমান কোটা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। এর মধ্যে অনেক স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় প্রশাসন।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
চলমান কোটা আন্দোলনের কারণে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের হলত্যাগ এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই সংক্রান্ত নির্দেশনার একটি নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহা. তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়। তবে কর্তৃপক্ষের এমন নির্দেশনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিকালে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।