X
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিদেশি ত্রাণ কক্সবাজার পৌঁছে দিচ্ছে সেনাবাহিনী, বণ্টনে থাকছে না জনপ্রতিনিধি

শফিকুল ইসলাম
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:৩৩আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০২:৫৯

রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে আরাকান থেকে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরাতে চায় সরকার। তাই দেশের বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ত্রাণ সামগ্রী সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ এবং তা ঠিকমতো জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী কাজও শুরু করেছে বলেও জানা গেছে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল রাশিদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ সামগ্রী সেনাবাহিনী গ্রহণ করবে এবং তা যথাযথভাবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ভাণ্ডারে পৌঁছে দেবে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী সে কাজ শুরু করেছে।’

এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদকে বিষয়টি অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গা শিবিরে আগে থেকে ৪০ হাজার রোহিঙ্গার মাঝে যে পদ্ধতিতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে এখনও সেই পদ্ধতিতেই ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে এর পরিধি বেড়েছে মাত্র। এ ক্ষেত্রে ইউএসএইচসিআর, আইএনওসহ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো যৌথভাবে জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করছে, বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়ে তৎপর রয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বণ্টনের সঙ্গে স্থানীয় কোনও জনপ্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্তও রয়েছে সরকারের।

ত্রাণের গাড়ি দেখলেই এভাবে ছুটে আসে রোহিঙ্গারা এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বলছে, ত্রাণ বিতরণে কোনও জটিলতা নেই। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো শুরু থেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে সব ধরণের ত্রাণ বিতরণ করছে। তবে প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা যুক্ত হচ্ছে ক্যাম্পে। সেই ক্ষেত্রে যে জটিলতা আগে সৃষ্টি হয়েছিল এখন তা আর হচ্ছে না। তবে যখনই কোনও ব্যাক্তি, সংগঠন বা সংস্থা জেলা প্রশাসনকে অবহিত না করে সেখানে ত্রাণ বিতরণ করতে গেছে সেখানেই সমস্যা হচ্ছে। সেখানেই জটিলতা বাড়ছে। আর এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের এ মহৎ উদ্যোগ।
নির্ধারিত ক্যাম্পের বাইরে কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফসহ আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্দিষ্ট ক্যাম্পে একত্রিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। ক্যাম্পের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে পুনর্বাসন ও ত্রাণ বিতরণ উভয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি হয়। আর সে কারণেই রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরাতে তৎপর রয়েছে সরকার।

জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ইতোমধ্যেই দেশি-বিদেশি সংস্থা ছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের কাছে ত্রাণ পাঠিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ভারত, মালয়েশিয়া, আজারবাইজান। এসব ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে খাবার, শিশুখাদ্য, ওষুধ, তাবু, কাপড় ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের বিষয়টি পুরোপুরি তদারকি করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এছাড়া ক্যাম্পের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা পরিবারদের জন্য অস্থায়ী ঘর তৈরি করছে নৌবাহিনী।

ব্যক্তি উদ্যোগেও রোহিঙ্গাদের মধ্যে চলছে ত্রাণ বিতরণ (ছবি- ফোকাস বাংলা) এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সব নাগরিক, সংগঠন, ও সংস্থার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, কেউ যেনও বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ বিতরণ না করে। সবাইকে জেলা প্রশাসকের ত্রাণ ভাণ্ডারে ত্রাণ সামগ্রী জমা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ত্রাণ বিতরণ করা হলে তা সমানভাবে সবাই তা পাবেন। অন্যথায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এতে কেউ পাবেন আবার কেউ পাবেন না।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণের স্বার্থে জেলা ত্রাণ বিতরণ মনিটরিং করার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। সেখানেই আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হয় কোন কোন এলাকায় ত্রাণ পাঠানো হয়েছে, কি হয়নি। আর সেভাবই কাজ করছে সবাই।’

জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সুষ্ঠুভাবে ত্রণ বিতরণে সমন্বয় খুব জরুরি। এ জন্যই আমরা সব কাজ জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে করার কথা বলেছি। যদিও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য এখন পর্যন্ত বেসরকারি ত্রাণের তেমন প্রয়োজন সেই। সব কিছুই সরকার ব্যবস্থা করছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোও সহায়তা করছে। তারপরও বাঙালি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ জাতি। তাই তারা মানুষের এই দুঃখ-কষ্টের সময় এগিয়ে আসতে চাই, যার যা আছে তাই নিয়ে। আমরাও সাধারণ মানুষের আবেগকে শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু তা যদি সুশৃঙ্খল না হয় তাহলে সরকারের এই বিশাল মানবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে।
আরও পড়ুন-
বিক্ষোভে সু চির কফিনে আগুন

সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জুমার খুতবায়


রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান আরাকান স্বাধীন করা: হেফাজত

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান হেফাজতের

/এমও/এসএনএইচ/
সম্পর্কিত
রাখাইনে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের
মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকছে ভারী অস্ত্র
প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান: মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
আইইসিসির উদ্যোগের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নেতানিয়াহু
আইইসিসির উদ্যোগের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নেতানিয়াহু
ঝিকরগাছার এক কেন্দ্রে ৪৫ মিনিটে পড়লো ৩২ ভোট
ঝিকরগাছার এক কেন্দ্রে ৪৫ মিনিটে পড়লো ৩২ ভোট
দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৫৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু
দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৫৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু
১০০ লিচু ১০০০ টাকা, তবু দুশ্চিন্তায় এই গ্রামের চাষিরা
১০০ লিচু ১০০০ টাকা, তবু দুশ্চিন্তায় এই গ্রামের চাষিরা
সর্বাধিক পঠিত
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত
রাইসির বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ভিডিও প্রকাশ
রাইসির বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ভিডিও প্রকাশ
ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, জানালেন ওবায়দুল কাদেরঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া
ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া
ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নিহত হলেন যারা
ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নিহত হলেন যারা