X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

বন্ধের পথে ডিএসসিসির শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্র

শাহেদ শফিক
২৮ আগস্ট ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২০, ০৯:৪৯

ডিএসসিসির শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্র রাজধানীর সদরঘাটে অবস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অত্যাধুনিক ‘শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয় ও সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টার’টি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ৮৪ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে ছয় তলা ভবনটির বিশাল অংশ রয়েছে ডিএসসিসির স্থানীয় ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুর রহমান মিয়াজীর দখলে। করপোরেশন থেকে তাকে সরে যাওয়ার জন্য বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও ভবন ছাড়েননি তিনি। কেন্দ্রটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সাজেদা ফাউন্ডেশনও চুক্তির শর্ত অনুযায়ী করপোরেশন থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না। তাছাড়া করোনার কারণে কেন্দ্র পরিচালনায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ডিএসসিসির প্রকৌশল দফতর সূত্র জানায়, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আশ্রয় ও বস্তিবাসী মানুষের আর্থসামাজিক কল্যাণে রাজধানীর সদরঘাটে নগর ভবনের আদলে মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। ১৪ তলা ফাউন্ডেশনে ছয় তলা ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০২ সালে। কাজ শেষ হয় ২০০৬ সালের দিকে। প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি টানা ৯ বছর ফাঁকা ছিল। ২০১৫ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর আবদুর রহমান মিয়াজী ভবনটির দ্বিতীয় তলার প্রায় এক হাজার বর্গফুট জায়গায় কার্যালয় তৈরি করেন। এরপর থেকে তিনি সেখানে নিয়মিত অফিস করছেন।

বন্ধের পথে ডিএসসিসির শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্র

জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে ভবনটি প্রথমে বঙ্গবন্ধু জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্র নামে চালু করার উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। পরে সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ‘শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয় কেন্দ্র ও সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টার’ হিসেবে চালু করা হয়। এ জন্য গত অর্থবছরে ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য গত ৩০ মার্চ বেসরকারি সংস্থা সাজেদা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে দুই বছর মেয়াদি চুক্তি করে ডিএসসিসি। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছর সাজেদা ফাউন্ডেশনকে ৬ কোটি টাকা করে দিবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের উত্তর-পূর্ব কোণে ভবনটির অবস্থান। ছয় তলা ভবনটির দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশে পৃথক চারটি কক্ষ নিয়ে কাউন্সিলর কার্যালয়। জানতে চাইলে কাউন্সিলর আবদুর রহমান মিয়াজী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ নিয়ে আমার বেশি কোনও বক্তব্য নেই। ভবনটি নিয়ে উচ্চ আদালতে আমার একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এটি একটি মাল্টিপারপাস ভবন ছিল। এখানে এলাকার মানুষের জন্য ঐতিহ্যবাহী ব্যায়ামাগার, কাউন্সিলর কার্যালয়, মাতৃসদন ও কমিউনিটি সেন্টার ছিল। আমি সেগুলো বহাল রাখার প্রস্তাব করি। কিন্তু আমার প্রস্তাব রাখা হয়নি। পরে আমাকে (কাউন্সিলর কার্যালয়) সরে যাওয়ার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। র্যাব, পুলিশ ও ডিসি কার্যালয়সহ সবখানে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে আমি অবৈধ। পরে আমি উচ্চ আদালতে রিট করি। কোন ক্ষমতা বলে এটিকে সাজেদা ফাউন্ডেশনকে দেওয়া হয়েছে তা আমি জানি না। অথচ ভবনটির নকশায় একটি কক্ষ কাউন্সিলর কার্যালয় হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে।

বন্ধের পথে ডিএসসিসির শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্র

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, সদরঘাটের এই ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা পড়ে থাকার পর নগরীতে অবস্থানরত জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য রূপান্তর করার উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। ডিএসসিসির তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য বেসরকারি সংস্থা সাজেদা ফাউন্ডেশনকে দায়িত্ব দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে তার নামেই এর নামকরণ করা হয়। এ জন্য করপোরেশনের বোর্ড সভার অনুমোদনও নেওয়া হয়। কিন্তু বোর্ড সভার অনুমোদনের পরেও স্থানীয় কাউন্সিলরের বাধার মুখে পড়ে আশ্রয়কেন্দ্রটি। তিনি ভবনের চারটি কক্ষ ও ভবনের নিচে থাকা পাবলিক টয়লেটটিও দখলে রাখেন। কথা ছিল অত্যাধুনিক এই পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের জন্য যে অর্থ পাওয়া যাবে তা আশ্রয়কেন্দ্রের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।

বোর্ড সভার অনুমোদনের পরেও কার্যালয় সরিয়ে না নেওয়া করপোরেশনের কাজে বাধার সামিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান মিয়াজী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি বোর্ড সভায় এলাকাবাসীর দাবি উত্থাপন করেছি। তখন বলা হয়েছিল এ নিয়ে আমার সঙ্গে বসা হবে। কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করেই সাজেদা ফাউন্ডেশনকে ভবনটি দিয়ে দিয়েছে।

গত ৩০ মার্চ ডিএসসিসির সঙ্গে সাজেদা ফাউন্ডেশনের সমঝোতা চুক্তির পর থেকেই করোনা মহামারির কারণে সারা দেশ লকডাউন করা হয়। তার আগে গত ২৮ জানুয়ারি তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন। তখন আশ্রয়কেন্দ্রটি ছিল লোকে লোকারণ্য। এরপর করোনা, করপোরেশনের অবহেলা ও কাউন্সিলরের বাধার কারণে ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে পড়ে এর কার্যক্রম। আর এসব কারণেই ভবনটি আর পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ডিএসসিসিকে জানিয়ে দেয় সাজেদা ফাউন্ডেশন। তবে এখনও চুক্তি বাতিল না হলেও কর্তৃপক্ষ বিকল্প কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।

বন্ধের পথে ডিএসসিসির শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্র

ডিএসসিসি ও সাজেদা ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, ভবনটির নিচ তলায় জরুরি স্বাস্থ্য সেবাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে ডায়াগনস্টিক, গাইনি, শিশু, মেডিসিন, চর্ম ও দন্ত সেবা প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় তলার বাম পাশে রয়েছে ৭৫ জন বয়স্কর জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র এবং ডান পাশের কক্ষগুলোর মধ্যে একটি প্রশিক্ষণ, একটি কম্পিউটার ল্যাব, একটি মনোসামাজিক কাউন্সিলিং কেন্দ্র। এর একটি কক্ষে রয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়।

ভবনের তৃতীয় তলার বাম পাশে রয়েছে দুই থেকে ছয় বছর বয়সী ৮৫ জন শিশুর জন্য প্রারম্ভিক বিকাশ কার্যক্রম (ইসিডি) ও দিবাযত্ন কেন্দ্র। এছাড়া ৭ থেকে ১০ বছরের শিশুদের শিক্ষাসহ সব শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য ও বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। ডান পাশে ৮৫ জন স্কুলপড়ুয়া শিশুর জন্য শিক্ষা, শারীরিক বা মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক শিক্ষা সেশন রয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় রয়েছে ৪৫২ জনের জন্য আবাসন সুবিধাসহ জীবিকা উন্নয়ন ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুবিধা। ভবনসংলগ্ন একটি উন্নতমানের প্রতিবন্ধীবান্ধব সেবাকেন্দ্র এবং পাবলিক টয়লেট ও মানবিক অধিকার নিশ্চিতকরণে রয়েছে একটি মাতৃদুগ্ধপান কেন্দ্র। এছাড়া সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য রয়েছে কমিউনিটিভিত্তিক মনোসামাজিক সহায়তা প্রদানের সুব্যবস্থা। ডিএসসিসির শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্র

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাজেদা ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয়েছে সেটা তারা পুরোপুরি পালন করতে পারেনি। কাউন্সিলর কার্যালয়টি সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও সরেনি। পাবলিক টয়লেটটিও তার দখলে রয়েছে। এর মধ্যে করোনার কারণে এখন ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সব কিছু আমাদের অর্থেই চলছে। সব মিলিয়ে আমাদের মতামত কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখন তাদের সঙ্গে বসে বিষয়টি সুরাহ করা হবে।

জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্রটি তদারকির দায়িত্বে রয়েছে ডিএসসিসির বস্তি উন্নয়ন বিভাগ। জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা একেএম লুৎফুর রহমান সিদ্দীক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সদরঘাটের শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্রটি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে ঝামেলা চলছে। তাকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য আমরা কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তিনি সরেননি। পাবলিক টয়লেটটিও তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সাজেদা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্তির পর থেকেই করোনা মহামারি দেখা দেয়। ডিএসসিসির শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্র

তিনি আরও বলেন, তাদের সঙ্গে চুক্তি ছিল দুই বছরে সিটি করপোরেশন তাদেরকে ১২ কোটি টাকা দেবে। বিনিময়ে তারা আশ্রয়কেন্দ্রটি পরিচালনা করবে। ডিএসসিসি শুধু তদারক করবে। কিন্তু এখন তারা নানা কারণে অপারগতা প্রকাশ করে আমাদেরকে চিঠি দিয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে ফাইল পাঠিয়েছি। এখন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দিবে সেটাই হবে।

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
বাংলাদেশ-পাকিস্তান বাণিজ্যে যৌথ উদ্যোগের সম্ভাবনা, মতিঝিলে নেটওয়ার্কিং সভা
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
ভাটারায় ছেলেকে আগুন থেকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা- মাসহ আরও তিনজন দগ্ধ
সর্বশেষ খবর
শান্তিবাড়িতে জামদানি প্রদর্শনী
শান্তিবাড়িতে জামদানি প্রদর্শনী
নির্বাচন হলেই তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন: টুকু
নির্বাচন হলেই তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন: টুকু
জাতীয় সনদ দ্রুত বাস্তবায়ন হোক: সালাহ উদ্দিন
জাতীয় সনদ দ্রুত বাস্তবায়ন হোক: সালাহ উদ্দিন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
‘দেশের ৩২টি বিমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে’
‘দেশের ৩২টি বিমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে’