X
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
৩১ বৈশাখ ১৪৩২

‘ছবি তোলার আবদারে’ বেঁচে যান শেখ হাসিনা

পাভেল হায়দার চৌধুরী
২১ আগস্ট ২০২১, ১১:০০আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২১, ১৭:১৪

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আরেকটি জঘন্যতম সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশে ছোড়া হয় আর্জেস গ্রেনেড। লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি, আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ঘটনায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রাণ হারান আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী। আর শরীরে এখনও গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বহন করছেন দলটির অসংখ্য নেতাকর্মী। যন্ত্রণায় কাতর তাদের জীবন। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই হামলার বিচার তো করেইনি, বরং ভয়াবহ এ ঘটনার আলামত নষ্ট করেছে তৎকালীন সরকার।
 
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন ওই সমাবেশ কাভার করতে যাওয়া অনেক গণমাধ্যমকর্মী। বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শী ফটোসাংবাদিক এস এম গোর্কির সঙ্গে। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় গোর্কি বলেন, সেদিন ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ। জাতীয় নেতাদের বক্তব্য শেষে ট্রাকের ওপর বানানো অস্থায়ী মঞ্চে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন। সে সময় অন্য নেতারাও মঞ্চে ছিলেন।

গোর্কির বর্ণনায়, তিনি (শেখ হাসিনা) যখন ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তব্য শেষ করলেন এবং মঞ্চ থেকে নামতে শুরু করলেন, ঠিক তখনই পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত ফটো সাংবাদিকরা চিৎকার করে বলতে লাগলাম, আপা একটু দাঁড়ান। আমরা ছবি তুলবো। আমাদের ছবি তোলা হয়নি। তখন আপা দাঁড়িয়ে আমাদের ছবি তোলার সুযোগ দিলেন। উনি বরাবরই সাংবাদিকদের আবদার রক্ষা করে চলেন। সেদিনও সেটাই করলেন। আর আমাদের সেই আবদার রক্ষার উছিলায় মনে হয় প্রাণে বেঁচে যান আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘ওই একটু থামিয়ে দেওয়াই’ মনে হয় সৃষ্টিকর্তা তাকে রক্ষা করেছেন বলে মনে করেন গোর্কি। তিনি বলেন, এরইমধ্যে মুহুর্মুহু গ্রেনেড হামলা শুরু হলো। আর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর রাজপথ রক্তাক্ত হতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে আহত মানুষের ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে থাকে। আহতদের বাঁচার আকুতি কানে আসতে লাগলো। সেই মুহূর্তে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী এবং আওয়ামী লীগ নেতারা মানববর্ম তৈরি করে সেখান থেকে তাকে রক্ষা করেন।

গোর্কি বলেন, কিছুক্ষণ পরে যখন গ্রেনেড ছোড়া থামে তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ওখান থেকে নিয়ে এসে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করা হয়। গাড়িতে ওঠানোর পরে আবার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। আমি বলবো, আল্লাহর অশেষ রহমতে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তবে ব্যক্তিগত দেহরক্ষী করপোরাল মাহাবুব ঘটনাস্থলে নিহত হন। শেখ হাসিনাকে বহনকারী গাড়ি দ্রুত ধানমন্ডির ৫ নম্বর বাসায় চলে আসে। এরপর সেখানে দেখা যায় আরেক দৃশ্য! পুলিশ এসে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এসব ছোড়ে। আহত আমাকেও সেখান থেকেই হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে শুনতে পেলাম পানি ছিটিয়ে আলামত পর্যন্ত নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। 

ফটো সাংবাদিক এস এম গোর্কি

আর্জেস গ্রনেড দিয়ে হামলা করা হয়েছে উল্লেখ করে এই সাংবাদিক বলেন, এ ধরনের গ্রেনেড সাধারণত যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার করা হয়। এই গ্রেনেড কোনও সাধারণ মানুষ ছুড়ে মারতে পারার কথা নয়, ব্যবহারকারী এরা কারা? কোত্থেকে এটা এলো, আজও মানুষ জানে না। 

সেদিন পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে সেখানে যারা গিয়েছিলেন, তারা সবাই সেই গ্রেনেডকে সাধারণ কোনও ককটেল বা পটকা ভেবেছিলেন উল্লেখ করে গোর্কি বলেন, সে সময় প্রায়ই এমনটা হতো, সমাবেশ বানচাল করার জন্য, আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য এগুলো সাধারণত ঘটতো। সেভাবে সাধারণ কিছুই ধরে নিয়েছি। সমাবেশকে ঘিরে আর্জেস গ্রেনেড হামলা হবে এটা কল্পনাতীত। শুধু আমরাই নয়, সেখানকার অনেকেই এটা ভাবতে পারেননি যে, আর্জেস গ্রেনেড হামলা দেশে ঘটতে পারে।

পেশাগত জীবনে প্রথম এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন এই ফটো সাংবাদিক। তার মতে, অনেক জায়গায় নেত্রীর (শেখ হাসিনা) ওপর হামলা হয়েছে, গুলিবর্ষণ হয়েছে। কিন্তু এমন ন্যক্কারজনক হামলা কল্পনা করাও যায় না।

তিনি বলেন, ১৭ বছর আগের ওই ঘটনায় জীবনটা এমন হয়েছে, এখনও বাসার দরজা লাগাতে গিয়ে যদি একটু শব্দ হয়, ভেতরে একটু আতঙ্ক তৈরি হয়।

/ইউএস/এমওএফ/
টাইমলাইন: ২১ আগস্ট
২১ আগস্ট ২০২১, ১১:০০
‘ছবি তোলার আবদারে’ বেঁচে যান শেখ হাসিনা
২১ আগস্ট ২০২১, ০০:০১
সম্পর্কিত
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ
শেখ হাসিনাকে অবসরে গান শোনাতেন মমতাজ: পাবলিক প্রসিকিউটর
জুলাইয়ে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছে, জেনোসাইড হয়নি: চিফ প্রসিকিউটর
সর্বশেষ খবর
সাম্য হত্যাকাণ্ডে উপদেষ্টা আসিফের দুঃখ প্রকাশ, দিলেন বিচারের আশ্বাস
সাম্য হত্যাকাণ্ডে উপদেষ্টা আসিফের দুঃখ প্রকাশ, দিলেন বিচারের আশ্বাস
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তরুণ শক্তি বিএনপিতে: রফিকুল আলম মজনু
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তরুণ শক্তি বিএনপিতে: রফিকুল আলম মজনু
হজ করতে সৌদি পৌঁছেছেন ৪১,৬৭১ বাংলাদেশি, ৬ জনের মৃত্যু
হজ করতে সৌদি পৌঁছেছেন ৪১,৬৭১ বাংলাদেশি, ৬ জনের মৃত্যু
কাঁচা আমের বার্মিজ আচার বানিয়েছেন আগে?
কাঁচা আমের বার্মিজ আচার বানিয়েছেন আগে?
সর্বাধিক পঠিত
বিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগবিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
বাড়লো স্বর্ণের দাম, বুধবার থেকে কার্যকর
বাড়লো স্বর্ণের দাম, বুধবার থেকে কার্যকর
রাতে চিয়া বীজ খেলে এই ৬ উপকার পাবেন
রাতে চিয়া বীজ খেলে এই ৬ উপকার পাবেন
রাজধানীতে ৩০০ লিমিটেডের যাত্রা শুরু
রাজধানীতে ৩০০ লিমিটেডের যাত্রা শুরু
শেখ হাসিনাকে অবসরে গান শোনাতেন মমতাজ: পাবলিক প্রসিকিউটর
শেখ হাসিনাকে অবসরে গান শোনাতেন মমতাজ: পাবলিক প্রসিকিউটর