X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত

শেখ শাহরিয়ার জামান
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:৫৯আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:৫৯

ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকের খসড়া চূড়ান্ত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্বকে মাথায় রেখে এবং অন্য দেশগুলো এ বিষয়ে কী ভাবছে—সেটিকে বিবেচনায় নিয়ে এই খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিতের পূর্বশর্ত হচ্ছে নিরাপত্তা। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বন্দ্বে কোনও ধরনের পক্ষ হতে চায় না বাংলাদেশ। এই ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইন্দো-প্যাসিফিককে কীভাবে দেখে বাংলাদেশ এবং এখান থেকে দেশটি কী অর্জন করতে চায়, সেটির বিষয়ে সবাইকে জানানোর জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক তৈরি করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে চায় বাংলাদেশ।

একাধিক সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি আউটলুকে ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশের স্বার্থ অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যগুলো অর্জনের জন্য যেসব নিরাপত্তা উপাদান থাকা প্রয়োজন, শুধু সেগুলোই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এখানে সামরিক বা প্রতিরক্ষা বিষয়গুলো সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। মোটা দাগে ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং এটি অর্জনের জন্য যে নিরাপত্তা পরিবেশ প্রয়োজন, সেটির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশ এটি নিয়ে কাজ করছিল। গত বছর প্রায় ১৪ পৃষ্ঠার একটি আউটলুক তৈরি করা হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে আর গ্রহণ করা হয়নি। এরপর জানুয়ারি মাসে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মার্চের মধ্যে এই দৃষ্টিভঙ্গি চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই লক্ষ্য সামনে রেখে এগোচ্ছে।

কী আছে ধারণাপত্রে

জানা গেছে, আউটলুক ডকুমেন্টটি দুই পৃষ্ঠার এবং এটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে রয়েছে মুখবন্ধ (প্রিআম্বেল), দ্বিতীয় ভাগে পথপ্রদর্শক নীতি (গাইডিং প্রিন্সিপাল) এবং তৃতীয় ভাগে উদ্দেশ্য (অবজেকটিভ)।

মুখবন্ধ অংশে একটি অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনকে বাংলাদেশ সমর্থন করে, সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশ কাজ করবে এবং সমুদ্র নিরাপত্তা রক্ষায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকার কথাও বলা হয়েছে। মুখবন্ধে অন্তর্ভুক্তিমূলক বিষয়টির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং এটি যেন নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের জোট না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থেকেছে বাংলাদেশ।

গাইডিং প্রিন্সিপালে চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে—বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’, সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ, জাতিসংঘ সনদ ও ইউএন কনভেনশন অন ল অব দ্য সি (আনক্লস)-এর ওপর আস্থা এবং আঞ্চলিক অংশীদারত্ব বৃদ্ধি।

অবজেকটিভ অংশে প্রায় ১৫টি উদ্দেশ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে। এরমধ্যে কানেক্টিভিটি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আঞ্চলিক অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা বৃদ্ধি, সমুদ্র নিরাপত্তা অর্জন, শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ, সংঘবদ্ধ আন্তদেশীয় অপরাধ প্রতিরোধ, শান্তির সংস্কৃতি অর্জন, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও উদ্ভাবন, সমুদ্রসম্পদ রক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা ও দুর্যোগ প্রশমন, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, সাইবার সিকিউরিটিসহ আরও কয়েকটি বিষয়।

কী প্রয়োজনে ধারণাপত্র

ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে স্ট্র্যাটেজি প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে এবং আপাতদৃষ্টিতে এটি চীনকে মোকাবিলা করার জন্য করা হয়েছে বলে একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং সম্প্রতি কানাডা তাদের কৌশল বা স্ট্র্যাটেজি ঘোষণা করেছে। অপরদিকে এ অঞ্চলে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আসিয়ানসহ সবাই তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।

এরমধ্যে আসিয়ান স্ট্র্যাটেজির বদলে ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ একই পথে হেঁটেছে এবং কোনও ধরনের বিতর্ক যেন সৃষ্টি না হয়, এজন্য ঢাকার তৈরি ডকুমেন্টকে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে ‘বাংলাদেশের আউটলুক’ বলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণা এখন প্রতিষ্ঠিত। আমরা বিভিন্ন দেশের স্ট্র্যাটেজি এবং আউটলুক স্টাডি করেছি। এদের মধ্যে আসিয়ান যে ডকুমেন্টটি প্রকাশ করেছে—সেটির সঙ্গে বাংলাদেশের চিন্তা-ভাবনার যথেষ্ট মিল আছে।’

তিনি বলেন, ‘সমুদ্র তীরবর্তী প্রায় সব দেশই ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে কৌশল তৈরি করে ফেলেছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ যদি তার অবস্থান পরিষ্কার না করে, সেটি ভিন্ন বার্তা দিতে পারে অন্য দেশগুলোকে।

ধারাবাহিকতা

২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় পার্টনারশিপ ডায়ালগে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে প্রথম উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা হয়। তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার-সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরম্যানের (বর্তমানে একই মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি) মধ্যে ওই ডায়ালগের যৌথ বিবৃতিতে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক করিডোর উন্নয়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণ সমর্থন দেবে বলে উল্লেখ করা হয়।

এরপর ২০১৮ সালের মে মাসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লেখা এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন যে ‘মুক্ত, খোলা, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ’ ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনের সঙ্গে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ। তবে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত অবস্থান বাংলাদেশ কখনও প্রকাশ করেনি।

২০২১ সালে র‌্যাবের ওপরে নিষেধাজ্ঞার পর ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করার বিষয়টি সামনে চলে আসে। গত বছর এ বিষয়ে ১৪ পৃষ্ঠার একটি কৌশলপত্র তৈরি করা হলেও পরবর্তীকালে তা গ্রহণ করা হয়নি।

ইন্দো-প্যাসিফিক কী

ইন্দো-প্যাসিফিক বলতে সাধারণভাবে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলকে বোঝায়। ভৌগোলিকভাবে এই অঞ্চলটি কত বড়, সেটি ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে একাধিক দেশ।

সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী, প্রশান্ত মহাসাগরের মার্কিন উপকূল থেকে শুরু করে গোটা ভারত মহাসাগর এর অন্তর্ভুক্ত।

২০১৭ সালে প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ার ফরেন পলিসি হোয়াইট পেপারে বলা হয়েছে—পূর্ব ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক।

আবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী, আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল থেকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত ইন্দো-প্যাসিফিক।

সম্প্রতি কানাডার কৌশলপত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ৪০টি দেশ আছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার যে ভৌগোলিকভাবে প্রতিটি দেশ বা অঞ্চলের ইন্দো-প্যাসিফিক মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন

ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন সম্পর্কে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম তাদের পূর্ণ অবস্থান ব্যাখ্যা করে।

রাজনৈতিকভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনের মধ্যে চারটি মূল্যবোধভিত্তিক উপাদান আছে। সেগুলো হচ্ছে— প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে সম্মান, শান্তিপূর্ণ উপায়ে দ্বন্দ্ব নিরসন, স্বাধীন ও উন্মুক্ত বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা।

এই ভিশন অর্জনের জন্য আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ কিছু দেশ ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে পাঁচটি বৃহৎ উপাদান আছে। আবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কৌশলপত্রে সাতটি বৃহৎ উপাদান আছে।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা