X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকাই মসলিন বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে চায় সরকার

শফিকুল ইসলাম
১৬ মে ২০২৩, ২১:০০আপডেট : ১৬ মে ২০২৩, ২২:৫৮

ঢাকাই মসলিনের উৎপাদন ও তা বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাপনা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এটি করা গেলে এ খাতের উদ্যোক্তারা আকৃষ্ট হবেন, বিনিয়োগ বাড়বে এবং দেশ ছেড়ে বিদেশেও মসলিনের বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা জাগাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

একসময় এ দেশে তৈরি মসলিন বা ঢাকাই মসলিনের কদর ছিল সারা বিশ্বে। বিভিন্ন কারণে প্রায় ১৭০ বছর আগে এই গৌরবময় ঢাকাই মসলিন হারিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকাই মসলিন পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

এরইমধ্যে ব্যাপক অনুসন্ধান ও গবেষণার মাধ্যমে মসলিনের কাঁচামাল ফুটি কার্পাস খুঁজে বের করা, ফুটি কার্পাসের চাষাবাদ, সুতা উৎপাদন এবং কারিগরদের দক্ষতা উন্নয়ন করে উন্নতমানের মসলিন উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড মসলিন সুতা তৈরির তুলার জাত উদ্ঘাটন এবং তুলা দিয়ে ৩০০ থেকে ৭৫০ কাউন্টের সুতা তৈরিসহ মসলিন শাড়ি তৈরির প্রযুক্তি উন্মোচন করেছে। দেশের সাধারণ তাঁতিদের মধ্যে এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভায় ‘ঢাকাই মসলিন হাউস’ স্থাপন করা হয়েছে।

সরকার মনে করছে, মসলিনের উৎপাদন ব্যয় বেশি। একটি মসলিন শাড়ি তৈরিতে খরচ পড়বে সাত থেকে ৯ লাখ টাকা। এর রফতানি মূল্যও হবে কয়েক গুণ। এছাড়া আধুনিকতার স্বার্থে এর ডিজাইনেরও গুরুত্ব রয়েছে। এসব কারণেই এটি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। 

জানা গেছে, মসলিন উৎপাদনে কারিগরি, বাণিজ্যিক ও নীতি সহায়তা দিতে সরকার প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া মসলিনের প্রধান কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলা উৎপাদন করে কীভাবে কৃষকরা প্রচলিত কৃষি থেকে আরও বেশি মাত্রায় লাভবান হবেন সে ব্যাপারে কাজ হচ্ছে। সম্ভাব্য রফতানি পণ্য হিসেবে বিশ্ববাজারে এর সম্ভাবনাও খুঁজে বের করার কাজও এগিয়েছে।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী জানিয়েছেন, আমরা জানি মসলিন শাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও শ্রমসাধ্য কাজ। একটি মসলিন শাড়ি তৈরি করতে প্রথমে সুতা তৈরি করতে হয় এবং পরে বুনন কাজ চলে। একটি মাঝারি মানের মসলিন শাড়ি তৈরি করতে অনেক সময় লেগে যায়। ফলে শাড়ির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে, বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে মসলিনের স্বকীয়তা ঠিক রেখে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে এসে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের অংশীজনদের সঙ্গে প্রযুক্তি ও গবেষণালব্ধ জ্ঞান বিনিময় করতে পারি। এটা সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হলে ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিনের মূল্য কমিয়ে আধুনিক ডিজাইনের ব্যবহার উপযোগী বহুমুখী কাপড় উৎপাদন ও বাজারজাতকরণও সম্ভব হবে।

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানান, দেশের সাধারণ তাঁতিদের মাঝে এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভায় ‘ঢাকাই মসলিন হাউজ’ স্থাপন করেছি। সেখানে বিক্রির জন্য মসলিন শাড়ি রাখা আছে। কিন্তু সেখান থেকে কেউ শাড়ি কেনেন না। কেনেন বাইরের দোকান থেকে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সেখানে রক্ষিত মসলিনের ডিজাইন ও মান তাদের পছন্দ নয়। এ কারণেই এটি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।

বস্ত্র পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মসলিনের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ ও পেটেন্ট অর্জিত হওয়ায় দেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের টেকসই উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে এই প্রকল্প ‘জনপ্রশাসন পদক-২০২১’ লাভ করেছে। বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে মসলিনের স্বকীয়তা ঠিক রেখে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে অংশীজনদের সঙ্গে প্রযুক্তি ও গবেষণালব্ধ জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করা হবে। আর এটা সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হলে ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা ও কাপড় পুনরুদ্ধার এবং এ খাতে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় বস্ত্র ও পাট  মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান  লোকমান হোসেন মিয়া, বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা, মসলিন সুতা ও কাপড় পুনরুদ্ধারের গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এ কর্মশালায় বস্ত্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিনের বাণিজ্যিক উৎপাদন করে জনগণের কাছে তুলে দিতে পারলে এ গবেষণা সম্পূর্ণ সফল হবে। আমার বিশ্বাস, আমাদের সক্রিয় উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলার সোনালি ঐতিহ্য ঢাকাই মসলিন আবারও বিশ্ব আলোড়ন জাগাতে সক্ষম হবে।

আরও পড়ুন-

ঢাকাই মসলিন ফিরল যে পথে

/এফএস/
সম্পর্কিত
মিয়ানমারে আরেকটি সীমান্ত শহর দখল করলো বিদ্রোহীরা
খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
সরকার নির্ধারিত দামে গরুর মাংস বিক্রি করবেন না নওগাঁর ব্যবসায়ীরা
সর্বশেষ খবর
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ