নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপের চেয়ে নির্বাচনি প্রস্তুতি সভায় রাজনৈতিক দলগুলোর সাড়া মিলছে কম। ২০২২ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত ইসির রাজনৈতিক সংলাপে ৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ৩০টি অংশ নিয়েছিল। অপরদিকে শনিবার (৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ইসির প্রস্তুতি সভার ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে অংশ নিয়েছে ২৬টি দল। ১৮টি রাজনৈতিক দল এ সংলাপ বর্জন করেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ সার্বিক বিষয়ে শনিবার নিবন্ধিত ২৬টি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে নির্বাচন কমিশন। এদিন সকাল-বিকাল দুই দফায় ২২টি করে ৪৪টি দলকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে দুই দফায় ১৩টি করে মোট ২৬টি দল অংশ নিয়েছে। বাকি ১৮টি দল এতে অংশগ্রহণ করেনি।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন নির্বাচনি রোডম্যাপ তৈরির আগে গত বছর জুলাইয়ের দ্বিতীয়ার্ধ্বে দেশের ৩৯টি নিবন্ধিত দলের সবগুলোকেই সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। ওই সময় ২৮টি দল সংলাপে অংশ নেয়। বিএনপিসহ সমমনা ৯টি দল সংলাপ বর্জন কর। জাতীয় পার্টি (জেপি) ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে তাদের সংলাপের সময় পুনর্নির্ধারণ করে। পরে ওই বছর সেপ্টেম্বরে এই দল দুটির সঙ্গে ইসির সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ ৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ৩০টির সঙ্গে ইসির রাজনৈতিক সংলাপ হয়।
এর আগে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিষয়ে ধারণা স্পষ্ট করতে নিবন্ধিত দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। ইভিএম নিয়ে ইসির ওই মতবিনিময়ে ২৮টি দল অংশ নেয়। ১১টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি।
শনিবারের সংলাপে যেসব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি, সেগুলো হলো— লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, খেলাফত মজলিশ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ জাসদ।
তবে মধ্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, খেলাফত মজলিশ ও জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ গত বছর ইসির ডাকা রাজনৈতিক সংলাপে অংশ নিয়েছিল। এর বাইরে এবার গণতন্ত্রী পার্টিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানা গেছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সময় নিবন্ধিত পাওয়া পাঁচটি দলের মধ্যে একটি শনিবারের আলোচনা সভায় অংশ নেয়নি। উল্লেখ্য, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সময়ে ইসির সিদ্ধান্তে দুইটি এবং আদালতের আদেশে তিনটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেয়েছে। আদালতের আদেশে নিবন্ধন পাওয়া দলগুলো হলো— তৃণমূল বিএনপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাসদ। অপরদিকে ইসির যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। শনিবারের আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ ছাড়াও এই পাঁচটি দল সম্প্রতি ভিন্ন ভিন্নভাবে ইসির সঙ্গে সংলাপ করেছে।
যা বললেন সিইসি
সংলাপে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে মতবিনিময় করতে চাই। তাই যারা সংলাপে অংশ নেয়নি, তারা ইচ্ছা পোষণ করলে তাদের কথাও শোনার চেষ্টা করবো।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা কম সময় নিয়ে দাওয়াত দিয়েছি। দ্রুততার কারণে হয়তো কোনও দল অংশগ্রহণ নাও করতে পারে। তারা যদি ইচ্ছা পোষণ করে, কমিশনে আলাপ করে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করবো। কারণ, আমাদের ইচ্ছা, আমরা সবার সঙ্গে মতবিনিময় করতে চাই।’
গত বছর সংলাপ বর্জন করেছিল যে ৯ দল
গত বছরের জুলাইয়ে যে ৯টি রাজনৈতিক দল ইসির সংলাপ বর্জন করেছিল, সেগুলো হলো— বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।