X
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
৬ বৈশাখ ১৪৩২

পণ্যে বৈচিত্র্য এনে রফতানি আয় বাড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
১৪ জুলাই ২০২৪, ১৭:৩৬আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪, ২০:৪৬

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পণ্যে বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন বাজার লক্ষ্য করে রফতানি বৃদ্ধি করে আয় বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অল্প কিছু রফতানি পণ্যের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। আমাদের রফতানি বাড়াতে হবে। তাই আমাদের রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে।’

রবিবার (১৪ জুলাই) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৩২টি ক্যাটাগরিতে ৭৭ রফতানিকারকের মাঝে জাতীয় রফতানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আসলে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইউরোপীয় দেশগুলো কিংবা আমেরিকাই বলেন, তাদের মূল্যস্ফীতি বেশি এবং অর্থনীতি কিন্তু খুব চাপের মুখে। সেক্ষেত্রে আমাদের কিন্তু নতুন সুযোগ আছে। মিডলইস্ট, গালফ কান্ট্রি, আফ্রিকা, সাউথ এশিয়া, সাউথ ইস্ট এশিয়া, ইস্ট এশিয়ান কান্ট্রিগুলো, ইস্ট ইউরোপীয় কান্ট্রিগুলো, তাদের সঙ্গে যত বেশি আমরা যোগাযোগ রাখতে পারবো, আমাদের রফতানি বহুমুখী করতে পারবো। এই সুযোগটা আমাদের নিতে হবে। এ জন্য আমরা ইতোমধ্যে কাজ করছি। মাঝে মাঝে প্রতিনিধিও পাঠাচ্ছি এসব জায়গায়।’

তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদেরও বলবো, এসব দেশের দিকে আপনারা আরও বেশি করে নজর দেন। কারণ, যেসব দেশের সঙ্গে এতদিন আমরা রফতানি বাণিজ্য করতাম, তাদের ক্রয় ক্ষমতাও কমে গেছে, দারিদ্র্যের হার বেড়ে গেছে, সেখানকার অবস্থা হয়তো ওপর দিয়ে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু সেসব দেশে যারা থাকে তারা জানেন। সেজন্যই আমাদের নতুন নতুন জায়গা এবং নতুন নতুন পণ্য খুঁজতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক (আরএমজি) পণ্যের ওপরই নির্ভরশীল থাকবো কেন? ট্রেন্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আমাদের পোশাকের ডিজাইনগুলো পরিবর্তন করতে হবে। সরকার এ জন্য বেসরকারি খাতের সহায়তায় ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় করেছে। কেননা, এ ক্ষেত্রে গবেষণারও প্রয়োজন রয়েছে।’

বর্তমান যুগ ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির যুগ এবং সেভাবেই বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে তার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোন দেশের বাজারে আমরা ঢুকতে পারবো, সেটা সরকারের পক্ষ থেকেও আমরা করবো। কিন্তু ব্যবসায়ীদেরও নিজেদের পার্টনার খুঁজে নিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেদের উৎপাদন যেমন বাড়াবো, রফতানিও বাড়াবো। আবার দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবেও আমরা এগিয়ে যাবো।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ– ঘরে ঘরে ইন্টারনেট, ছেলেমেয়েদের জন্য কম্পিউটার ট্রেনিং ও কম্পিউটার ইনকিউবেশন সেন্টার করে দিয়ে কারিগরি শিক্ষা ও ভোকেশনাল ট্রেনিংকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যখন আসবে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের জনশক্তি তৈরি করা– এটাও প্রয়োজন।’ সেভাবে উপযুক্ত জনশক্তি তৈরিতে তার সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘স্টার্টআপ প্রোগ্রাম নিয়ে এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের যুব সমাজ যাতে এগিয়ে আসে, এ জন্য কোম্পানি আইন সংশোধন করে সরকার ওয়ান ম্যান কোম্পানি করার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশনে নারীদের জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকার ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে, সেখানে নারীরা চাইলে আলাদাভাবে প্লট নিয়ে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। কারণ, আমি চাই আমাদের সমাজে মেয়েরাও এগিয়ে আসুক এবং তারাও এই ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত হোক।’

‘আজ জাতীয় রফতানি ট্রফি বিতরণকালে অনেক যুব উদ্যোক্তা দেখতে পেয়ে আমি আনন্দিত। অনেকেই বাবার ব্যবসা ধরে রেখে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং ট্রফি হাতে তুলে নিয়েছেন। এতেই আমার মনে একটি আশার আলো দেখতে পাই– বাংলাদেশটা এগিয়ে যাবে এবং এই যুবসমাজই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতা কখনও ব্যর্থ হতে পারে না। এর সুফল আমরা প্রত্যেক মানুষের ঘরে পৌঁছে দেবো, সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘আজকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি এবং রিনিউয়েবল এনার্জির ওপরও জোর দিচ্ছি। সোলার প্যানেল, বায়ুচালিত বিদ্যুৎ এবং নতুন আর একটি বিষয় হাইড্রোজেন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সেটার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা এখনও গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। সেটা যখন আসবে আমরা বাস্তবায়ন করবো। এভাবেই আমরা বিদ্যুতে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করছি।’

দারিদ্র্যের হার হ্রাস এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর কোনও হতদরিদ্র থাকবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি এখন বিশ্বের ৩৩তম অর্থনীতিতে উন্নীত হয়েছে। আগামীতে আরও সামনের দিকে নিয়ে যাবো।’ তার সরকার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা একইসঙ্গে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি জানান, ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গৃহীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করে দেশের অর্থনীতিকে তার সরকার যথেষ্ট শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে। টানা সরকার পরিচালনায় পরিকল্পিতভাবে তার সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণেই এটা সম্ভব হয়েছে।

‘২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। সে জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরকার আলাপ-আলোচনা ও চুক্তি করছে’, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘শুধু সীমিত কয়েকটি পণ্যের ওপর আর আমরা নির্ভরশীল থাকতে চাই না। আজ আমাদের বহু পণ্যের বিদেশে অনেক চাহিদা রয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলোতে যেমন আমাদের ওষুধের দাম অনেক বেশি, তারা একটু রঙচঙা জিনিস পছন্দ করে, কাজেই আমাদের সিরামিক যত রঙচঙা হবে তাদের কাছে তত আকর্ষণীয় হবে। পাশাপাশি, আমাদের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হস্তশিল্প এবং পাট ও পাটজাত পণ্য রয়েছে। আর জুট জিনোম যেহেতু আমরা আবিষ্কার করেছি, তাই এর বহুমুখীকরণ করে পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে এটি বাজারজাত করা সব থেকে সহজ ।’

তিনি বলেন, ‘কৃষি গবেষণায় একটা বিপ্লব ঘটে গেছে বাংলাদেশে। কাজেই বহুমুখী পণ্য উৎপাদন হচ্ছে, সেগুলো কীভাবে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রফতানি করা যায় সে ব্যবস্থাটা নেওয়া। তাছাড়া, এখন ম্যান মেইড ফাইবারের চাহিদা বেড়ে গেছে। কাজেই এই ম্যান মেইড ফাইবার তৈরি করে আমরা বিদেশে রফতানি করতে পারি। সব থেকে বড় কথা ডিজিটাল ডিভাইস এবং আইসিটি সেক্টর, যার চাহিদা এখন সব থেকে বেশি। কাজেই আমরা যাতে ডিজিটাল ডিভাইসগুলো তৈরি করতে পারি, যে জন্য আমরা সারা দেশে আইসিটি পার্ক নির্মাণ করে দিয়েছি, সেখানে যত বেশি বিনিয়োগ হবে তত বেশি উৎপাদন বাড়বে এবং আমরা বিদেশেও রফতানি করতে পারবো। তাছাড়া নিজেদেরও চাহিদা বেড়ে গেছে। আমাদের ছেলেমেয়েদের হাতেই ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ট্যাব সবকিছু আছে, তারা ব্যবহার করতে পারছে। কাজেই সেদিকে আমাদের বেশি করে নজর দেওয়া উচিত।’

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ এই অর্থনীতিকে এত বাধাবিঘ্নের পরও যে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি, এখানে আপনাদের একটা বিরাট সহযোগিতা দরকার। কাজেই আপনাদের যেটা চাহিদা, সেটা আমরা পূরণ করবো। কিন্তু আপনাদেরও দায়িত্ব আছে দেশের প্রতি, যেটা মাথায় রাখতে হবে।’

সূত্র: বাসস

/আরকে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ভারত এক ফ্যাসিস্টকে জায়গা দিয়ে নিজেকেও ফ্যাসিস্ট প্রমাণ করেছে: দুদু
রফতানিতে বিকল্প বাজার খোঁজার আহ্বান রেহমান সোবহানের
শেখ হাসিনার বিচার প্রশ্নে আসিফ নজরুল‘জামায়াত নেতাদের প্রশ্নবিদ্ধ বিচারে সময় লেগেছিল আড়াই বছর’
সর্বশেষ খবর
দিনাজপুরে ভবেশের মৃত্যুর ঘটনায় ভারতের দেওয়া বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করলো বাংলাদেশ
দিনাজপুরে ভবেশের মৃত্যুর ঘটনায় ভারতের দেওয়া বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করলো বাংলাদেশ
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন উৎসর্গ করা ৭ নারী কারা
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন উৎসর্গ করা ৭ নারী কারা
আবেশ খানের বোলিংয়ে শেষ ওভারে হারলো রাজস্থান
আবেশ খানের বোলিংয়ে শেষ ওভারে হারলো রাজস্থান
ক্ষুব্ধ সমুদ্রকে শান্ত করতে ইন্দোনেশীয় নারীর বৃক্ষরোপণ
ক্ষুব্ধ সমুদ্রকে শান্ত করতে ইন্দোনেশীয় নারীর বৃক্ষরোপণ
সর্বাধিক পঠিত
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: নিন্দা জানালো ভারত
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: নিন্দা জানালো ভারত
রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ৩ ভুল
রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ৩ ভুল