চলমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করবেন নতুন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। আগামী সোমবার (১২ আগস্ট) বিদেশি কূটনীতিকদের ওই ব্রিফিং করা হবে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গেও ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড নিয়ে রবিবার (১১ আগস্ট) আলাপ করবেন উপদেষ্টা।
এর আগে ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত সরকারের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মো. তৌহিদ হোসেন। আবারও একটি সংকটময় সময়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।
শপথ গ্রহণ করার পর শনিবার (১০ আগস্ট) তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলাপ করেন।
বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিং করার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
অস্বস্তিকর পরিবেশ
অনিশ্চিত ও ঘোলাটে পরিবেশের কারণে স্বাভাবিকভাবে একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সারা দেশে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এর ব্যতিক্রম নয়। নতুন সরকারের স্থায়িত্ব, তাদের সংস্কার কর্মকাণ্ড নিয়ে পরিকল্পনা, মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে ছাত্রদের অংশগ্রহণ কীভাবে হবে, রাজনৈতিক শক্তির অবস্থান, আমলাতন্ত্রের মনোভাবসহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এখনও পরিষ্কার নয়। স্বাভাবিকভাবে নীতিনির্ধারণী কার্যক্রম কী হবে, সেটি নিয়ে দোদুল্যমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো নয়। অভ্যন্তরীণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত দেশের অভ্যন্তরের জন্য। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিদেশিদের জন্য এবং সেখানে ভুল বার্তা যাওয়ার সুযোগ নেই। অতীতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভুল বার্তার জন্য খেসারত দিতে হয়েছে দেশকে।’
আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের জন্য এখন অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সামনে আরও আসবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক জায়গায় পদায়ন করা এবং কাজ করার সুযোগ দেওয়া। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সব সময় আসবে, কিন্তু শুধু দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তির পক্ষেই সেটি সামাল দেওয়া সম্ভব।’
উপদেষ্টা পরিষদের গঠন
উপদেষ্টা পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এখানে সাবেক আমলা, কূটনীতিক এবং সামরিক বাহিনীর সদস্য, এনজিও, ছাত্র ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। একেক জনের চাওয়া-পাওয়া বিভিন্ন ধরনের।
এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা যে মহলকে প্রতিনিধিত্ব করেন, তাদের চাওয়া-পাওয়া বিভিন্ন ধরনের। তাদের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে কিছু বিষয় রাষ্ট্রের মৌলিক নীতির সঙ্গে জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেকে নারীদের উত্তরাধিকার সম্পত্তিসহ সব বিষয়ে সম-অধিকার বা ইউনিফর্ম ম্যারেজ কোড দেখতে চায়। আবার অনেকে সেটির বিরোধিতা করে। আবার অনেকে নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীকে “আদিবাসী” হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়। কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এগুলো সমর্থন করে না। এখন দেখার বিষয়, এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ কী সিদ্ধান্ত নেয়।’