বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বড় ধরনের ‘ইলেকশন অবজারভেশন মিশন’ পাঠাবে কিনা, সেটি যাচাই-বাছাই করতে ছোট একটি প্রাক নির্বাচনি অনুসন্ধানী দল বাংলাদেশে পাঠাতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানিয়ে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি। নির্বাচন কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে তাদের বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেবে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রাক নির্বাচনি অনুসন্ধানী দল পাঠানোর জন্য ইইউ ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করবো।’
প্রাক নির্বাচনি অনুসন্ধানী দলের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ইইউ সিদ্ধান্ত নেবে—তারা বড় আকারে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল পাঠাবে কিনা, জানান এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি অনুসন্ধানী দল পূর্ণাঙ্গ ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ সফর করেছিল। রিকার্ডো চেলেরির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের ওই দলটিকে সম্ভাব্য পর্যবেক্ষণের লজিস্টিক, নিরাপত্তা এবং বাজেট সংক্রান্ত বিষয়গুলো মূল্যায়নের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তারা বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সরকারি কর্মকর্তা এবং সংখ্যালঘু সংগঠনসহ বিভিন্ন অংশীদারের সঙ্গেও বৈঠক করেছিল।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল
ইইউ’র অনুসন্ধানী দলের লক্ষ্য হবে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের জন্য ‘একটি পূর্ণাঙ্গ ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল (ইওএম)’ মোতায়েন করা উচিত হবে কিনা, সেটি নির্ধারণ করা। সাধারণভাবে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচনি প্রক্রিয়া মূল্যায়ন করার জন্য ইওএম মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইইউ মিশন পাঠিয়ে থাকে। বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে তাদের আগ্রহ আছে এবং এ কারণে নির্বাচন পরিস্থিতি ও পরিবেশ কেমন—সেটি বিবেচনার জন্য প্রাক অনুসন্ধান দল পাঠাতে চায়।
অনুসন্ধানী মিশনের বিবেচ্য বিষয়
প্রাক অনুসন্ধানী মিশন যে বিষয়গুলো মূল্যায়ন করে থাকে, সেগুলো হচ্ছে—
পরিধি: নির্বাচনের সামগ্রিক স্কেল এবং পর্যবেক্ষণের সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো।
পরিকল্পনা: নির্বাচনের জন্য লজিস্টিক এবং অপারেশনাল পরিকল্পনা।
বাজেট: সম্ভাব্য ইওএম’র জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থান।
লজিস্টিক: পর্যবেক্ষকদের মোতায়েনের এবং সহায়তা করার জন্য ব্যবহারিক ব্যবস্থা।
নিরাপত্তা: মাঠে পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা।
অংশীদারদের সম্পৃক্ততা: বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার জন্য বৈঠক।
সরকারি সম্পৃক্ততা: নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক।
নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা: সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাদের উদ্বেগ বোঝার জন্য বৈঠক।
উল্লেখ্য, ২০০০ সাল থেকে ইইউ ৬৫টিরও বেশি দেশে ১৮০টিরও বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল মোতায়েন করেছে। যা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থনে ইইউ’র মৌলিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।