X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
রবিবার চূড়ান্ত প্রতিবেদন যাচ্ছে মন্ত্রণালয়ে

আল্টিমেটাম শেষ, অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়নি বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

রশিদ আল রুহানী
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৯:০১আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৯:০৩

অভিভাবকদের বিক্ষোভ অতিরিক্ত টিউশন ফি নেওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে টাকা ফেরত দিতে শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া আল্টিমেটাম শেষ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার।রাজধানীসহ সারাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই আদায়কৃত অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেয়নি। টাকা ফেরত না দেওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোর একটি তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রবিবার জামা দেবে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,তালিকা ধরে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত না দেওয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়,রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়তি অর্থ শিক্ষার্থীদের বেতনের সঙ্গে সম্বন্বয় করার সিদ্ধান্ত নিলেও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জুনিয়র ল্যাবরেটরি হাইস্কুল,ধনিয়া একে হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ সারাদেশের অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ আমলে নিচ্ছে না।
জানা গেছে, প্রথম শ্রেণিতে নেওয়া অতিরিক্ত টিউশন ফি ফেব্রুয়ারি মাসে সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজধানীর ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গত বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরকে পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে প্রথম শ্রেণিতে জানুয়ারি মাসের নেওয়া অর্থ ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।
কিন্তু অন্য শ্রেণিতে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থের বিষয়ে ওই চিঠিতে কোনও বক্তব্য উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে, দেশের বিভিন্ন স্কুলে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার প্রতিবাদে অভিভাবকরা আন্দোলনে রাস্তায় নামে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একটি গোয়েন্দা সংস্থা সারাদেশের অতিরিক্ত অর্থ আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। সেই তালিকার ভিত্তিতে দেশের ৮টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৩ হাজার ১৪০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সেন্ট জোসেফ স্কুল, মোহম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ রাজধানীর বেশ কিছু নামি দামি স্কুল রয়েছে।

পরে গত ২ ফেরুয়ারি শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে বোর্ডগুলোতে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ৩ ফেরুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। অন্যথায় আদালতের নির্দেশ মোতাবেক কমিটি ও পাঠ্যদান অনুমোদন বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নেওয়ার ঘোষণা করেন।

এদিকে রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ‘অতিরিক্ত মাসিক বেতন ফেব্রুয়ারি মাসের সাথে সমন্বয় করলেও অতিরিক্ত সেশন ফি বাবদ টাকা ফেরত দেয়নি।’

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘গত দুই দিন আগে থেকেই অর্থ ফেরত দেওয়া শুরু করেছি। তবে আমাদের আইটির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ হয়,সে কারণে ব্যবস্থা নিতে একটু সময় লাগছে।’

এদিকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা দাবি করেন, ‘অষ্টম পে-স্কেলে বেতন দ্বিগুণ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ও দ্বিগুণ হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলেও বেশিরভাগ শিক্ষকের বেতন প্রতিষ্ঠান থেকে দিতে হয়। এই বাড়তি খরচ মেটাতে আদায় করা অর্থেল পরিমাণ তেমন বেশি নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি মেনে নেবে বলেও তারা আশাবাদী। যে কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান অর্থ ফেরত দিচ্ছে না।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শুরু থেকে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার পক্ষে এমন যুক্তি দাঁড় করানোর পর গত ৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে ৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষবিদদের সাথে এক বৈঠকে আবরও এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অতিরিক্ত ফি নেওয়ার সঠিক যুক্তি জানালে তা বৈঠক করে পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত অর্থ ফেরত দিতে হবে ।

অন্যদিকে, এসএসসিতে বাড়তি অর্থ ফেরতের দেওয়ার নির্দেশনা এক বছর পরে এসেছে। ফলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের থেকে নেওয়া ফি ফেরত দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ, ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়েছে। ফলে তা যাচাই করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার বলে অভিযোগ একাধিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের। তারা বলেন, বেশ কয়েকটি স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা বলছে, তারা বাড়তি অর্থ নেয়নি। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তালিকা নিয়েও বির্তক রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী খুঁজতে গিয়ে অনেক অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। যাদের খোঁজ পেয়েছি তাদের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বাড়তি ফি আদায় করেনি’। 

তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও মোটামুটি একটি তালিকা হাতে পেয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আগামী রবিবার প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হবে’।

/আরএআর//এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী