রাজধানীর শাহ আলীতে পুলিশের উপস্থিতিতে সোর্সের দেওয়া আগুনে পুড়ে নিহত চা-দোকানি বাবুল মাতব্বরের স্ত্রী সন্তান প্রসবের দু’মাস পর সোমবার রাতে মারা গেছেন। বাবা-মা হারিয়ে বাবুলের ছয় সন্তান এখন দিশেহারা। সর্বশেষ পৃথিবীতে আসা বাবুলের ছোট সন্তানের বয়স মাত্র দুই মাস দুই দিন। এদিকে গত চার মাসেও এই মামলার তদন্তে কোনও অগ্রগতি নেই।
বাবুলের মেয়ে রোকসানা আক্তার মিমি মঙ্গলবার বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সোমবার রাত ১১ টার দিকে বাবুলের স্ত্রী লাকী বেগম (৩৭) শাহ আলীর ভাড়া বাসায় মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনিরোগসহ জটিল রোগে ভুগছিলেন। গত এপ্রিলে তিনি কন্যা সন্তানের মা হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বাবাকে পুলিশের উপস্থিতিতেই হত্যা করা হয়েছে। অথচ তার বিচার পেলাম না। এরমধ্যে মাও চলে গেছেন।বাবা-মা ছাড়া আমরা এখন অসহায়।মায়ের দাফনের জন্য টাকা তুলতে হয়েছে। এতগুলো ভাইবোন নিয়ে আমি এখন কী করব? তাদের কীভাবে বাঁচাব?
বাবুল মাতব্বরের ছয় সন্তান। তাদের মধ্যে দুজন ছেলে চারজন মেয়ে। বড় ছেলের নাম রাজু আহমেদ ও ছোট ছেলে জুনায়েদ। বড় মেয়ে রোকসানা আক্তার মিমি,তারপর মনি, লাবনী এবং দুই মাস বয়সী অবনী।
রাজু তার স্ত্রী নিয়ে আলাদা থাকেন। রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
রোকসানা বিবাহিত হলেও ছোটছোট ভাইবোন ছেড়ে তিনি স্বামীর সংসারে যেতে পারছেন না। তার ওপরে এখন সবার দায়িত্ব পড়েছে। অথচ রোকসানার স্বামী একজন ভ্যান চালক।সামান্য আয় দিয়ে এত বড় সংসার চালানো তার জন্য দায় হয়েছে।
রোকসানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাত্র দু’মাস হলো আমার ছোটবোনের বয়স। ওর নাম অবনী। ওকে কিভাবে আমি বাঁচাব। বুঝতে পারছি না। আমাদের খবর কেউ নিলো না। মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মূল আসামি দেলোয়ারকে এখনও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। তাছাড়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত তিন পুলিশ সদস্যকেও গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দিতে চাইলেও ওই সময় পুলিশ আমাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে মামলা করা থেকে বিরত রাখে। এখন আমাদের শাহ আলী এলাকা থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলছেন প্রভাবশালীরা। বর্তমানে ওই চায়ের দোকানটিও আর চলছে না বলেও জানান রোকসানা।
বাবা হত্যার বিচার আদৌ হবে কিনা—এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বাবুল মাতব্বরের মেয়ে বলেন, বাবা-মা সবাইকে হারিয়েছি। আমি শুধু এখন এই হত্যার বিচার চাই। আর কিছু চাই না।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মীর রেজাউল ইসলাম বলেন, আমরা মূল অভিযুক্ত দেলোয়ারকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে তিনি ভারতের ফোন নম্বর ব্যবহার করে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ধারণা করছি, তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন। রেজাউল ইসলাম জানান, মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই ঘটনাটি ঘটেছে। মাদক ব্যবসায়ী পারুল ও সোর্স রবিন ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল।
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুরের শাহআলীর গুদারাঘাট এলাকায় পুলিশের উপস্থিতিতে সোর্স দেলোয়ার ও আইয়ুব বাবুলের কাছে চাঁদা দাবি করেন। এ সময় তারা চাঁদা না দিলে বাবুলকে থানায় ধরে নেওয়ার হুমকি দেন এবং তার চায়ের দোকানে ভাঙচুর শুরু করেন। ভাঙচুরের সময় জ্বলন্ত কেরোসিনের স্টোভ গিয়ে পড়ে বাবুলের শরীরে। এ সময় পুলিশ সদস্য এসআই মমিনুর রহমান খান, এএসআই দেবেন্দ্রনাথ সরকার ও কনস্টেবল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন ঘটনাস্থলেই ছিলেন। তবে তারা বাবুলকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের বিভাগীয় তদন্তেও বিষয়টি উঠে এসেছে।
এপিএইচ/
যশোরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যুবক নিহত
ঈশ্বরদীতে পুলিশ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত