X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

নানা কৌশলে নির্বাচনি প্রচারে প্রার্থীরা

শাহেদ শফিক ও সাদ্দিফ অভি
২২ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:৫৪আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:১৮

আতিকুল ইসলাম, তাবিথ আউয়াল, ব্যারিস্টার তাপস, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা বেশ জমে উঠেছে। প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর নগরী। চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে টেলিভিশনের টকশো, সবখানেই নির্বাচনের কথা। ভোটারদের কাছে টানতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন প্রার্থীরা। ডিজিটাল প্রচারণা, বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনি গান, গণসংযোগ, পরিচিত তারকাদের নিজেদের পক্ষে প্রচারে নামানো, প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিসহ সব চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ফেসবুকে পেজ খোলাসহ প্রার্থীদের লাইভ করার মাধ্যমে এবারের প্রচারে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে।

এবার উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরসহ মোট ৭৫৮ প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে মূল দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের পদচারণাই বেশি চোখে পড়ছে। পাশাপাশি রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীও। আবার দলীয় সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন অনেকেই। ৯ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটারদের দৃষ্টি কাড়তে একেক প্রার্থী একেক ধরনের কৌশল অবলম্বন করছেন। নির্বাচনি মাঠে প্রার্থীদের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে সেলিব্রেটিদেরও দেখা যাচ্ছে। নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে উন্নত ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নেওয়ার চেষ্টা চলছে। 

প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকেই প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম। প্রথমদিন শুক্রবার হওয়ায় জুমার নামাজ আদায় করেছেন উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর মসজিদে। সেখান থেকে নামাজ শেষে বের হয়েই জনসংযোগ শুরু করেন তিনি। মসজিদ থেকে বের হওয়া মুসল্লিদের হাতে লিফলেট দিয়ে কোলাকুলি করে নৌকার পক্ষে ভোট চান আতিক। এরপর তিনি এলাকায় মিছিল এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গত সাতদিন তার প্রচার লক্ষ করলে দেখা যায়, বেশিরভাগ সময়ই তিনি আলোচনায় থাকার মতো কাজ করে প্রচার চালাচ্ছেন।

প্রতিদিনই ভিন্ন কৌশলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন আতিকুল ইসলাম। চতুর্থদিনে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে প্রচার শুরু করে বাড্ডা এলাকায় যান। মধ্যবাড্ডার একটি স্কুলে গণসংযোগ করেন। সেখানে শাওন নামের একজন বাকপ্রতিবন্ধী এসেছিলেন আতিকুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে। ভিড় ঠেলে তিনি কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পারছিলেন না শাওন। প্রচারে ব্যস্ত আতিকুল ইসলাম একপর্যায়ে খেয়াল করেন ঘটনাটা। স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে জানতে পারেন, ওই তরুণ নৌকার একজন একনিষ্ঠ কর্মী। সঙ্গে সঙ্গে আতিকুল কাছে ডেকে নেন শাওনকে, বুকে জড়িয়ে ধরেন। প্রতিশ্রুতি দেন প্রতিবন্ধীবান্ধব নগরী গড়ার।

প্রচারের একপর্যায়ে আফতাবনগর এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গণসংযোগ শেষে কর্মীদের নিয়ে একটি চায়ের দোকানে ঢুকে পড়েন। সেখান দোকানির আসনে বসে কর্মীদের জন্য চা বানান এবং পরিবেশন করেন। এই ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এদিন তরুণদের সঙ্গে জনসংযোগের সময়ে গান গেয়েও ভোট চান এই মেয়র প্রার্থী। পরের দিন প্রচারে নেমে শিশুদের সান্নিধ্যে যান আতিক। তাদের সঙ্গে সেলফি তোলেন। আবার একপর্যায়ে ক্রিকেটও খেলেন তিনি। এছাড়া প্রচারের সময় ভোটারদের বুকে জড়িয়ে ধরা এবং যে এলাকার মুখ্য সমস্যা যেটি, সেটির কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আতিকের প্রতিটি প্রচারকর্ম তার ফেসবুক পেজে সরাসরি প্রচার করা হয়। নির্বাচনি প্রচারে তারকাদেরও মাঠে নামিয়েছেন তিনি।

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গানের মাধ্যমে তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছি। কারণ ভোটারদের বিশাল অংশ এখনও তরুণ।আমাদের নির্বাচনি গানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে−‌‘জয়বাংলা, জিতবে এবার নৌকা। এই গানের সঙ্গে যে ভাব রয়েছে, তাতে নেতাকর্মীরা খুবই উজ্জীবিত হয়ে পড়েন। এছাড়া তরুণ, নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে মিশে তাদের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করেছি।’

বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল প্রচার শুরু করেছেন প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকেই। এদিন উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে জুমার নামাজ আদায় শেষে মিছিল নিয়ে প্রচারে বের হন। এসময় তিনি ভোটারদের সঙ্গে কোলাকুলি করেন এবং এলাকার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। প্রথম দিন প্রতীকী ধানের শীষ হাতে নিয়েই প্রচার শুরু করেন তাবিথ। তার সঙ্গে তখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন। মোটামুটি একই রকম কায়দায় প্রতিদিন প্রচার চালাচ্ছেন তাবিথ। তিনি বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, ভোট চাচ্ছেন এবং তার সংক্ষিপ্ত পরিচিতির লিফলেট বিলি করছেন।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার জন্য কিছু ভিডিও তৈরি করেছেন বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী। নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলোর কিছু অংশ ভিডিওগুলোতে নিজেই উপস্থাপন করছেন তাবিথ। এছাড়া তার অবদান এবং ঢাকা শহরের জন্য করণীয় সম্পর্কও উল্লেখ করছেন সেখানে। প্রতিটি প্রচারকর্ম ফেসবুক পেজে সরাসরি প্রচার করেন তাবিথ।

ভিডিও নিয়ে প্রচারের বিষয়ে তাবিথ আউয়াল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‌পুরো পৃথিবী এখন ইন্টারনেটনির্ভর। ডিজিটাল যুগে মানুষ অ্যাপস ব্যবহার করে, সফটওয়্যার ব্যবহার করে। ঢাকার ভোটারদের বেশিরভাগেরই বয়স ৩৫-এর নিচে। তাদের শতভাগই কিন্তু অনলাইননির্ভর। তাদের কাছে বার্তা পৌঁছানোর জন্য আমি সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং অন্য ইন্টারনেটনির্ভর ডিভাইস ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি “ই- প্রচার” যত বেশি করা যাবে, ততই সাধারণ মানুষ বুঝবে যে আমি শতভাগ প্রস্তুত এই নির্বাচনে লড়াই করার জন্য। পরে যখন অভিযোগ করবো ভোটচুরি কিংবা নির্বাচন নিয়ে, কেউ যেন মনে না করে এটা একটি অজুহাত।’

প্রথম দিন থেকেই ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্বাচনি প্রচার ছিল বেশ জমজমাট। দলীয় নেতাকর্মী ও ব্যক্তিগত দেহরক্ষীদের নিয়ে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন তিনি। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। এলাকার বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও নাগরিক সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ২৪ ঘণ্টা নগর ভবন খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে তার।

তাপসের প্রচারে যে বিষয়টি বেশি দেখা যাচ্ছে তা হলো বিভিন্ন ধরনের গান। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে তিনি এলাকাভিত্তিক ভোট চাইছেন। ব্যক্তিগত রক্ষীদের কারণে ভোটাররা তার কাছে আসতে পারছেন না এমন অভিযোগের পর তিনি দেহরক্ষীদের সরিয়ে দিয়ে ভোটারদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করেন। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে এখনও মাঠে নামাতে পারেননি তাপস। কেউ কেউ এটাকে তার নির্বাচনি কৌশল বলে মনে করছেন। অপরদিকে নিজ এলাকা ধনমন্ডিতেও এবার তিনি প্রচার করছেন না।  

প্রচারের প্রথম দিন থেকেই মাঠে নেমেছেন বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। অপেক্ষাকৃত তরুণ এই মেয়র প্রার্থীর বাবা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। বাবার আদর্শ ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি দক্ষিণ ঢাকাকে সাজাতে চান, এজন্য নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি।

তবে প্রচারে তার দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও সমর্থকরা একাধিকবার প্রতিপক্ষের হামলা শিকার হয়েছেন। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে গিয়ে কর্মীদের পশে দাঁড়িয়েছেন। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্গনের বিভিন্ন অভিযোগ রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়েও প্রতিকার চেয়েছেন। যেখানেই যাচ্ছেন, বৃদ্ধদের পায়ে সালাম করে দোয়া ও ভোট চাইছেন।

ইশরাক বলেন, ‌‘নির্বাচনই হচ্ছে একটি কৌশল। বাবা কীভাবে নির্বাচন ও রাজনীতি করেছেন সেটা আমি কাছ থেকেই দেখেছি। ভোটারদের কাছে টানার জন্য সেসব অভিজ্ঞতা এখন কাজে লাগাচ্ছি। আর আমার দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে রেখে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। আমাদের কর্মীরাও সেসব কৌশল অবলম্বন করে কাজ করছেন। আশা করি এবার সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবো।’

বিএনপির প্রার্থীরা মনে করছেন, তাদের নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন আরও ত্বরান্বিত হবে।

/এএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
খিলগাঁওয়ে ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
সর্বশেষ খবর
দিয়াবাতেকে ছাড়া মোহামেডানের হোঁচট, ৫ গোলের ম্যাচে ব্রাদার্সের চমক
দিয়াবাতেকে ছাড়া মোহামেডানের হোঁচট, ৫ গোলের ম্যাচে ব্রাদার্সের চমক
সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন, ব্যতিক্রম থাকতেই পারে
মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানসাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন, ব্যতিক্রম থাকতেই পারে
জন্ম আর মৃত্যুর সুরেলা মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি
৩৫তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবজন্ম আর মৃত্যুর সুরেলা মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি
দারুণ সেঞ্চুরিতেও রাব্বির কাছে ম্লান সাকিব
দারুণ সেঞ্চুরিতেও রাব্বির কাছে ম্লান সাকিব
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ