রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) অফিসে স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক নারী। এ ঘটনায় গত ১৬ জুলাই কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দুজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী। আসামিরা হলেন, এ মামলার বাদীর স্বামী এস এম আব্দুস সাত্তার ওরফে শুভ (৩৪) এবং শুভ’র বন্ধু আরিফুল ইসলাম নাদিম (৩৫)। তারা দুজনই সিপিবির অঙ্গসংগঠন ক্ষেতমজুর সমিতির সদস্য।
মামলা হলেও আসামিদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ বলে অভিযোগ করেছেন বাদী। তিনি জানান, আসামিরা অফলাইন ও অনলাইনে সক্রিয় রয়েছে। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, আসামিদের পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ আসামিদের খুঁজে না পেলেও তারা সিপিবি কার্যালয়েই অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন দলটির একজন শীর্ষ নেতা। নাম প্রকাশ না করে এই নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার জানামতে অভিযুক্ত দুজন দলীয় কার্যালয়েই অবস্থান করছেন।’
সিপিবি কার্যালয়ে নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি ডা. ফজলুর রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ভুক্তভোগীকে ডেকে তার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ তদন্তে আমাদের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
মামলায় অভিযোগের বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এস এম আব্দুস সাত্তার শুভর সঙ্গে আমার ছয় বছরের সম্পর্ক ছিল। আমরা বিয়ে করি ২০১৯ সালের জুন মাসে। আমি চাকরি করি, শুভর কোনও আয় ছিল না। সংসারের খরচ আমিই বহন করতাম। বিয়ের দেড় মাসের মাথায় ব্যবসা করবে বলে আমার বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা এনে দেওয়ার কথা বলে শুভ। আমি টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করি। তারপর থেকে সে প্রায়ই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে যৌতুকের দাবিতে আমাকে মারপিট করে। আমার এবং আমার পরিবারের সামাজিক অবস্থান ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এভাবে আমি দিনের পর দিন তার নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করে আসছি।’
মামলার বাদী আরও বলেন, ‘গত ১৭ মে সকালে শুভ আমাকে আবারও মারধর করে। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে যৌতুক, মারধর ও অমানুষিক অত্যাচারের বিষয়টি আর সহ্য করতে না পেরে ওই দিনই আমি আমার মা-বাবাকে জানাই। বাবাকে জানানোর কারণে ১৯ মে থেকে শুভ বাসায় আসা বন্ধ করে দেয়। এভাবে চলতে থাকার পর ২১ জুন রাতে শুভ আমাকে জানায়, সে আমার সঙ্গে থাকবে না। আমি তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ওই রাতেই সিপিবি কার্যালয়ে যাই। আগেই খবর পেয়েছিলাম সে সিপিবি কার্যালয়ে থাকে। রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে আমি সেখানে যাই। সেখানে দেখতে পেয়ে শুভ আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। তার বন্ধু আরিফুল ইসলাম নাদিম (৩৫) আমাকে পুলিশ ডেকে ক্রসফায়ার এবং হত্যার হুমকি দেয়। মারধর ও হুমকির একপর্যায়ে কাউকে কিছু জানাবো না, আমার কাছে থেকে এই অঙ্গীকার নিয়ে আমাকে বের হতে দেয়। তাদের পার্টি সদস্য রফিক নামে একজনের সহায়তায় আমি সিএনজিতে করে বাসায় আসি।’
এরপর ভুক্তভোগী নারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসা নেন।
আসামিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মো. বিপ্লব হোসেন বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। আসামিদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এদিকে সিপিবি অফিসে নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমিও শুনেছি এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে। নিশ্চয়ই আমাদের সংশ্লিষ্ট সংগঠন এ ব্যাপারে কী করা যায়, সেই সিদ্ধান্ত নেবে। কমিউনিস্ট পার্টি কোনোভাবেই এ ধরনের অনৈতিকতা, কোনও নারীর প্রতি সহিংসতা গ্রহণ করে না। দ্রুত সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।’