X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

সৈকতে শীর্ণ-ক্লান্ত ঘোড়া: পরস্পরকে দায় দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা

উদিসা ইসলাম
০২ নভেম্বর ২০২১, ১০:০০আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২১, ১৫:৪৮

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই দেখা যাবে পর্যটকদের কাঁধে নিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্লান্ত পায়ে একের পর এক ঘোড়া হেঁটে চলেছে। তাতে পর্যটকের ছবি তোলা, বিনোদনের ব্যবস্থা হচ্ছে বটে কিন্তু এই ঘোড়া রোজ তার জীবনীশক্তি হারাচ্ছে। কোনও ঘোড়ার কাঁধে-পায়ে দগদগে ঘা, কোনওটির লোম পড়ে গেছে, কোনওটির খুরে সমস্যা। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, যেহেতু সৈকতে এদের ব্যবহারের অনুমতি জেলা প্রশাসন দেয় সেহেতু ঘোড়ার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণও তাদেরই রাখতে হবে। জেলা প্রশাসন থেকে যদি কোনও ঘোড়ার চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় তার ব্যবস্থা আমরা করে দেবো। আর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পর্যটকদের বিনোদনের জন্য ঘোড়া ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া তাদের কাজ কিন্তু ঘোড়ার শারীরিক পরিস্থিতি দেখা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরেরই দায়িত্ব। দুটো দুই জিনিস।

পর্যটকদের বিনোদন দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ৫৫টি ঘোড়া ব্যবহার হয়ে আসছে। ঘোড়া মালিকদের সমিতির বাইরে আরও ১০টিসহ মোট ৬৫টি ঘোড়া রয়েছে। কেবল ২০২০ সালেই ছয়টি ঘোড়া মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। ঘোড়ার মৃত্যুর কারণ জানতে কক্সবাজার প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল।

সরেজমিনে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে চারটি ঘোড়ার দেখা মেলে। এরমধ্যে একটি ঘোড়া দূরে দাঁড়িয়ে থেকে একসময় বসে পড়ে। আরেকটি ঘোড়া আধ কিলোমিটার জায়গায় পিঠে পর্যটক নিয়ে ছবি তোলার জন্য হেঁটে বেড়াচ্ছে। বাকি দুটোও যেন অনিচ্ছাতে একজন একজন করে লোক নিচ্ছে। এদের সবকটির শরীরের নানা জায়গায় ক্ষত। প্রথম দেখতে পাওয়া ঘোড়াটি এক পর্যায়ে পানির কাছাকাছি গিয়ে প্রায় আধশোয়া হয়ে বসে থাকে। কার ঘোড়া জানতে চাইলে একজন জানান, ‘মালিক আছে,  ঘোড়াটা কয়দিন ধরেই অসুস্থ।’

ঘোড়া মালিক সমিতির সভাপতি আহসান উদ্দীন বলেন, ‘অসুস্থ ঘোড়াদের আমরা ছেড়ে দেই। ওরা রোদে ঘুরে, ভিটামিনের দরকার আছে।’ তাদের নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়া হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘এখানে সব ঘোড়াই ব্যক্তি মালিকানাধীন। মালিকরা ঘোড়ার দেখভাল করে। অসুস্থ ঘোড়াদের দিয়ে কাজ করানো হয় না।’ যদিও সরেজমিনে গিয়ে তার কথার সত্যতা মেলেনি।

সৈকতে শীর্ণ-ক্লান্ত ঘোড়া: পরস্পরকে দায় দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা ২০২০ সালে ঘোড়ার মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ১৩ জনের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ দেয়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও বেলার নিযুক্ত আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর স্বাক্ষরিত লিগ্যাল নোটিশে সংশ্লিষ্ট নানা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তি, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সভাপতি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার পুলিশ সুপার, পৌর মেয়রেরও নাম রয়েছে।

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশে এখন বাণিজ্যিকভাবে ঘোড়ার গাড়ি ও পর্যটন এলাকায় বিনোদনের জন্য ঘোড়ার ব্যবস্থা রাখা বন্ধ করার সময় এসেছে। এটা বন্ধ করতে হবে। আধুনিক যুগে ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয়ের জন্য কোথাও কোথাও ঘোড়া বা ঘোড়ার গাড়ি রাখা যেতে পারে কিন্তু ঐতিহ্যের নামে যে নিষ্ঠুরতা সেটা মেনে নেওয়া যায় না। সৈকতে ঘোড়াগুলো রুগ্ন-শীর্ণ। অযত্নের কারণে যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে সেটা অ্যানিম্যাল প্রটেকশান অ্যাক্টের পরিপন্থী। এদের মালিকরা এদের প্রতি সহানুভূতিশীল না, যারা আরোহী তারাও ভেবে দেখেন না তাদের ভার এই ঘোড়ার জন্য সহনীয় কিনা। ফলে আধুনিক এই সমাজে এসে প্রাণীর প্রতি এই নিষ্ঠুরতা বন্ধ করার এখনই সময়।

এই রোগা ঘোড়াদের পর্যবেক্ষণে রাখেন কিনা প্রশ্নে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অসীম বরন সেন বলেন, ‘২০২০ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয় না খেতে পেয়ে ঘোড়া মারা গেছে। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে সেগুলো আসলে অসুস্থ ছিল।’  এখন যেগুলো সৈকতে পর্যটকদের জন্য রাখা হয়েছে সেগুলোর অবস্থাও ভালো না জানানো হলে তিনি বলেন, ‘সৈকতে ঘোড়া ব্যবহারের অনুমতি যেহেতু জেলা প্রশাসন দেয়। সেহেতু তাদেরই পর্যবেক্ষণ করার কথা। এক্ষেত্রে তারা যদি বলে এই ঘোড়াগুলো ফিট কিনা দেখে দিতে সেটা আমরা করে দিতে পারি। তারা ব্যবস্থা নিলে ভালো হয়। আবার কোনও ঘোড়া অসুস্থ হয়ে বাড়িতে বা হাসপাতালে নেওয়ার পরে চিকিৎসার দরকার হলে সেটা আমরা করতে পারি।’

এদিকে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘সৈকতে অনুমতি দেওয়া আর ঘোড়ার শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা দুটো দুই জিনিস।’ তিনি বলেন, ‘এই ঘোড়াগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন। ঘোড়া দিয়ে তার মালিক আয় রোজগার করে। ফলে প্রাথমিক দায়িত্ব তার। আর দ্বিতীয়ত ঘোড়ার শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে প্রাণিসম্পদ। এটা তো আমাদের দায়িত্ব না।’

/এমআর/এমএস/
সম্পর্কিত
ঈদে পর্যটক বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার
কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসছে অসংখ্য জেলিফিশ
বেড়িবাঁধ সংস্কারে বন উজাড়, ঝুঁকিতে উপকূল
সর্বশেষ খবর
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট