ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। শিক্ষার্থীদের বারবার শান্ত করার চেষ্টা করছে শিক্ষক ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ সদস্যরা। তবে তাদের শান্ত করা যায়নি। মূলত এই সংঘর্ষে জড়িয়েছে ঢাকা কলেজের হলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যাদের কোনও নেতৃত্ব নেই। তাই সংঘর্ষ থামাতে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বাসা যাচ্ছে না।
অপরদিকে, নিউ মার্কেট এলাকার বিভিন্ন দোকানের শিশু কর্মচারীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। তাদের অনেকেই আহত হয়েছে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে তারা জানতে পারেন, রাতে তাদের অনেকেই ব্যবসায়ীদের হামলায় আহত হয়েছেন। এরপর সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা নূরজাহান মার্কেটসহ ঢাকা কলেজের আশেপাশের মার্কেটগুলোতে লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে। এ সময় ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা তাদের ওপর হামলা করে। পরে ঢাকা কলেজের কিছু শিক্ষার্থী নূরজাহান মার্কেটের ছাদে ওঠেন। সেখানেও তাদের ওপর হামলা করা হয়। শিক্ষার্থীদের অনেকেই গুরুতর জখম হয়েছেন।
জাহিদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভোরে মার্কেটের কর্মচারীরা ঢাকা কলেজ গেটে অবস্থান নিয়েছে—এমন তথ্য আসে হলে থাকা শিক্ষারার্থীদের কাছে। এরপর শিক্ষার্থীরা ঘুম থেকে উঠে নূরজাহান মার্কেটে প্রবেশ করে। এ সময় ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা তাদের ধাওয়া দেয়।’
সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে দুই পক্ষই ইটপাটকেল মারতে থাকে। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হামপাতালে নিতে দেখা যায়। নিউমার্কেট ফুটওভার ব্রিজের নিচে পুলিশ অবস্থান নেয়। তাদের পেছনে গাউছিয়া ও চাঁদনি চকের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা অবস্থান নেন। মার্কেটের ওপর দোকান কর্মচারীরা উঠে ইট নিক্ষেপ করতে থাকে। অপরদিকে, শেখ রাসেল অ্যাকাডেমিক ভবনের ছাদে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। সেখান থেক তারাও মার্কেট লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন।
দুপুর ১টার দিকে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা মিরপুর সড়ক ছেড়ে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। নূরজাহান মার্কেটের নিচ তলায় এক দল শিক্ষার্থী অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করে। তবে কর্মচারীরা দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে।
পুলিশ দফায় দফায় টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড মেরে ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কর্মচারীদের পরিচয় পেয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর হামলা করে। এসব ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে সাংবাদিকদের মারধর করেন তারা। অনেকের মেমোরি কার্ড ও ক্যামেরা নিয়ে যায় কলেজ শিক্ষার্থীরা।
বেলা দেড়টার দিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য একটি কালো নোহা মাইক্রোবাসে ঢাকা কলেজে প্রবেশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা আরও উত্তেজিত হন। ঢাকা কলেজের পুকুরপাড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি আলোচনায় বসেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা লেখককে বলেন, ‘কেন কমিটি দেওয়া হলো না। কমিটি দিলে আজকে এই পরিস্থিতি হতো না।’
লেখক শিক্ষার্থীদের জবাবে বলেন, ‘কমিটি দিলে কী হবে। এখন আবার বরখাস্ত করতে হতো।’
ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের বর্তমানে কোনও কমিটি নেই। ছাত্রদের বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হামলা করতে দেখা গেছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ঈদকে সামনে রেখে একটা গ্রুপ অবৈধ সুবিধা নিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিকল্পনা করে এই হামলা চালিয়েছে।
আরও পড়ুন...
নিউ মার্কেটে ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ: সাংবাদিকসহ আহত ২০
নিউ মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ: সাংবাদিকদের ওপর হামলা
নিউ মার্কেট এলাকায় টানা সংঘর্ষ চলছে, যান চলাচল বন্ধ