প্রথমবারের মতো এবারের জনশুমারিতে হিজরাদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তবে তাদের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা। এসব বাধা দূর করার পাশাপাশি ‘লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী'র মানুষকেও আলাদাভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
রবিবার (২৬ জুন) বিকালে রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ইসফেনদিয়ার জাহেদ হাসান মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। ‘হিজড়া এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্য জনগোষ্ঠীর আইনগত সুরক্ষা: বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
মতবিনিময় সভায় প্যানেল আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘হিজরা ও লিঙ্গ বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আমাদের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে বোঝার অভাব রয়েছে। এবারের জনশুমারিতে সেটি প্রমাণিত হয়েছে। জনশুমারিতে হিজরা ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশনার অভাব রয়েছে।’
তথ্য সংগ্রহের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হিজরা একটি জনগোষ্ঠী হতে পারে। কিন্তু লিঙ্গ পরিচয়ের হিসাবে তাদের বিবেচনা করা ঠিক হবে না। জনশুমারিতে লিঙ্গ-পরিচয়ের ক্ষেত্রে এটি দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া কেউ লিঙ্গ-পরিচয় না দিতে চাইলে তৃতীয় লিঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হওয়া না হওয়ার বিষয়েও জানতে চান না তথ্য সংগ্রহকারীরা। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা বলছেন- হিজড়াদের বসবাসের জায়গাগুলো ছাড়া অন্যত্র তৃতীয় লিঙ্গের তথ্য সেভাবে জানতে চাওয়ার কিছু নেই।‘ তাহলে এই জনগোষ্ঠীর সঠিক তথ্য উঠে আসবে কীভাবে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সভায় যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে যাদের বিবেচনা করা হচ্ছে, অন্যান্য দেশে তাদের ট্রান্সজেন্ডার বলা হয়। এই জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করতে হলে সঠিক পরিসংখ্যান দরকার। কিন্তু এটি সরকারের কাছে নেই। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানের ধারণাপত্রে ব্লাস্টের গবেষণা বিশেষজ্ঞ আব্দুল্লাহ আনবার আনান তিতির বলেন, প্রথমবারের মতো জনশুমারিতে এবার হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠী বাদ পড়ায় বিষয়টি সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে ওঠেনি। এ দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।
সমাজকল্যাণ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, হিজড়া জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতি, পরিচয় ও সুবিধা দিয়েছে এই সরকার। আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রেও কিছু অগ্রগতি হয়েছে। এই জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক পরিবর্তনের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে সবার আগে পারিবারিকভাবে তাদের স্বীকৃতি দিতে হবে এবং পুনর্বাসিত করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নিজামুল হক, সম্পর্কের নয়া সেতু’র নির্বাহী পরিচালক জয়া সিকদার, পুলিশের জিআইজি জিহাদুল কবির প্রমুখ। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ থেকে আসা হিজরা ও লিঙ্গ বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, এনজিওকর্মীরা মতামত দেন।