X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

র‌্যাব-ডিবির তদন্তে ফারদিনের সহপাঠীরা সন্তুষ্ট, আপাতত কর্মসূচি স্থগিত

ঢাবি প্রতিনিধি
১৭ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:২৩আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:২৩

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের ‘আত্মহত্যার’ ঘটনায় ডিবি ও র‍্যাবের তদন্ত সন্তোষজনক বলেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এই মুহূর্তে নতুন কোনও পদক্ষেপে নেবেন না বলে জানিয়েছেন তারা। তারা বলছেন, ডিবি ও র‍্যাবের সঙ্গে বৈঠকের পর তাদের সামনে উপস্থাপন করা ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বা প্রমাণ সাপেক্ষে আর কোনও প্রশ্ন তাদের নেই। এ ছাড়া তাদের করা পাঁচটি প্রশ্ন ও ডিবির জবাব নিয়েও বিস্তারিত জানিয়েছেন তারা।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, আপাতত তাদের ফারদিন ইস্যুতে নতুন কোনও কর্মসূচি নেই। তাদের সব ধরনের কর্মসূচি স্থগিত। তবে ফারদিনের পরিবার কোনও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিলে তারা সব সময় পরিবারের পাশে থাকবে।

এর আগে ১৪ নভেম্বর ডিবি ফারদিন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন জানালে পরদিন মানববন্ধনের ডাক দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে ডিবি থেকে ফোন পেয়ে সেদিনের মানববন্ধন স্থগিত করে ‘আত্মহত্যার প্রমাণ’ দেখতে ডিবি কার্যালয়ে যান ৪০ জন সহপাঠী।

শনিবার সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, ‘বুধবার যখন ডিবি বলেছিল এটি আত্মহত্যা, তখন আমরা বলেছিলাম, এটি কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এত দিন ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে এখন ‘আত্মহত্যা’ বলাটা আমাদের কাছে কোনোভাবেই যৌক্তিক মনে হচ্ছিল না। ১৪ ডিসেম্বর ডিবির মন্তব্য আসার পর বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিদফতর থেকে বলা হয়, প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে যেন ডিবিকে জানানো হয়। তাদের সঙ্গে যেন বসি এবং তথ্য-প্রমাণাদি দেখে নিই।’

পরের দিন ১৫ ডিসেম্বর ডিবির সঙ্গে বৈঠক করতে একদল শিক্ষার্থী মিন্টু রোডের ডিবি অফিসে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, ওই সময় ডিবির কাছে পাঁচটি প্রশ্ন করেন তারা। সে প্রশ্নগুলোর উত্তরও তারা পেয়েছেন ডিবির কাছ থেকে।

যে পাঁচটি প্রশ্ন ছিল র্যাব ও ডিবির কাছে
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, ডিবির কাছে করা তাদের প্রথম প্রশ্ন ছিল, ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসক জানিয়েছিলেন ফারদিনের বুকে ও মাথায় অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে এখন কীভাবে আত্মহত্যার কথা এল?

এ প্রশ্নের উত্তরে ডিবি তাদের জানায়, চিকিৎসকের সঙ্গে তারা কথা বলেছে। চিকিৎসক তাদের বলেছেন, এই আঘাতের ধরনটা অনেকটা কিল-ঘুষির মতো। এখানে কোনও কাটাছেঁড়ার বিষয় ছিল না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা ছিল রক্ত জমাট বাঁধার মতো। জামাকাপড় ছিঁড়ে যায়নি। চিকিৎসক আরও বলেন, ওপর থেকে লাফ দেওয়া হয় যদি, তবে স্রোতের ধাক্কায় স্প্যানে ধাক্কা খেয়ে কিংবা পানিতে লাফ দেওয়ার কারণেও এই ধরনের আঘাতের চিহ্ন আসতে পারে। সুতরাং ওই চিহ্নের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসক বলছেন যে এটা যে আত্মহত্যা নয়, তা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না।

ডিবির কাছে দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ডিবি যে দাবি করছিল, সেই লোকটাই ফারদিন, এর ভিত্তি কোথায়?

জবাবে ডিবি জানায়, ফারদিনের শেষ কন্ট্রাক্ট পাওয়া গেছে, যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় উঠতে দেখা যায় ফারদিনকে। সেই লেগুনা তাকে তারাবোর দিকে অর্থাৎ সুলতানা কামাল ব্রিজের বিপরীত পাশে নামিয়ে দেয়। ফারদিনের লোকেশন, ওই লেগুনা ড্রাইভারের লোকেশন—এগুলো ক্রসচেক করে ডিবি প্রমাণ পেয়েছে যে বিষয়টি সত্য। ফারদিন যে জায়গা থেকে লাফ দেয়, সেই জায়গা থেকেই তার লোকেশন ট্র্যাক করা হয়।

ডিবি মনে করছে, ওই একই সময়ে একই জায়গা থেকে অন্য একজনের লাফ দেওয়ার আশঙ্কা খুবই ক্ষীণ। এ ছাড়া ওই সময়ের পরই ফারদিনের মোবাইল অফ হয়ে যায়। এর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ফারদিনের হাতঘড়িও বন্ধ হয়ে যায়।

তৃতীয় প্রশ্নটি ছিল, ফারদিন যে সেদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন, তার কোনও উপযুক্ত প্রমাণ আছে কি না?

উত্তরে ডিবি জানায়, ওই দিন রাত ১০টা ৪৫ থেকে ১১টা ৯ মিনিট পর্যন্ত বুয়েটের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফারদিনের কথা হয়। সেই কথোপকথনের সময় ফারদিনকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে। ট্র্যাক করা তথ্য বলছে, ওই সময় ফারদিন ছিলেন জনসন রোডে। অর্থাৎ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর যে ট্র্যাক রেকর্ড আমরা দেখেছি, ওই সময়টার মধ্যেই সেটি ছিল। ঘুরতে ঘুরতেই তিনি ফোনে কথা বলেছেন এবং কথার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি।

এরপর ১টা ৫৭ থেকে ১টা ৫৯ পর্যন্ত তার একজন বন্ধুর সঙ্গে মেসেঞ্জারে কথা হয়। সেই বন্ধুর চ্যাট দেখে সেখানেও অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি।

শিক্ষার্থীদের চতুর্থ প্রশ্ন, লেগুনাচালক কত দিন আগে ফারদিনকে নামিয়ে দিয়েছিলেন, তা তিনি কীভাবে মনে রেখেছেন?

উত্তরে ডিবি জানায়, লেগুনাচালক আটকের আগে পুলিশ তাকে নজরদারির মধ্যে রেখেছিল। প্রথমত, তার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিক আচরণ পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ত, আটকের পর লেগুনাচালক ঠিক কতজন নিয়ে যাত্রা করেছিলেন, সে ব্যাপারে হুবহু কিছু বলতে পারেননি। কারণ, ঘটনা অনেক দিন আগের। তবে তিনি বলেছেন, মোটামুটি পাঁচ থেকে ছয় জন ছিল। তারাবোর ওখানে, অর্থাৎ ব্রিজের ওই পাড়ে বাজারের কাছে অল্প দূরত্বের দুটি ভিন্ন স্থানে দুজনকে নামিয়ে দেন।

ডিবির ধারণা, ওই দুজনের একজন ফারদিন। এ কারণে লেগুনাচালকের সাক্ষ্যকে তারা খুব বেশি একটা সন্দেহ করছে না। লেগুনাচালকের কথার সঙ্গে সময় পুরোপুরি মিলে গেছে।

শিক্ষার্থীদের পঞ্চম ও সর্বশেষ প্রশ্ন ছিল, মাদক, চনপাড়া বস্তিসহ বিভিন্ন ঘটনা যে সামনে এল, এগুলোর ভিত্তি কী?

তবে শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা ডিবির কাছে এই প্রশ্নটি করার সুযোগ পায়নি। কারণ, এই বিষয়গুলো নিয়ে ডিবি থেকে আগে কিছু জানানো হয়নি। পরে র‍্যাবের কাছে এ প্রশ্ন করার সুযোগ হয়।

জবাবে র‍্যাব জানায়, তারা যখন প্রথম তদন্ত শুরু করে, তখন তিনটি জায়গা থেকে তদন্ত শুরু করে—প্রথমত, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কি না। দ্বিতীয়ত, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু কি না। তৃতীয়ত, আত্মহত্যা কি না। তদন্ত শুরু করার পর ফারদিনের রবি সিমের নম্বর ট্র্যাক করে যে এমন একটি সেলে তার লোকেশন কানেক্ট হয়, যা মূলত চনপাড়ার বেশির ভাগ এলাকা এবং সুলতানা কামাল ব্রিজের অংশবিশেষ কাভার করে। ওই সব ভিত্তিতে র‍্যাব চনপাড়া এলাকা টার্গেট করে। ওই সময় চনপাড়া থেকে অনেক সন্ত্রাসী এসে দাবি করে, তারা ফারদিনকে হত্যা করেছে। সেই জায়গা থেকে র‍্যাব তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সে ক্ষেত্রে র‍্যাব তদন্ত করে কিছু না পেলে সুলতানা কামাল ব্রিজ-সংলগ্ন এলাকার দিকে ফোকাস করে।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
সর্বশেষ খবর
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা