X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে কি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল করবে?

মাহফুজ সাদি
০৩ মার্চ ২০২৩, ১৫:০০আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৩, ১৭:০৪

বঙ্গবন্ধু সেতুসহ দেশের অন্যান্য সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করলেও পদ্মা সেতুতে নিষিদ্ধ। যোগাযোগ ব্যবস্থায় মাইলফলক স্থাপন করা এই সেতুতে দীর্ঘ আট মাসের বেশি সময় বাইক চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেতুটি চালুর পর প্রথম ঈদুল ফিতর হচ্ছে এবার। মোটরসাইকেলের খসড়া নীতিমালা সামনে আসায় বাইকারদের প্রশ্ন—পদ্মা সেতু দিয়ে প্রথম ঈদযাত্রায় তাদের কী হবে? অন্য সেতু দিয়ে চলাচল করলেও পদ্মা সেতুতে কেন নয়?

কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মা সেতুতে দুর্ঘটনা এড়াতে এবং সেতুটি নিরাপদ রাখতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত ৮ মাসে সেতু দিয়ে বাহনটি চলাচল করতে দেওয়া নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। শিগগিরই নতুন কোনও সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনাও নেই। ফলে এবারের ঈদযাত্রায় বর্তমান আদেশ বহাল থাকছে—মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না।

২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করার পরদিন যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় পদ্মা সেতু। প্রথম দিনে বিপুল সংখ্যক বাইক সেতুটি দিয়ে পার হয়। টাকার বিনিময়ে বাইকে করে সেতু পার করে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। এরমধ্যেই ওই দিন রাতে এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজন মারাত্মক আহত হন। ওই দুর্ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। গত ১ মার্চ মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত বাইকারদের মানববন্ধন। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

পরদিন সেতুটি দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার। এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৭ জুন সকাল ছয়টা থেকে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে। গণবিজ্ঞপ্তি নিয়ে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়। সেটি উত্থাপিত হয়নি বলে এ বছরের ১৫ জানুয়ারি খারিজ করে দেন আদালত।

এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য না করলেও ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীরা। তারা বলছেন, এক দেশে দুই নীতি চলতে পারে না। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে বাইক চলাচল করতে সমস্যা না হলে পদ্মা সেতুতে কেন নিষিদ্ধ থাকবে। সামনেই ঈদুল ফিতর, তখনও কি এই সেতু দিয়ে বাইক চলাচল বন্ধ থাকবে?

শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক বাইকার বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর প্রথম ঈদ আসছে এবার। নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে ঝালকাঠির গ্রামের বাড়িতে যেতে চাই। কিন্তু সেতু দিয়ে যেতে পারবো কিনা, জানি না। আমার বন্ধুরা তো বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে বাইক নিয়ে যেতে পারছে। কোনও সমস্যা হচ্ছে না তাদের। তাহলে পদ্মা সেতুতে আমাদের কেন সমস্যা হবে? ঈদে কি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল করবে?

বাগেরহাটের ইমরান শেখ বলছেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে নিজের মোটরসাইকেলে এবার ঈদ করতে বাড়িতে যেতে চাই। দুর্ঘটনার ঝুঁকি তো সব সেতুতেই আছে। সেগুলোতে তো মোটরসাইকেল বন্ধ নেই। কেবল পদ্মা সেতুতে নিষিদ্ধ কেন? এটা সরকারের দ্বিমুখী নীতি, যা বৈষম্যমূলক। এর ওপর আবার মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণে খসড়া নীতিমালা করেছে। সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছে, আবার সড়ক-মহাসড়কে বাইকের গতিরোধ করতে চাইছে!

সেতু বিভাগের অন্তত তিনজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করলেও পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারবে না—এটি সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য ও সেনসিটিভ প্রকল্প। অনেকে এখানে রেসিং করেন, দুর্ঘটনাও বেশি ঘটার ঝুঁকি রয়েছে। তাই ‘পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ এখানে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে জানতে সেতু বিভাগের নির্বাহী পরিচালক (সচিব) মঞ্জুর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের সেতু বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক (পদ্মা সেতু সাইট অফিস) মো. আমিরুল হায়দার চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। নতুন সিদ্ধান্ত না এলে বর্তমান আদেশই বহাল থাকবে।’ প্রায় একই কথা বলেছেন সেতু বিভাগের সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান। এই দুই কর্মকর্তার তথ্য বলছে, আসন্ন ঈদের আগে নতুন সিদ্ধান্ত না এলে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধই থাকবে।

সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলেছেন, পদ্মা সেতু চালুর সময় মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি তো ছিল। কিন্তু একদিকে উৎসুক মানুষের ভিড়, অন্যদিকে বাইকারদের হিড়িক। এমনকি সেতুর ওপর রেসিং পর্যন্ত করেছে তারা। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। সে জন্য বাইক চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন সেতু চালুর পর প্রথম ঈদে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে আবারও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই বিদ্যমান আদেশ বহাল রাখা হবে, যাতে সমস্যা না হয়।

গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সঙ্গে সংলাপে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালুর বিষয়ে প্রথমে আমাদের কোনও নিষেধ ছিল না। কিন্তু সেখানে একটা সমস্যা হয়ে গেছে। যে জন্য পদ্মা সেতুই চলাচলের অনুপযোগী হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন অনেকে। এই বাস্তবতাটি সবারই মেনে নেওয়া উচিত।

সাম্প্রতিক সময়ে ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেলে করে ঢাকা থেকে বাড়িতে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে বলে মনে করেন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, করোনাকালে লকডাউন শিথিল হলে ফেরিঘাটে দুর্বিষহ জট লেগে যাওয়া চোখে আঙুল দিয়ে সেটিই দেখিয়ে দেয়। অনেকে ঈদযাত্রার সময় গণপরিবহনের ভোগান্তির কারণে বাইককে বিকল্প ভাবতে শুরু করেছেন। কিন্তু এটি তো দূরের পথে যাত্রার জন্য নয়।

এদিকে, মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস, এর নিরাপদ ব্যবহার ও অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ বাইক ব্যবহারে উৎসাহিত করতে এবং চালকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে একটি নীতিমালা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে ‘মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা-২০২৩’ নামে একটি খসড়াও করা হয়েছে। এতে স্কুটির প্রসার ঘটানো এবং স্পোর্টি বাইকের ব্যবহার কমানোর কথা বলা হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি খসড়া নীতিমালাটি তৈরি করেছে। এতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর ও পুলিশের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়েছে, যা শিগগিরই চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এই কমিটির সদস্য বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ হাসনাত-ই-রাব্বি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেওয়া না দেওয়া নিয়ে তাদের বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজার মতো উৎসব-পার্বণের আগে-পরে ১০ দিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানো বন্ধ রাখা হবে। এছাড়া মহাসড়কে মোটরসাইকেল আরোহী বহন এবং ১২৬ সিসি ইঞ্জিনের নিচে বাইক চলাচলও নিষিদ্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। শহরের মধ্যে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ইয়ারফোন কানে লাগিয়ে বা মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে বাইক চালানো যাবে না বলেও বিধান রাখা হয়েছে।

খসড়াটি শিগগিরই অনুমোদন পেতে পারে- এমন কথা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানালেও এটি  প্রত্যাহার চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন বাইকাররা। গত বুধবার (১ মার্চ) বিকালে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে মানববন্ধন করে তারা দাবি করেন, মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালার খসড়া একটা অবাস্তব বিষয়। এটি প্রত্যাহার করতে হবে। দাবি আদায়ে ৫ মার্চ আন্দোলনে যাবে তারা।

আরও পড়ুন:

/এমএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আত্মীয়ের জানাজা শেষে ফেরার পথে প্রাণ গেলো মা-ছেলের
ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
সর্বশেষ খবর
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ