নির্মাণ করা হয়েছিল পাইকারি মার্কেট হিসেবে। তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সাত বছর পরও নানা প্রতিবন্ধকতায় চালু করা সম্ভব হয়নি মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেট। পরে ২০২১ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময় শুধু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সাময়িকভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে মার্কেটটি হস্তান্তর করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ। শুরুর দিকে রোগীর চাপ থাকলেও করোনা প্রাদুর্ভাব কমলে রোগীর সংখ্যাও কমে যায়। পরবর্তীতে এই হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়ার ঘোষণা দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, এটিকে জেনারেল হাসপাতাল করা হবে। তবে ছয় মাস অতিক্রম হলেও এবিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি ডিএনসিসি। ডিএনসিসি বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অপেক্ষায় আটকে আছে জেনারেল হাসপাতালের পরিকল্পনা।
বর্তমানে হাসপাতলটিতে দৈনিক রোগী আসেন গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন। এর মধ্য করোনা রোগী দুই থেকে চার জন। বাকিরা ডেঙ্গুসহ সর্দি, কাশি ও বিভিন্ন সংক্রমণ রোগের জন্য এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে ১১ কাঠা জমির ওপর ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয় তলা এই ভবনটি এক রকম ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। অযত্নে নষ্ট হচ্ছে ডিএনসিসির এই সম্পদটি।
সম্প্রতি হাসপাতালটি সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, ছয়তলা ভবনের একেবারে ওপরের তলায় ৯টি আইসিইউ এর মধ্যে দুটিতে রোগীদের চিকিৎসা চলছে। বাকি আইসিইউ বেডগুলো খালি পড়ে রয়েছে। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় মার্কেটের জন্য নির্মিত সাটার লাগানো দোকানগুলোতে তৈরি করা ওয়ার্ডগুলোও বন্ধ রয়েছে। এত বড় একটি ভবনের একাংশে চিকিৎসা কার্যক্রম চললেও ভবনের বাকি অংশে ধুলা পড়ে আছে।
রোগী কম থাকলেও হাসপাতালটি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য রয়েছেন ১৫৭ জন আউটসোর্সিং কর্মী। এছাড়া রোগী দেখাশোনার জন্য ৬০-৭০ জন নার্স ও প্রায় ২৫ জন চিকিৎসক আছেন বলে জানান হাসপাতালের দ্বায়িত্বরত কর্মীরা।
এবিষয়ে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম শফিকুর রহমান বলেন, ‘করোনা মহামারির সময়ে এই হাসপাতালটিতে রোগীদের ভিড় অনেক ছিল। পরবর্তীতে করোনার সংক্রমণ কমে আসলে রোগীর সংখ্যাও কমে আসে। তবে করোনার রোগী কমে আসলেও আমরা এখনও করোনা চিকিৎসা দেওয়ার সব ধরনের ব্যবস্থা চালু রেখেছি। এখনও দিনে তিন-চারজন করে করোনার রোগী এখানে ভর্তি হন। এর পাশাপাশি বর্তমানে আমরা ডেঙ্গুসহ সল্প পরিসরে বিভিন্ন সংক্রমণ রোগের চিকিৎসা দিচ্ছি।’
উত্তর সিটি করপোরেশন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবাইদুল রহমান বলেন, ‘ডিএনসিসি মেয়রের পরিকল্পনা আছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে নগরবাসীর জন্য একটি করে মর্ডান জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ করবেন। মহাখালি হাসপাতলটিকেও সেই আঙ্গিকে তৈরি করা হবে। এটি অনেকদূর এগিয়েছে। ইতোমধ্যে সার্ভের কাজগুলো চলমান রয়েছে। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন পেলে মহাখালি হাসপালটিকে একটি জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তর করা যাবে।’
জেনারেল হাসপাতাল হতে যা যা লাগে, যে যে ডিপার্টমেন্ট গুলো থাকা দরকার হয় সবগুলোই থাকবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মহাখালিতে ভবন কাঠামো রয়েছে। এখন এর ভেতরে আর্কিটেক্টদের পরামর্শে একটি আধুনিক জেনারেল হাসপাতালে করতে রুমগুলো যেভাবে সংস্কার করতে হয় সেইভাবে কাজ করবো।
ডিএনসিসির এই প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আশা করছি যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল যেমন অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করছে সেইভাবে মহাখালি জেনারেল হাসপাতালটাও করা হবে। একইভাবে এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনী থাকবে। আর স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহযোগিতায় সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
এদিকে ডিএনসিসির মার্কেটিকে জেনারেল হাসপাতাল করার বিষয়টি নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে আলোচনা হবে জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল অনুবিভাগ) এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) নাজমুল হক খান বলেন, ‘ডিএনসিসি মার্কেটিকে জেনারেল হাসপাতালের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। এটি পলিসি মেকিং পর্যায়ে আছে। সেখান থেকে কিছু জানালে জানতে পারবো। এবিষয়ে ঊর্ধ্বতন কাউকে জিজ্ঞাস করলে ভালো হবে।’