X
শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

কেন দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা পুরোপুরি দিতে পারছে না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ?

জুবায়ের আহমেদ
১৩ জুন ২০২৩, ১০:০১আপডেট : ১৩ জুন ২০২৩, ১০:১২

সম্প্রতি চিড়িয়াখানায় ঘুরতে গিয়ে হায়েনার কামড়ে হাত হারিয়েছে দুই বছরের এক শিশু। এরপরই সেখানে বন্যপ্রাণীদের দেখতে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকবল সংকট রয়েছে। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের অসচেতনতাও নিরাপত্তা ঝুঁকির সৃষ্টি করছে।

সোমবার (১২ জুন) জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বৃহত্তর এই বিনোদন কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন পাঁচ জন আনসার সদস্য। তাদের ছাড়া চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের পরিচর্যা ও খাবার দেওয়ার দায়িত্বে থাকা এনিমেল কেয়ারটেকার বা কর্মীদের পশুদের খাঁচার আশপাশ দেখা যায়নি। কয়েকজনকে খুঁজে পাওয়া গেলেও নির্দিষ্ট কোনও পোশাক না থাকায় তাদের সহজে চিনতে পারা যায় না।

দায়িত্বে থাকা এই কর্মীরা জানান, চিড়িয়াখানায় পশুর খাঁচার সংখ্যা ১০০টিরও বেশি। কিন্তু মোট কর্মী সংখ্যা ৭০ জনের মতো। দিনে দুই শিফটে ৩৫ জন করে কাজ করেন। এতে একজন কর্মীকে একাধিক পশুর খাঁচা দেখভাল করতে হয় হয়। তাই প্রত্যেক খাঁচার আশপাশে উপস্থিত থাকা সম্ভব নয়।

তারা আরও জানান, দায়িত্ব কেবল চিড়িয়াখানার পশুপাখির পরিচর্যা করা হলেও খাঁচার সামনে ময়লা পরিষ্কারসহ আগত দর্শনার্থীদের প্রতিও তাদের দৃষ্টি রাখতে হয়।

জাতীয় চিড়িয়াখানা (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, ‘একজনের পক্ষে কয় দিক দেখা সম্ভব? কয়েকদিন আগে যে হায়েনার খাঁচায় ওই ঘটনা ঘটেছে সেখানে আমাদের লোক ছিল। কিন্তু সে খাবার আনতে গেছিল। এর ফাঁকে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেছে। এখন এইখানে আরেকজন থাকলে কিন্তু এই অবস্থা দেখা লাগতো না। একজন পশুও দেখবে, মানুষও দেখবে, তাইলে তো চাপ থাকে। তবুও আমরা সব সময় চেষ্টা করি চিড়িয়াখানায় আসা লোকজনকে সাবধান করতে। তাদেরও সচেতন হওয়া দরকার।’

চুরি ঠেকানো, হকার দূর করাসহ নানান বিষয় দেখতে হয় জানিয়ে আ. আজিজ নামে এক এক আনসার সদস্য বলেন, ‘চিড়িয়াখানায় আসা অধিকাংশ দর্শনার্থী সচেতন না। অনেক ভালো প্রোফাইলের মানুষদেরও দেখেছি খাঁচার কাছে সন্তানকে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলে। মানা করলে অনেক সময়ই খারাপ ব্যবহারের শিকার হই। অনেকে আবার শোনে। কিন্তু আমরা তো রাউন্ডের ওপর থাকি। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে দর্শনার্থীদের ওপর নজর রাখা যায় না।’

কর্মী সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘আমাদের চিড়িয়াখানায় ১৩৭টি খাঁচার ২৩৭টি প্রকোষ্ঠ (একটি খাচার মধ্যে আলাদা আরও কয়েকটি পশু রাখার স্থান)। এখন এই যে ২৩৭টি প্রকোষ্ঠে যদি একটি করে লোক সার্বক্ষণিক নিয়োগ দেই তাহলে আমার ২৩৭ জন কর্মী প্রয়োজন, তাও এক শিফটে। সেখানে কমপক্ষে দুটি শিফট লাগে আমাদের। যেখানে আমাদের কেয়ারটেকার আছে প্রায় ৭০ এর কাছাকাছি। তার মধ্যে এক চতুর্থাংশ ছুটিতে থাকে নিয়মিত। আর তাদের দায়িত্ব পশুপাখি নিয়মিত দেখাশোনা করা। তবুও আমরা তাদের বিভিন্নভাবে মোটিভেট করে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক রাখার জন্য বলি।’

জাতীয় চিড়িয়াখানা (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

কর্মী সংকটের বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর ওয়াকিবহাল আছে জানিয়ে  তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের কর্মী সংকটের বিষয়টি জানে, তাদের আমরা জানিয়েছি। তবুও আমরা বসে নেই। আমরা প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আগে থেকেই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও তাদের সুবিধার্থে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছি। এই ঘটনাটি (শিশুর হাত বিচ্ছিন্ন) ঘটার পর আমরা দর্শনার্থীদের ফিজিক্যাল নিরাপত্তার বিষয়ে নতুন করে ভাবছি। আমরা খাঁচাগুলোর সামনে যে ব্যারিয়ার আছে সেগুলোকে আরও মজবুত ও উঁচু করবো।’

সম্প্রতি হায়েনার দ্বারা শিশু দর্শনার্থীর হাত কামড়ে বিচ্ছিন্ন করার ঘটনাটি হৃদয়বিদারক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দর্শনার্থীদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ওর জন্য আমরা দর্শনার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করবো। তার জন্য আমরা ভাবছি দর্শনার্থীদের জন্য একটা ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার তৈরি করবো। যেখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশের পর চিড়িয়াখানার পশুপাখি, তাদের স্বভাব ও তাদের ডেঞ্জার সম্পর্কে একটা ধারণা দেবো প্রথমে। এই ব্রিফটা অনেক হেল্প করবে আমাদের দর্শনার্থীদের, বিশেষ করে শিশুদের। তারা আরও সচেতন হবে। আরেকটা বিষয়, আমাদের চিড়িয়াখানা নিয়ে যে মাস্টার প্ল্যান সেখানে দর্শনার্থীদের গ্রুপ করে প্রত্যেক গ্রুপের জন্য একজন গাইড দেওয়ার ব্যবস্থা রাখছি। তারা ঘুরে ঘুরে দেখাবে।’

জাতীয় চিড়িয়াখানা

এদিকে হায়নার আক্রমণের ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা ভীত বলে জানান চিড়িয়াখানায় আসা বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী। তারা তাদের সুরক্ষার বিষয়টি আরও ভালোভাবে দেখার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মানিক চন্দ্র রায় বলেন, ‘এখানে আসা অনেকেই তেমন সচেতন না। তাই বিশেষ করে হিংস্র পশুদের খাঁচার সামনে একজন করে লোক নিয়োগ করা থাকলে যেকোনও দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।’

শাহারিয়া ইসলাম নিশাত নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে দেখলাম উটপাখির খাঁচার বাইরে থেকে কিছু ছেলে ভেতরে হাত বাড়াচ্ছিলো। এখন যদি উটপাখি কামড়ে দেয় তাহলে তো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আমাদের সচেতনতার পাশাপাশি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষেরও বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন কীভাবে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা যায় তার ওপর।’

আরও পড়ুন- 

হায়েনার কামড়ে হাত বিচ্ছিন্ন: হাসপাতালে কাতরাচ্ছে শিশু সাইফ

খাঁচায় বন্দি হায়েনা নিয়ে গেলো দুই বছরের শিশুর হাত

/এফএস/
সম্পর্কিত
নভেম্বরে আসার কথা থাকলেও আসেনি ইলেকট্রিক বাস
আনিসুল হকের সমাধিতে ডিএনসিসির শ্রদ্ধা
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ককটেল বিস্ফোরণ
সর্বশেষ খবর
কুড়িগ্রামের চার আসনে ৩৯ প্রার্থী, ১৩ জন স্বতন্ত্র
কুড়িগ্রামের চার আসনে ৩৯ প্রার্থী, ১৩ জন স্বতন্ত্র
এবার ‘টাইমড আউটের’ শিকার জাপা প্রার্থী
এবার ‘টাইমড আউটের’ শিকার জাপা প্রার্থী
ঋণখেলাপি প্রার্থীদের পেছনে ব্যাংকগুলোকে লেগে থাকার নির্দেশ
ঋণখেলাপি প্রার্থীদের পেছনে ব্যাংকগুলোকে লেগে থাকার নির্দেশ
বিএনপিকে ছাড়াই চললো নির্বাচনি ট্রেন
বিএনপিকে ছাড়াই চললো নির্বাচনি ট্রেন
সর্বাধিক পঠিত
সহকর্মীকে গোপনে বিয়ে, প্রথম স্ত্রীর মামলায় প্রভাষক কারাগারে
সহকর্মীকে গোপনে বিয়ে, প্রথম স্ত্রীর মামলায় প্রভাষক কারাগারে
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন প্রতিমন্ত্রী ও তার ছেলে
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন প্রতিমন্ত্রী ও তার ছেলে
আজকের আবহাওয়া: সুস্পষ্ট লঘুচাপের সর্বশেষ আপডেট
আজকের আবহাওয়া: সুস্পষ্ট লঘুচাপের সর্বশেষ আপডেট
পিটার হাস আচরণের সীমা মেনে চলবেন আশা করে সরকার: ওবায়দুল কাদের
পিটার হাস আচরণের সীমা মেনে চলবেন আশা করে সরকার: ওবায়দুল কাদের
পাহাড়ি জনপদে চোখ ধাঁধানো উন্নয়ন, বাড়ছে পর্যটক
পাহাড়ি জনপদে চোখ ধাঁধানো উন্নয়ন, বাড়ছে পর্যটক