X
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে আসছে অবৈধ অস্ত্র

রিয়াদ তালুকদার
২৪ জুন ২০২৩, ০০:০১আপডেট : ২৪ জুন ২০২৩, ০০:০১

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করতে পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসছে অবৈধ অস্ত্র। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে এসব অবৈধ অস্ত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। মাদক চোরাকারবারিদের সহায়তায় পাচারচক্রের সদস্যরা বিভিন্ন কৌশলে প্রতিবেশী দেশ থেকে অস্ত্রের চালান নিয়ে আসছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। বিশেষ করে নাফ নদী ব্যবহার করে এসব অস্ত্র আনা হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীসহ নানা পর্যায়ের অপরাধীদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে এই অবৈধ অস্ত্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, কক্সবাজার এবং আশপাশের এলাকার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন রোহিঙ্গারা। ভাষাগত কিছুটা মিল থাকায় এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কক্সবাজারের আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েছে অনেক রোহিঙ্গা। এছাড়া মাদক চোরাচালানকারীদের আধিপত্যের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রায়ই ঘটছে হতাহতের ঘটনা। প্রতিনিয়তই কোনও না কোনও ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়। এখনই লাগাম টানতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। এছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নিজেদের ক্ষমতা জানান দিতেও অনেকেই এসব অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করছে। বেশিরভাগই অস্ত্রই যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে।

র‌্যাব বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম এমনিতেই দুর্গম এলাকা। ছোট্ট এ অঞ্চলে তিনটি দেশের সীমান্ত। এ অঞ্চলে অনেক উঁচু উঁচু পাহাড়ের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সীমান্ত অরক্ষিত থেকে যায়। অভিযানের সময় দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে সেখানে টিকে থাকা খুবই দুষ্কর। কোনও রাস্তা নেই, পেট্রোলিং করা যায় না। পুরোটাই ফুট পেট্রোলিং করতে হয়। মূলত এসব কারণেই পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আসা সম্ভব।

গোয়েন্দারা জানান, মিয়ানমার ও ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে দেশে অস্ত্র ঢুকছে— তাদের কাছে এমন তথ্য রয়েছে। অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ, বিপণন, বিতরণ বা এজেন্ট হিসেবে কারা ব্যবহৃত হচ্ছে এবং কাদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে— এসব বিষয়ে বেশ কিছু গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে র‌্যাব এ নিয়ে কাজ করছে।

সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানে রাজধানীতে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে অস্ত্র পাওয়া যায়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তারা এই অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে কাট আউট পদ্ধতিতে। ফলে অস্ত্রের মূল সরবরাহকারী বরাবরই থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

র‌্যাব জানায়, ফোন কিংবা তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এসব অবৈধ অস্ত্র। মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি এবং স্থানীয়ভাবে রাজনীতিতে শক্তি সঞ্চার করতেই এ ধরনের অস্ত্র সংগ্রহ করছে বলেও গোয়েন্দাদের জানিয়েছে গ্রেফতারকৃতরা।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অস্ত্র তৈরি হয় বিভিন্ন দেশে। কীভাবে আসছে, কোন দিক দিয়ে আসছে— তার সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলে কোনও দেশকে দায়ী করা যায় না। তবে সম্প্রতি বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলনে এ বিষয়ে বিএসএফের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। তবে অস্ত্র কোথা থেকে আসছে,  কখনও তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবো না, মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে না ভারত সীমান্ত পেরিয়ে।’

র‌্যাব-১৫ এর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে গত দুই মাসে ২০টির মতো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। কেউই নজরদারির বাইরে নয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ছয় থেকে সাত জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব-১৫। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অস্ত্র। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধ পথে এসব অস্ত্র আসছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আধিপত্য বিস্তারের কারণে বিভিন্ন সময় নিহতের ঘটনা ঘটে। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য রোহিঙ্গারা অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করছে। পাশাপাশি তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চড়া দামে অস্ত্র বিক্রি করছে। যখনই আমরা তথ্য পাচ্ছি, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্র এবং মাদকের বিষয়ে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। টেকনাফ এলাকায় বেশ কিছু অভিযান চালানো হয়েছে। এরইমধ্যে বেশ কিছু আধুনিক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

/ইউএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সুন্দরবন দিয়ে ৬২ ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিএসএফ
মৌলভীবাজার সীমান্তে দুই দিনে আটক ৫৯ জনকে পুলিশে হস্তান্তর
মিয়ানমারে পাচারকালে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ ৬ জন আটক
সর্বশেষ খবর
সাবেক এমপি শামীমা কারাগারে
সাবেক এমপি শামীমা কারাগারে
জাতীয় কারাতে প্রতিযোগিতায় খেলোয়াড়-সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৩
জাতীয় কারাতে প্রতিযোগিতায় খেলোয়াড়-সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৩
রাজশাহীতে মকবুল হত্যা মামলার পাঁচ আসামিকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার
রাজশাহীতে মকবুল হত্যা মামলার পাঁচ আসামিকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে দ্রুত ও সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে দ্রুত ও সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
সর্বাধিক পঠিত
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ