X
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
৪ আষাঢ় ১৪৩২

‘মাদক আছে’ বলেই হ্যান্ডকাফ, যেভাবে ছাড়া পেলো ছেলেটি

রিয়াদ তালুকদার
২৩ জুলাই ২০২৩, ১৬:৪৪আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৩, ২২:৩১

গাজী মোহাম্মদ জান্নাত (২৫) নামে এক তরুণকে ‘মাদক রাখার’ অভিযোগে ফাঁসানো চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে রামপুরা থানা পুলিশের এসআই সজল সাহা ও এএসআই মাহবুবের বিরুদ্ধে। গত ১৪ জুলাই রাতে এ ঘটনা ঘটে। যদিও ওই তরুণের দেহ তল্লাশি করে কোনও মাদক পায়নি পুলিশ। কিন্তু তার আগেই তাকে পরানো হয় হ্যান্ডকাফ। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী বিষয়টির প্রতিবাদ করলে পুলিশ সদস্যরা গাজী মোহাম্মদ জান্নাতকে ছেড়ে দেয়। যদিও ‘মাদক আছে’ বলে হ্যান্ডকাফ পরানোর বিষয়টি অস্বীকার করে পুলিশ বলছে—ওই তরুণ পুলিশ দেখে দৌড় দিয়েছিল। এ কারণে তাকে ধরে যখন জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিল, তখন সেখানে ওই আইনজীবী আসেন এবং যুবকের বিষয়ে কথা বলেন।

রামপুরা থানার আবুল হোটেলের সামনে ১৪ জুলাই রাতে ঘটে যাওয়া বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান। পোস্টে তিনি বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার দাবি জানান। একই দাবি করেছেন ভুক্তভোগী মোহাম্মদ জান্নাতও।

গাজী মোহাম্মদ জান্নাত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৪ জুলাই রাতে রামপুরা এলাকার আবুল হোটেলের সামনের ফুটপাত দিয়ে সাইকেল নিয়ে বাসায় যাচ্ছিলাম। রাত আনুমানিক ৯টার দিকে পেছন থেকে কয়েকজন এসে আমার গতিরোধ করে। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন পুলিশ এসে আমাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেন এবং বলেন আমার কাছে নাকি মাদক আছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আমাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।’ গাজী মোহাম্মদ জান্নাত বলেন, ‘আমি পল্টনে একটি অফিসে কাজ করি। শুক্রবার অফিস বন্ধ থাকায় সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলাম। তখনই এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হতে হলো।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি পাশেই ছিলাম। তখন একটি ছেলে (পরে জানতে পারি তার নাম গাজী মোহাম্মদ জান্নাত) পুলিশকে বলছে—স্যার, আমার কাছে কিছু নেই। আমার কাছে কোনও মাদক নেই। আমাকে চেক করে দেখেন। ছেলেটির কথায় কান না দিয়ে পুলিশ তাদের সোর্সের মাধ্যমে ছেলেটিকে গাড়িতে উঠাতে চাচ্ছিল। বিষয়টি আমার বিবেককে নাড়া দেয়। দেখতে পেলাম কেউ প্রতিবাদ করছে না। একজনকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাবে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে, এটা খুবই দুঃখজনক।’

তিনি বলেন, ‘আমি এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দেওয়ার পর পুলিশ ছেলেটির হ্যান্ডকাফ খুলে দেয়। এরপর তাকে তল্লাশি করে। এ সময় সেখানে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো লোক ছিল। এএসআই  মাহবুব ছেলেটির দেহ তল্লাশি করলেও কিছুই পাননি। পরে রামপুরা থানার এসআই  সজল সাহা এসে আমার সঙ্গে কথা বলেন এবং দুঃখ প্রকাশ করে। ছেলেটিকে তখন ছেড়ে দেওয়া হয়।’

তবে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমানের এই বক্তব্য ‘সত্য নয়’ দাবি করে রামপুরা থানার এসআই সজল সাহা বলেন, আমি একজনকে সিগন্যাল দেই। তখন একজন এসে আমার সঙ্গে কথা বলছিল। এ সময় পাশে আরেকটি ছেলে পুলিশকে দেখে দৌড় দেয়। আমার সঙ্গে থাকা এক এএসআইকে আমি বলি— ছেলেটি কেন দৌড় দিলো বিষয়টি দেখার জন্য। তখন সেই এএসআই আমাকে ফোনে আবুল হোটেলের পাশে ডাকেন। বলেন, সেখানে একটু সমস্যা হচ্ছে। সেখানে গিয়ে দেখি—একজন আইনজীবী উপস্থিত রয়েছেন এবং তিনি বলছেন, কী অপরাধে তাকে (গাজী জান্নাত) নিয়ে যাবেন।

এসআই সজল সাহা আরও বলেন, ‘হাতিরঝিল থানার ডাকাতি মামলার আসামি রানার সঙ্গে সাইকেলে রামপুরা কেএফসির সামনে একসঙ্গে আসে জান্নাত। তারপরই রানাকে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসা করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় জান্নাতকে থামতে বলা হলেও সে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। যদিও রানা ডাকাতি মামলার আসামি হিসেবে জামিনে রয়েছে, সেটা দেখতে পেয়েছি। এছাড়া রানার সঙ্গে জান্নাতের মোবাইলে ঘনঘন কথা হতো, এ বিষয়টিও আমাদের নজরে এসেছে।’

পুলিশ দাবি অনুযায়ী, ডাকাতি মামলার আসামির সঙ্গে জান্নাতের যদি সখ্য থাকতো, তাহলে হঠাৎ করে এসে অবৈধ জিনিস রয়েছে বলে হ্যান্ডকাফ কী কারণে পরালো— এমন প্রশ্ন তুলে প্রত্যক্ষদর্শী সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশের দাবি সত্য হলে ডাকাতি চেষ্টার মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে জান্নাতকে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে পারতো। অবৈধ জিনিস সঙ্গে রয়েছে— এটা বলতো না। পুলিশ নিজেদের বাঁচাতে এখন মিথ্যা বলছে। তারা নিজেরা এখন কথা সাজাচ্ছে। জান্নাতের সঙ্গে থাকা রানা ছেলেটির বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা ছিল এবং সে জামিনে রয়েছে— এটা যদি পুলিশ জানতোই, তাহলে এ ধরনের ঘটনার অবতারণা কেন করা হলো।’

ভুক্তভোগী গাজী মোহাম্মদ জান্নাত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে সাইকেল ছিল। আমি ফুটপাত দিয়ে যাচ্ছিলাম। পুলিশকে দেখে আমি দৌড় দেইনি। আমাকে পেছন থেকে আটকানো হয়েছে। আমার কাছে কোনও অবৈধ জিনিস ছিল না। তারপরও আমাকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়।’ পুলিশ নিজেরা তল্লাশি না করে সঙ্গে থাকা সোর্স দিয়ে আমার শরীর তল্লাশি করানো হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। জান্নাত বলেন, ‘আমি নিরাপত্তা শঙ্কায় রয়েছি। সেই রাতে আমাকে কোনও পুলিশ সিগন্যাল দেয়নি। সিগন্যাল দিলে আমি অবশ্যই দাঁড়াতাম।’

জানতে চাইলে মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হাইয়াতুল ইসলাম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একজনকে আটক করতে গিয়ে একটি ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। তবে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে আমাকে রিপোর্ট দেবেন।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
স্ত্রীর মামলায় কারাগারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
লক্ষ্মীপুরের মৌলভীরহাটে টিনের চাল কেটে দোকানে ঢুকে ৬ লাখ টাকার মালামাল চুরি
ডিএমপির মাসিক অপরাধ সভায় শ্রেষ্ঠ হলেন যারা
সর্বশেষ খবর
বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
ক্লাব বিশ্বকাপের দ্রুততম গোলের পর ম্যানসিটির শুভ সূচনা
ক্লাব বিশ্বকাপের দ্রুততম গোলের পর ম্যানসিটির শুভ সূচনা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পুনর্বহালের দাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পুনর্বহালের দাবি
নিষেধাজ্ঞার পর নিষেধাজ্ঞা, তবু থামছে না যমুনা-সচিবালয়কেন্দ্রিক আন্দোলন
নিষেধাজ্ঞার পর নিষেধাজ্ঞা, তবু থামছে না যমুনা-সচিবালয়কেন্দ্রিক আন্দোলন
সর্বাধিক পঠিত
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে হট্টগোল
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে হট্টগোল
আরও একমাসের ছুটিতে ২ বিচারপতি
আরও একমাসের ছুটিতে ২ বিচারপতি
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে রাশিয়ার লাভ-লোকসানের সমীকরণ
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে রাশিয়ার লাভ-লোকসানের সমীকরণ
‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে সমালোচনার ঝড়
‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে সমালোচনার ঝড়
আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা: ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদন
আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা: ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদন