জামিনে থাকা কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেফতারের ঘটনায় পটুয়াখালীর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায় অনুসারে, তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরে তদন্ত প্রতিবেদনসহ আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন হলফনামা করে আদালতে দাখিল করতেও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে রবিবার (১৩ আগস্ট) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে আশরাফুল হাওলাদারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা। দুই পুলিশ সদস্যের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
এর আগে জমিজমা নিয়ে মারামারির মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেওয়া মো. আশফুল হাওলাদারকে গ্রেফতারের ঘটনা নজরে আনলে গত ২০ মে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমানকে তলব করা হয়।
জামিনে থাকার পরও উদ্দেশ্যমূলক গ্রেফতার করে দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, জানতে রুল জারি করেন আদালত।
এ আদেশে গত ১৮ জুন আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান ওসি মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমান। কিন্তু আদালত আবেদন গ্রহণ না করে ২৩ জুলাই ফের আসতে বলেন। আর আশরাফুল হাওলাদারের আইনজীবীকে বলা হয়, বিটিআরসির কাছ থেকে ফোন কলের রেকর্ড নিয়ে আসতে।
গত ২৩ জুলাই দুই পুলিশ সদস্যের পক্ষে ফের নিঃশর্ত ক্ষমা চান তাদের আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান। আর কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল হাওলাদারের আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা জানান, বিটিআরসির কাছে কল রেকর্ড চেয়েও তিনি পাননি। পরে আদালতের নির্দেশে গত ২৪ জুলাই ফোন কলের বিষয়ে হলফনামা দাখিল করা হয়।
সে হলফনামায় আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা বলেন, গত ১৭ মে আসামি আশরাফুল হাওলাদারকে হাইকোর্ট থেকে জামিন করান। কিন্তু তার পর দিনই ১৮ মে রাত ৮টার দিকে পুলিশ মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেফতার করতে যায়। তখন আসামি তাকে ফোন দিয়ে বলে, লইয়ার সার্টিফিকেট দেখানোর পরও পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে আশরাফুলের ফোন দিয়ে গ্রেফতার করতে আসা এএসআইয়ের সঙ্গে কথা বলেন আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা। আইনজীবী পরিচয় দিয়ে গ্রেফতার না করার অনুরোধ করলেও এএসআই মিজানুর রহমান আশরাফুলকে ছাড়েননি। এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে আশরাফুলের আত্মীয়-স্বজনরা আইনজীবী আলী আহসান মোল্লার ফোনে পটুয়াখালী থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামানের মোবাইল নম্বর পাঠান। নম্বর পেয়েই ওসিকে ফোন দিলে ওসি ফোন ধরে মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন। পরদিন অর্থাৎ ১৯ মে আশরাফুলকে কোর্ট চালান করা হয়।
গত ৩০ জুলাই এ হলফনামা দেখার পর দুই পুলিশ সদস্যকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদেশের জন্য রাখেন হাইকোর্ট।