চতুর্থ দফায় বিএনপির দেওয়া অবরোধের প্রথম দিনে অন্যান্য দিনের মতোই ব্যস্ত ছিল সড়ক। সকালে যান চলাচল কিছুটা কম হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের পরিমাণও বাড়তে থাকে। অবরোধের কোনও প্রভাব পড়েনি পুরান ঢাকায়।
রবিবার (১২ নভেম্বর) সরেজমিন সদরঘাট ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গণপরিবহন, ব্যক্তিগত গাড়িসহ সব ধরনের যানবাহনের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল পুরান ঢাকার রাস্তায়।
বিএনপির দেওয়া প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের অবরোধে যান চলাচল কিছুটা কম থাকলেও পরবর্তীতে দেওয়া অবরোধের কোনও প্রভাব পড়েনি পুরান ঢাকায়। আজ অবরোধে রাস্তায় লোকসমাগম ও যানবাহনের চাপ পূর্বের ন্যায় চোখে পড়ার মতো। সবাই সবার কাজে ছুটে চলছে রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। অবরোধে স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মানুষ ও গাড়ি চালকদের মাঝে যেমন ভয় ও উৎকণ্ঠা কাজ করে, আজ তার ছিটেফোঁটাও ছিল না।
এদিকে চতুর্থ দফায় বিএনপির দেওয়া অবরোধের কথা জানেনই না অনেক বাস ড্রাইভার ও সাধারণ মানুষ। ভিক্টর ক্লাসিক বাসের ড্রাইভার শরীফ জানান, শুরুর দিকে অবরোধের কথা শুনে গাড়ি নিয়ে বের হতে কিছুটা ভয় লাগতো। গাড়ি মালিকরাও সাবধান করতো। কিন্তু এখন আর সেই ভয় নাই। আসল কথা হচ্ছে, অবরোধ আছে নাকি নাই সেটাই জানি না। আমাদের গাড়ি চালানো দরকার তাই গাড়ি চালাই। তাছাড়া এখনও কোনোরকম ভয়-ভীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। তাই এটা নিয়ে মাথাব্যথাও নাই।
এদিকে বাস ড্রাইভারদের প্রতিদিনই অবরোধ মনে করে গাড়ি চালানোর কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিহঙ্গ বাসের ড্রাইভার জামিল। তিনি বলেন, মালিক আমাদের বলছে প্রতিদিন গাড়ি চালাতে। এজন্য কখন যে অবরোধ আর কখন অবরোধ নাই সেটা বোঝা মুশকিল। বিহঙ্গের একটা বাস কিছুদিন আগে মালিটোলার কাছে কারা যেন পোড়াই দিছে। সে কারণে একটু ভয় কাজ করে, তবে রাস্তায় সবার যে রকম আসা-যাওয়া তাতে বোঝার উপায় নেই কবে অবরোধ আছে কবে নাই। আমরা রাস্তায় নামলেই যাত্রী পাই, তাই গাড়ি চালাই। আমাদের না পোষালে তো কোনও রিস্ক নিতাম না। তবে এটা সত্যি অবরোধের দিন ইনকাম একটু কম হয়।
বেসরকারি একটি কোম্পানির সুপারভাইজার পদে চাকরি করা সায়েম আহমেদ নামের এক কর্মজীবী বলেন, অবরোধ হলে গাড়ি চলাচল থাকে কম। কিন্তু এখন যে হারে গাড়ি চলাচল করছে কেউ বলতেই পারবে না আজ কি অবরোধ আছে নাকি নাই। টিভিতে শুনে অবরোধের যে পরিস্থিতির কথা কল্পনা করি বাস্তবে তার ধারেকাছেও নাই। চারদিকে স্বাভাবিক গাড়ি চলাচল দেখে আমি নিজেই কনফিউজড হয়ে যাই আজ অবরোধ আছে নাকি নাই।
সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চললেও বাসে চলাচল করা কিছু যাত্রীর মাঝে ভয় ও শঙ্কা দুটিই কাজ করে। মুনতাহা শারমিন মৌ নামের মাস্টার্স পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, শুরু থেকেই হরতাল অবরোধের মধ্যে আমাদের পরীক্ষা চলছে। ভেবেছিলাম হয়তো আসা যাওয়াতে সমস্যা হবে। এই ভেবে পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টা আগেই হলে উপস্থিত থাকতাম। এখনও তাই করি, কখন যে কি দুর্ঘটনা ঘটে তা তো আর বলা যায় না।
তবে সব জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণ গণপরিবহন না থাকার কথা জানান বেশ কয়েকজন যাত্রী। তাদের মধ্যে ফয়সাল নামের স্নাতক পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী জানান, পরীক্ষার দিন অবরোধ থাকলে তুলনামূলক গাড়ি কম পাওয়া যায়। তখন সিএনজি বা রিকশা ব্যবহার করতে হয়। এই সুযোগে তারাও বেশি ভাড়া রাখে। মজার বিষয় হচ্ছে আসতে কিছুটা সমস্যা হলেও যেতে কোনও সমস্যা হয় না। কারণ অবরোধে সবসময় সদরঘাট থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল। যেকোনও সময় এখান থেকে বাসে ওঠা যায়।