রাজধানীর ইস্কাটনে সড়কে ট্রাকচাপায় নিহত হন সাবেক দুই ছাত্রনেতা। কিন্তু দুর্ঘটনার ২৩ দিন পেরিয়ে গেলেও, চাপা দেওয়া ট্রাকটিকে এখনও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এর আগে ঘটনার পরদিন ৮ নভেম্বর অজ্ঞাতনামা চালককে আসামি করে হাতিরঝিল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সজিব কোচ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ট্রাকটিকে শনাক্ত করতে আমরা আশপাশের কিছু সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেছি। সেখানে দেখা গেছে, তাদের চাপা দেওয়া ট্রাকটি মগবাজার মোড়ে গিয়ে আড়াল হয়ে যায়। এরপর ডিএমপির লাগানো যে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, সেগুলো কাজ করছে না। এরপর কিছু দেখতে পাইনি।
তিনি আরও বলেন, এর আগে আমরা ট্রাকটি দেখতে পেলেও ট্রাকটিতে লাগানো যে নম্বর প্লেট রয়েছে, তা স্পষ্ট দেখা যায়নি। ধারণা করছি ট্রাকটিতে কোনও নম্বর প্লেটই নেই। বর্তমানে হরতাল অবরোধের কারণে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় এই মামলার পেছনে কাজ করতে দেরি হচ্ছে। তবে আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। সব জানার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
উল্লেখ্য, ৭ নভেম্বর দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার সময় ইস্কাটনে বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান আরিফুল ইসলাম (৪০) ও সৌভিক করিম (৪২)।
নিহত আরিফুল ইসলাম বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি প্রকাশনা সংস্থা ইউপিএলের বিপণন বিভাগে কাজ করতেন।
বাইকের অপর আরোহী সৌভিক করিম ছিলেন ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। সংগীতশিল্পী-কম্পোজার হিসেবেও পরিচিতি ছিল তার। আরিফুল নিউ ইস্কাটন ও সৌভিক মগবাজারে থাকতেন।
এর আগে দুর্ঘটনার পর তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সজীব বলেছিলেন, আমাদের সংগ্রহ করা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তাদের বহন করা মোটরসাইকেলটি বাঁ দিকে গিয়ে ট্রাকটিকে অতিক্রম করে। এ সময় তারা ট্রাকের সামনে চলে গিয়ে ডানে মোড় নেওয়ার সময় চাপা পড়েন। পরে ট্রাকটি মগবাজারের দিকে চলে যায়।
এদিকে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন। আরিফুল ইসলাম ও সৌভিক করিমের দুর্ঘটনা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়ে সংগঠনের নেতারা বলেছেন, আরিফুল ইসলাম ও সৌভিক করিম সমাজের মঙ্গল নিয়ে চিন্তা ও কাজ করতেন। আরিফুল ইসলাম ছিলেন ছাত্ররাজনীতির এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ছাত্ররাজনীতির ধারাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই করেছেন। তিনি গণসংহতি আন্দোলনে যুক্ত হয়ে গণমানুষের রাজনীতি, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পাশাপাশি তিনি মননশীলতার চর্চায় ভূমিকা রাখতে প্রকৃতি-পরিচয় প্রকাশনা এবং ইউপিএলে যুক্ত হয়ে জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণে ভূমিকা রেখেছেন।
আরিফুল ইসলামের বন্ধু ও রাজনৈতিক সহকর্মী মাহবুব ইরান বলেন, আরিফ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় তরুণ রাজনীতিক ছিলেন। এটি কোনও দুর্ঘটনা নয়, রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনাজনিত হত্যাকাণ্ড; যে মৃত্যু কারও কাম্য নয়।
সৌভিক করিমের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলেছেন, পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। পাশাপাশি তার সংগীতচর্চা ও লেখালেখি অব্যাহত রাখেন। তরুণ বয়সেই সংগীতচর্চায় উজ্জ্বল অবদান রেখেছেন। তার রচিত গান বাংলা সিনেমার সর্বকালের সেরা ১০০টি গানের ভেতর জায়গা করে নিয়েছে। আরিফুল ও সৌভিক জীবনের পুরোটা সময় মানুষের জীবনকে নিরাপদ করার সংগ্রাম করে গেছেন। আমরা তাদের উত্তরসূরি হিসেবে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাবো।
নিহত আরিফুল ইসলামের বাবা খায়রুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকে আরিফ অত্যন্ত মেধাবী ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তার লক্ষ্য ছিল প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদ হওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন কেড়ে নিল ঘাতক ট্রাক।