কেউ সকাল ৭টায়, কেউ ১০টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য নেওয়ার জন্য। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়ালেও পণ্যবাহী ট্রাক আসে দুপুর ১টায়। তখনই হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায় অপেক্ষমাণ ক্রেতাদের মধ্যে। পরে তাদের সুশৃঙ্খলভাবে সারিবদ্ধ করতে নিতে হয় পুলিশের সহায়তা।
হুড়োহুড়ির মূল কারণ হচ্ছে পেঁয়াজ, যেটি বর্তমানে বাজারের সবচেয়ে আলোচিত ও উচ্চ মূল্যের পণ্য।
ক্রেতারা জানান, ৫৪০ টাকার পণ্যের সঙ্গে দুই কেজি পেঁয়াজ পাচ্ছেন তারা। এর সঙ্গে রয়েছে আলু, তেল ও ডাল। কিছুটা কম দামে এসব পণ্য হাতছাড়া করতে রাজি নন টিসিবির কার্ডধারীরা।
সোম ও মঙ্গলবার (১১ ও ১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর মালিবাগ ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সরেজমিন টিসিবির পণ্য নেওয়ার এসব চিত্র দেখা যায়।
মালিবাগে টিসিবির পণ্য নিতে স্বল্প আয়ের মানুষের ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্বল্প আয়ের মানুষের সঙ্গে তুলনামূলক সচ্ছল পরিবারের মানুষও এই পণ্য নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে টিসিবির পণ্য সংগ্রহ নিয়ে অনেকে জানিয়েছেন অভিযোগ।
পণ্য নিতে আসা গৃহপরিচারিকা রাহেলা বেগম বলেন, আমরা কাজ করে খাই। কিন্তু এখানে পণ্য নিতে হলে আমাদের সকাল থেকে লাইনে দাঁড়াতে হয়, ট্রাক আসে দুপুরে। আমাদের সারা দিন এখানেই শেষ হয়ে যায়। কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারি সত্য, কিন্তু আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়।
আরেক ক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখানে আসি কম দামে জিনিসপত্র কিনতে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কোনও একটা জিনিস আমাদের কিনতে দেয় না। আমি যদি পেঁয়াজ কিনতে আসি, আমাকে অন্য সব পণ্যও কিনতে হবে। শুধু পেঁয়াজ আমরা কিনতে পারি না। এখন যদি আমাদের তেল-ডাল দরকার নাও থাকে, তাও এগুলো কিনতে হয়। তাহলে লাভ কী হলো আমাদের? খরচ তো আমাদের হয়েই যাচ্ছে।
শ্রমজীবী আব্দুল কাদের অভিযোগ করে বলেন, আমরা এখানে কম দামে জিনিসপত্র কিনতে আসি। কিন্তু এত দেরি হলে আমাদের কাজের সময় এখানেই শেষ হয়ে যায়। আমার এক বেলা কাজ বন্ধ হলেই তো লস হয়।
আনন্দবাজার থেকে আসা নীলা গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। টিসিবির পণ্য নিতে সকাল ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। বলেন, সকাল ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে বেলা ৩টায় কিনতে পেরেছি। তাও ভালো, এই টাকায় এত জিনিস এখন পাওয়া যায় না। পেঁয়াজের কেজিই তো এখন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। অন্য জিনিস তো আছেই। সরকার এভাবে আলু-পেঁয়াজ না দিলে আমরা চলতে পারতাম না। এটা অনেক ভালো কাজ করেছে।
সকাল ১০টা থেকে পণ্য নিতে অপেক্ষা করছিলেন রহিমা বেগম। তিনি বলেন, আমরা এখানে এসে টোকেন নিয়েছি। এখন কেনার অপেক্ষায় আছি।
টিসিবি থেকে সবসময় কেনেন কিনা এবং কেন কেনেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রায়ই এখান থেকে কিনে নিয়ে যাই। আমাদের তো তেমন আয়-উপার্জন নাই। তার মধ্যে সবকিছুর দাম বেশি। এখান থেকে কিনলে আমরা কম দামে কিনতে পারি।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী মোজাম্মেল হোসেন কম দামে টিসিবির পণ্য কিনতে দাঁড়িয়েছিলেন লাইনে। তিনি বলেন, আমি এসেছি কেরানীগঞ্জ থেকে। কম দামে কিছু জিনিস কিনতে পারবো, তাই এসেছি।
সবাই বলছেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। তাই টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকে মানুষের লাইন দিন দিন বড় হচ্ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে হলেও এসব পণ্য হাতছাড়া করতে চান না তারা। কারণ, বাড়তি দামে পণ্য কেনার সাধ্য অনেকেরই নেই।
দেরি করে আসায় টিসিবির পণ্য কেনার টোকেন পাননি আব্দুর রহিম নামের এক ব্যক্তি। তবু তিনি লাইনে ছিলেন পাওয়ার আসায়। তিনি বলেন, আমার আসতে দেরি হয়ে গিয়েছে। তাই এসে টোকেন নিতে পারিনি। তবু লাইনে দাঁড়িয়েছি। যদি তারা আমাকে কেনার সুযোগ দেয়, তাহলে কিছু কিনে বাড়ি ফিরতে পারবো।
টিসিবির পণ্য বিতরণকারী মো. শহিদুল্লাহ বলেন, আমরা ৫৪০ টাকায় একটি প্যাকেজে চার ধরনের পণ্য দিচ্ছি। দুই কেজি পেঁয়াজ (ভারতীয়), চার কেজি আলু, দুই কেজি ডাল (মোটা) আর দুই লিটার রাইস ব্র্যান তেল দিচ্ছি। আমাদের তেলটা পরিবর্তন হয়। কখনও সয়াবিন তেল দিই, কখনও রাইস ব্র্যান্ড দিই।
তিনি আরও বলেন, এখন বাজারে দুই কেজি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৪০০ টাকা, চার কেজি আলুর দাম ২০০ টাকা, দুই কেজি মোটা মসুর ডাল ২৩০ টাকা, দুই লিটার রাইস তেলের দাম ৪০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে ১ হাজার ২৩০ টাকার পণ্য ক্রেতারা পাচ্ছেন ৫৪০ টাকায়।