যাত্রী সেজে গাড়ি ভাড়া নিতো ‘মামা পার্টি’ নামে একটি চক্র। সেই গাড়ি চালাতো চক্রের সদস্যদেরই একজন। ছিনতাইয়ের জন্য উপযুক্ত ও নির্জন রুটে গাড়ি চালানো হতো। এ ক্ষেত্রে রাত ৩টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে যেকোনও সময়কে বেছে নিতো। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১-২ কিলোমিটার পরপর বাছাই করা স্থান থেকে যাত্রী উঠানো হতো। এরপর নির্জন স্থানে গাড়ি থামিয়ে অস্ত্র ও চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে যাত্রীদের কাছে থেকে মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিতো চক্রের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন।
এর আগে, সোমবার দিবাগত রাতে ওই চক্রের মূল হোতাসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব-১০। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো– মো. রানা ওরফে মো. শাহীন ওরফে শাহীন রানা (৪৯), মো. মফিজুল ইসলাম ওরফে মো. ইসলাম ওরফে ইসলাম মিয়া (৪৮), মো. সাগর ওরফে হাবিবুর রহমান শেখ ওরফে মো. হাবিব (৫১), মো. ফারুক আহমদ ওরফে মো. ফারুক মিয়া ওরফে মো. ফারুক (৩৪) ও মো. আবুল কালাম (৫৩)।
তাদের কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি হাইস গাড়ি ও একটি করোলা প্রাইভেটকার, একটি হাতকড়া, চেতনানাশক ওষুধ, দুটি সুইচ গিয়ার চাকু, দুটি স্টিলের চাকু, একটি ক্ষুর, ছয়টি টাচ মোবাইল ফোন, পাঁচটি বাটন মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘গত বছরের ২৬ জুন ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায় মো. শাহিন রানাসহ অন্য আসামিরা যাত্রী সেজে সাদ্দাম শেখ নামে একজনের ইজিবাইক ভাড়া করে। সুযোগ বুঝে চালক সাদ্দামকে মারধর করে তারা। এক পর্যায়ে চেতনানাশক ওষুধের মাধ্যমে তাকে অচেতন করে একটি মেহগনি বাগানে ফেলে রেখে ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘২৬ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাদ্দাম শেখ। পরে ইজিবাইক ফেরত দেওয়ার কথা বলে আসামিরা নিহতের পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিকাশে ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে।’
মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘ওই হত্যার ঘটনা তদন্তকালে চক্রটি সম্পর্কে জানা যায়। চক্রের মূল হোতা শাহিন রানা। এর সক্রিয় সদস্য ১০ জন। চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে আসছিল।’
তিনি বলেন, ‘চক্রের সদস্যরা কখনও আসামি মফিজুলের প্রাইভেটকার ব্যবহার করতো। কখনও তার মাধ্যমে অন্য কোনও প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাড়া নিতো। এরপর মফিজুল এসব গাড়ি চালাতো। শাহিন যাত্রী সেজে মফিজুলের পাশে বসে থাকতো। অন্যান্যরা তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচিত রুটে ১-২ কিলোমিটার পরপর অবস্থান করতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবাই একত্রিত হওয়ার পর কখনও দেশি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের মারধর করতো। এভাবে চেতনানাশক ওষুধের মাধ্যমে অচেতন করে যাত্রীদের কাছে থাকা সবকিছু লুটে নিতো। পরে ভুক্তভোগীকে তাদের সুবিধাজনক যেকোনও নির্জন স্থানে ফেলে রেখে পালিয়ে যেতো।’
গ্রেফতার ব্যক্তিদের পরিচয়
গ্রেফতার শাহিন রানা মামা পার্টির দলনেতা। শাহিন ২০০০ সালে একটি চুরির মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে পাঁচ বছর কারাভোগ করে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ পাঁচটি মামলা রয়েছে।
মফিজুল ইসলাম পেশায় একজন গাড়ি চালক। সে বিভিন্ন কোম্পানির গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিল। সে বিভিন্ন ব্যক্তির গাড়ি ভাড়া করে অপরাধ করে আসছিল। পরে সে মলম পার্টি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক মামলাসহ তিনটি মামলা রয়েছে।
সাগর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতো। এ পেশার আড়ালে সে মামা পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিল। তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যা চেষ্টাসহ চারটি মামলা রয়েছে।
গ্রুপের আরেক সদস্য ফারুক আহমদ। তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই ও ডাকাতির দুটি মামলা রয়েছে। এছাড়া আবুল কালাম পেশাদার গাড়িচালক। সেও গাড়ি চালানোর আড়ালে চক্রের সঙ্গে মিশে ছিনতাই করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর কদমতলী থানায় একটি ছিনতাই মামলা রয়েছে।