X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াসার ‘নিয়ম ভাঙার সুবিধায়’ বদলে গেলো যাদের জীবন

আবির হাকিম
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:৪১

ঢাকায় যাদের জমি বা ভবনের মালিকানা নেই, নিয়ম অনুযায়ী তাদের বৈধ পানির সংযোগ দিতে পারে না ওয়াসা। এ নিয়মের কারণে সুপেয় পানির অভাবে নানা রকম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছিলো ঢাকার বস্তিবাসীদের। তবে এ নিয়ম পাশ কাটিয়ে বস্তিগুলোতে পানির সংযোগ দেওয়ার পর বদলে গেছে সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান।

ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, বৈধ উপায়ে সংযোগ দেওয়ার সুযোগ না থাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা সিন্ডিকেট করে ওয়াসার পানি চুরি করে অনেক দামে বিক্রি করছিল। এ সমস্যা সমাধানে লো ইনকাম কমিউনিটি (এলআইসি) নামে শাখা খুলে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় ২০১৩ সাল থেকে বস্তিগুলোতে পানি সরবরাহ শুরু করে ওয়াসা। এখন পর্যন্ত এ শাখার অধীনে ৯ হাজারের বেশি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি সংযোগ থেকে ছয় থেকে আটটি পরিবার পানি পায়।

ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায় জানান, স্বল্প আয়ের এই মানুষের রাজধানীর যেসব এলাকায় থাকছেন, সেসব জায়গার মালিক সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান। তাদের যায়গায় তো আমরা পানির লাইন দিতে পারি না। এ কারণে আমরা ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটারি নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) সঙ্গে একটা চ্যানেল করে প্রথমে তাদের পানি দেওয়ার চেষ্টা করি।

নতুন বসানো পানির কল পরিদর্শনে এনজিও কর্মকর্তারা (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

বস্তিতে পানি সরবরাহ করার প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে উত্তম কুমার জানান, তখন আমরা এনজিওগুলোর সহযোগিতা নিলাম, ইউনিসেফ অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিল। প্রথমে সরাসরি সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলাম। পরে দেখলাম এই পদ্ধতি ফিট না। পরে কমিউনিটি বেসড অর্গানাইজেশন দাঁড় করিয়ে তাদের নেতৃত্বে সংযোগ দিলাম। তারা নেতৃত্ব দেয় এবং পাশাপাশি এনজিওর লোক আছে, তারা কাজ করে। আর আমরা সরকারের পক্ষে সাপোর্ট দেই। যার ফলে জিও-এনজিও-সিবিও মডেলের মাধ্যমে মূলত চলছে।

সরেজমিনে রাজধানীর কড়াইল বস্তি ঘুরে দেখা গেছে, বস্তির বিভিন্ন ব্লকে ক্লাস্টারভিত্তিক পনির সংযোগ দেওয়া হয়েছে যেখানে প্রতিটি সংযোগ থেকে ছয় থেকে আটটি পরিবার পানি নিতে পারে। এতে করে পানির জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানো বা কোনও প্রকার ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না তাদের।

বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে মহল্লার মাস্তানেরা চোরাই লাইনের পানি এনে বিক্রি করতো। তখন প্রতি কলসি পানি পাঁচ টাকা করে কিনতে হতো। সেখানে পানি কেনার জন্যও বিশাল লাইন পড়ে যেতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় যেতো সেখানে। ছোটো বাচ্চাদের নিয়ে মায়েরা নানান বিপদে পড়তে হতো। এই পানির জন্য যৌন হয়রানির মতো ঘটনাও ঘটেছে। এসব বস্তিতে আগে পানির জন্য প্রায় প্রতিদিনই মারামারি লেগে যেতো

কড়াইল বস্তির বউ বাজারসংলগ্ন ক-ব্লকের বাসিন্দা মৌসুমি আক্তার বলেন, পানির জন্য একসময় প্রতিদিন মারামারি করা লাগতো। কলসে করে পানি এনে ড্রামে জমাতে হতো। এমনও সময় ছিল পানির জন্য রান্না, বাথরুমে যাওয়া বন্ধ হয়ে যেত। এখন আমার ঘরের সামনেই পানির লাইন। তখনকার জীবন আর এখনকার জীবন একদম আলাদা মনে হয়।

সিবিও নেতা এবং বস্তিতে কাজ করা এনজিওগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুপেয় পানির সংযোগ আসার পর থেকে বস্তি এলাকায় নানাবিধ রোগ বালাই কমে আসতে শুরু করলো। এক সময় দূষিত পানির কারণে বস্তির রোগী দিয়ে কলেরা হাসপাতাল ভরে যেতো। বস্তির খোলা যায়গায় বেড দিয়েও চিকিৎসা করতে হয়েছে। পচা পানি, ময়লা পানি, লাইন লিকেজ করে ময়লা পানি দেওয়ার কারণে এসব পানি থেকে সংক্রমণ দেখা দিত।

সুপেয় পানির সংযোগ আসার পর থেকে বসতি এলাকায় নানাবিধ রোগবালাই কমে আসতে শুরু করেছে

বেসরকারি সংস্থা দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) পরিচালক (ওয়াশ) মো. আবদুল হাকিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এসব বসতির লোকেরা যখন বৈধ পানি পেলো তাদের পানিবাহিত রোগ কমে গেলো। তারপরে এসব ফ্যামিলির ইনকাম বেড়ে গেলো। খোঁজ নিয়ে দেখা গেলো যেই নারী এখানে কয়েক ঘণ্টা কলস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন, তিনি ঘরের কাছে পানি পাওয়ার কারণে এই সময়ে কোনও একটা বাসায় কাজ করতে পারছেন। গার্মেন্টসে কাজ করতে পারছেন। বসতির অনেক ছেলেমেয়ে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। এগুলোর সবকিছুর পেছনে কিন্তু এই পানির লাইনের ভূমিকা আছে।

পানির সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) এ কে এম শহীদ উদ্দিন জানান, বস্তি এলাকায় আমরা পানির সংযোগ দেওয়ার কয়েক বছর পর কয়েকটা এনজিও আসছে তারা গ্যাস দিতে চায়, বিদ্যুৎ দিতে চায়। তারা বলছে ওয়াসা যেভাবে পানি দিচ্ছে কীভাবে সম্ভব। এটাতো বেআইনি। আবার তারা ঠিকভাবে বিলও পাচ্ছে, টাকা আদায় হচ্ছে, বকেয়া পড়ছে না। এই একই মডেলে বসতির লোকজন এখন বিদ্যুৎও পেয়েছে, গ্যাসও পেয়েছে। এর ফলে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে ব্যাপক আকারে।

/এফএস/ 
সম্পর্কিত
গুলিস্তানে দুই জনের মৃত্যু, সন্দেহ ‘হিট স্ট্রোক’  
শ্রমজীবী মানুষের মাঝে স্যালাইন ও পানি বিতরণ মহানগর আ. লীগ নেতার
এসি বিক্রি বেড়েছে তিনগুণ, অনেক ব্রাঞ্চে ‘স্টক আউট’
সর্বশেষ খবর
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ