বাংলা ট্রিবিউনে সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে ড্রেনে আটকে থাকা তিনটি কুকুরের মধ্যে একটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কোনও সহযোগিতা না পেয়ে ব্যক্তি উদ্যোগেই কুকুরটি উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (১১ জুন) বেলা ৩টার দিকে কুকুরটিকে ড্রেন থেকে তোলা হয়। ১০ দিন পর ড্রেন থেকে ওঠার পর রাস্তাতেই দীর্ঘক্ষণ শুয়ে ছিল কুকুরটি। প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবার খাওয়ানোর পর কুকুরটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কুকুর উদ্ধার তৎপরতায় কাজ করেছেন পুরান ঢাকার একদল স্বেচ্ছাসেবী। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বিপদে পড়া প্রাণীদের নিজস্ব অর্থায়নে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
এদিকে কুকুরটি উদ্ধার করার পর স্থানীয়দের প্রশংসায় ভাসছেন উদ্ধারকারীরা। কলতাবাজারে স্থানীয় বাসিন্দা বশির উদ্দিন বলেন, এটা নিঃসন্দেহে একটা মহৎ উদ্যোগ। যেখানে দায়িত্বরত কেউ এগিয়ে আসেনি সেখানে কয়েকটি ছেলেমেয়ে নিজ দায়িত্বে এই কুকুরটি উদ্ধার করে সমাজের সুনাগরিকের পরিচয় দিয়েছে। এমন কাজের জন্য তাদের অনেক ধন্যবাদ।
কুকুর উদ্ধার কাজের সময় এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন পুরান ঢাকার স্বেচ্ছাসেবী শেখ সানাম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, বাংলা ট্রিবিউনে নিউজ দেখার পর নিজেই উদ্যোগ নিয়েছি কুকুরগুলো উদ্ধারের। গত দুই দিন ধরে আমি ঘটনাস্থলে এসে কুকুরগুলোকে খাবার দিতে থাকি এবং ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুকুরগুলকে উদ্ধারের জন্য সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। তারপর আজ উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়।
শেখ সানাম আরও বলেন, এই উদ্ধারকাজে আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন। তারা হলেন শাহাদাত হোসেন হৃদয়, প্রমি, তুষার, অঝোরা, নিটল এবং অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অব বরিশালের তুবা নাহার। স্থানীয়রাও সহযোগিতা করেছেন। আমরা একটি কুকুর উদ্ধার করেছি। বাকিগুলোকে পারিনি। ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা পেলে আমরা বাকি কুকুরগুলোও উদ্ধার করতে পারতাম।
কলতাবাজারে সিফাত আহমেদ নামের একজন বাসিন্দা বলেন, কুকুরগুলো উদ্ধার করতে যখন ড্রেনে নামা হয় তখন ভয়ে কুকুরগুলো দূরে সরে যায়। এই এলাকাটি অত্যন্ত ব্যস্ত এলাকা। গাড়ির আওয়াজ ও মানুষের কোলাহল সবসময় এখানে বিরাজমান। যার কারণে দিনে কুকুরগুলো আতঙ্কে থাকে। যদি রাতের বেলায় উদ্ধারকর্মীরা আসতো এবং ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা পেতো তাহলে সহজেই কুকুরগুলো উদ্ধার করা যেত।
কুকুর উদ্ধার শেষে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা দু'জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী আসেন। কিন্তু উদ্ধার অভিযানে তাদের কোন সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করেন স্বেচ্ছাসেবীরা। বাংলা ট্রিবিউনকে মজিদ নামের একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, আমরা এর আগেও চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। কুকুরগুলো এপাশ থেকে দৌড়ে অন্যপাশে চলে যায়। এই কাজে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা পেলে সুবিধা হতো।
এদিকে কলতাবাজার খাদ্য গুদামের যেই নালা দিয়ে কুকুরগুলো ড্রেনে পড়েছে বলে জানা যায় সেই ড্রেনটি এখনও উন্মুক্ত অবস্থা পড়ে আছে। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা বারবার বলার পরেও খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ সেই ড্রেনের মুখে এখনও কিছু দেয়নি। সেখানে যদি একটা নেট বা জাল দিয়ে দিত তাহলে পানি ছাড়া আর কিছু ড্রেনে পড়ত না।
পরবর্তীতে স্থানীয়দের তোপের মুখে কলতাবাজার খাদ্য গুদামের নিরাপত্তা কর্মী বাংলা ট্রিবিউনকে শিগগিরই ড্রেনের উন্মুক্ত জায়গায় জাল লাগানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন- ড্রেনে আটকে আছে ৩ কুকুর, ফায়ার সার্ভিস বললো ‘এটা আমাদের কাজ না’