জলবায়ু ও নগরায়ণের কারণে পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রবণতা গ্রাম ও শহরে ওয়াশ ঝুঁকির হটস্পটগুলোর বিস্তার ঘটাচ্ছে। এমন সময় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও ওয়াশ খাতে বরাদ্দ ২২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে। এটা গুরুতর উদ্বেগের কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ওয়াশ বরাদ্দ ২০২৩-২৪ অর্থবছর অনুযায়ী পুনরুদ্ধারের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ধানমন্ডিতে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ওয়াটারএইড যৌথভাবে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ‘বহু বছরের বাজেট-ট্র্যাকিং’ গবেষণা থেকে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ওয়াটারএইডের সহায়তায় পিপিআরসি এই গবেষণা চালায়। অর্থনীতিবিদ এবং পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের প্রোগ্রামস অ্যান্ড পলিসি অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর পার্থ হেফাজ শেখের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাজেট-ট্র্যাকিং অনুশীলনটি গ্রাম ও শহরের পাশাপাশি ওয়াসা এবং সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে ক্রমাগত বরাদ্দের বৈষম্য দেখায়। তবে বিভিন্ন ধরনের প্রান্তিক এলাকার মধ্যে আগের বৈষম্যগুলি সমাধানের একটি প্রচেষ্টা করা হয়েছে। এই বৈষম্য মোকাবিলার জন্য প্রকল্প-ভিত্তিক বরাদ্দের পর্যালোচনার সুপারিশ করা হয়। নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অপর্যাপ্ত পানি এবং স্যানিটেশন পরিষেবার দ্বারা অসমভাবে প্রভাবিত হন। এই সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীগুলিকে লক্ষ্যযুক্ত পরিষেবা দিতে একটি বৈচিত্র্যকেন্দ্রিক পদ্ধতির প্রয়োজন। দূষণ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতে নগরায়ণের জন্য নিরাপদে পরিচালিত অন-সাইট স্যানিটেশন পরিষেবাগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) যুগের বিপরীতে, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল্ডস (এসডিজি) যুগের জন্য শহরগুলোতে ফেকাল স্লাজ ম্যানেজমেন্ট (এফএসএম) এবং গ্রামীণ এলাকায় নগরায়ণে নিরাপদ সাইট স্যানিটেশন পরিষেবা প্রয়োজন। সরকারের ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ এই উদ্যোগগুলির জন্য উল্লেখযোগ্য সংস্থান বরাদ্দ করা উচিত। টেকসই পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও স্যানিটেশনের জন্য বেসরকারি খাতের উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ। নতুন ওয়াশ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রযুক্তি এবং সর্বোত্তম অনুশীলন গ্রহণে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা বৃদ্ধি অপরিহার্য। অতীতের প্রচারাভিযানের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে এফএসএম, টেকসই পানি সমাধান এবং অন্যান্য ওয়াশ-সম্পর্কিত অনুশীলনের বিষয়ে সচেতনতার ব্যবধান পূরণ করতে রাজনৈতিক ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত একটি বৃহৎ পরিসরের প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান জানান, করোনা-পরবর্তী যুগে স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাধিকারে একটি তীব্র পতন দেখা গেছে। অর্থাৎ বরাদ্দ ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ কমে গেছে। টেকসই অগ্রগতির জন্য বর্ধিত তহবিল, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা অত্যাবশ্যক। ইতিবাচক দিক হলো, ওয়াশের উদ্বেগ মোকাবিলায় জলবায়ু অর্থায়নের একটি নতুন সুযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ওয়াশ-সংশ্লিষ্ট ২৫টির মধ্যে ১৩টি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই নির্দিষ্ট ওয়াশ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রকল্প প্রণয়নে সক্রিয় হয়েছে। বাকি মন্ত্রণালয়গুলোকেও দ্রুত গতিতে নামতে হবে।
তিনি বাজেট পরিকল্পনায় ওয়াশের ওপর ফোকাসকে দুর্বল না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।