২০২০ সালে ২৯ জুন সদরঘাটের শ্যামবাজার এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ‘মর্নিং বার্ড’ ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার ঘটনায় লঞ্চটির ৩৪ যাত্রী মারা যান। এ ঘটনায় ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ সাত জনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করে নৌ-পুলিশ। মামলা দায়েরের চার বছর পার হলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার। তবে রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশা, এই বছরই মামলাটির বিচার শেষ হবে।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ শেখ হেলাল উদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন। মামলাটি আসামিদের সাফাই সাক্ষ্যের জন্য রয়েছে। আগামী ৪ জুলাই মামলাটির পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমাদ্দার বলেন, ‘মামলাটির শুরু থেকে রাষ্ট্রপক্ষ খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। মামলাটি যেন দ্রুত শেষ করা যায়, রাষ্ট্রপক্ষ সেই চেষ্টাটাই করছে। ইতোমধ্যে ৪২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি শেষ হয়। আসামিরা এখন নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিচ্ছেন। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে। তারপর আদালত এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। আশা করছি, এ বছরের মধ্যে মামলার রায় ঘোষণার তারিখ দেবেন আদালত।’
মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষের কাজ অনেকটাই শেষ পর্যায়ে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আসামিদের জেরা আর যুক্তিতর্ক বাকি আছে রাষ্ট্রপক্ষের। সাক্ষ্যে একটা বিষয় মোটামুটি উঠে এসেছে, ময়ূর-২ লঞ্চটি দ্রুত গতিতে ঘাটে যাওয়ার সময় মর্নি বার্ডকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দেয়। এ কারণে এতগুলো প্রাণ গেছে। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, তাদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে।’
এদিকে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদসহ অন্যান্য আসামিপক্ষের আইনজীবী সুলতান নাসের বলেন, ‘মোসাদ্দেক হানিফ তো লঞ্চের মালিক। তার টাকা আছে, ব্যবসা করছেন। যাত্রীদের সেবা করেন। মালিক তো আর ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। মালিকের অপরাধ, তিনি লঞ্চের মালিক। তার সনদ আছে, তারপরও মামলায় জড়ানো হয়েছে। ট্রায়াল ফেস করছি। আশা করি, সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হবো।’
মামলাটিতে সাক্ষ্য শেষে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানিও হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘এখন আসামিদের সাফাই সাক্ষ্য চলছে। যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণা করবেন আদালত। মামলায় ৩৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছে। কোনও চাক্ষুষ সাক্ষী নেই। বড় লঞ্চ ছোট লঞ্চকে ধাক্কা দিয়েছে কেউ বলেনি। আর আসামিরা এখন নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, লঞ্চের স্টাফ না। আবার কেউ বলছেন লঞ্চে ছিলেন না। কেউ নারায়ণগঞ্জ ছিলেন। আবার কেউ ছুটিতে ছিল। আশা করছি, আসামিদের নির্দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হবো।’
২০২০ সালের ২৯ জুন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড নামে ওই লঞ্চ সদরঘাটে পৌঁছানোর আগে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। দুর্ঘটনায় মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার পরের দিন ৩০ জুন রাতে নৌ-পুলিশের সদরঘাট থানার এসআই মোহাম্মদ শামসুল বাদী হয়ে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ সাত জনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট নৌ-থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শহিদুল আলম ১১ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
আসামিরা হলেন, ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদ, মাস্টার আবুল বাশার মোল্লা, সহকারী মাস্টার জাকির হোসেন, চালক শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, সুকানি নাসির হোসেন মৃধা, গিজার হৃদয় হাওলাদার, সুপারভাইজার আব্দুস সালাম, সেলিম হোসেন হিরা, আবু সাঈদ ও দেলোয়ার হোসেন সরকার। আসামিরা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। বর্তমানে সবাই জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
আরও পড়ুন:
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি: ময়ূর-২ লঞ্চকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে
লঞ্চ দুর্ঘটনার কারণ কী, দায়ী কারা জানাননি নৌ প্রতিমন্ত্র
লঞ্চ দুর্ঘটনা এড়াতে তদন্ত কমিটির ২০ সুপারিশ
মুহূর্তে তলিয়ে যায় ‘মর্নিং বার্ড’
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি: এমভি ময়ূরের মালিকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা