রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের এক জুয়েলারি দোকানের ৫৯ ভরি স্বর্ণ চুরি করে দোকান কর্মচারী হিমেল মিয়া (২০)। পরে সেই সোনা গলিয়ে তিন টুকরো করে হিমেলের বন্ধু ও তার স্ত্রী। সেই টুকরোগুলো নিয়ে তিন জন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে চলে যায় এবং সোনা বিক্রি করে আইফোনসহ তিনটি মোবাইল ফোন কেনে। এ ঘটনায় প্রায় ১০ দিন পর ঢাকা, কক্সবাজার ও ময়মনসিংহ থেকে হিমেল মিয়াসহ চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রবিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) ডিআইজি এস এন মো. নজরুল ইসলাম।
হিমেল ছাড়া গ্রেফতার তিন জন হলো– মাশফিক আলম (২৮), ফারজানা আক্তার ইতি (২৭) ও আব্দুল জব্বার (৭০)।
ডিআইজি এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৩০ অক্টোবর মৌচাকে আসিফ জুয়েলার্সের দোকান কর্মচারী হিমেল ৫৯ ভরি স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় দোকান মালিক আলিমুদ্দিন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি চুরির মামলা করেন। সিআইডির কাছে একটি অভিযোগ দেন। পরে ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে সিআইডি।’
ওই দোকানে হিমেল চার বছর ধরে কাজ করতো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজের প্রশংসা কুড়িয়ে দোকান মালিকের বিশ্বাস অর্জন করে সে। সেই সুযোগে দোকানের সোনা চুরির পরিকল্পনা করে। এ বিষয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে হিমেল। এর মধ্যে ইতি ও তার স্বামী মাশফিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একমত হয়। ৩০ অক্টোবর জুয়েলার্সের মালিক হিমেলকে সোনা আনার জন্য কারখানায় পাঠানে। হিমেল কারখানা থেকে আনুমানিক ৫৯ ভরি সোনা নিয়ে পালিয়ে গিয়ে মাশফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতির কাছে যায়। এরপর মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। হিমেল ৩৩ ভরি স্বর্ণ নিজের কাছে রেখে দিয়ে মাশফিক ও ইতিকে ২৫ ভরি স্বর্ণ চুরি কথা জানায়। পরে ইতি হিমেলকে ময়মনসিংহে তার বাবার আব্দুল জব্বারের কাছে পাঠিয়ে দেয়।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পরে কাছে রাখা সোনা গলিয়ে ময়মনসিংহে যায় মাশফিক ও ইতি। সেখানে আব্দুল জব্বার, হিমেল ও মাশফিক সোনার বারটি তিন টুকরো করে। এরমধ্যে একটি টুকরা ময়মনসিংহের স্থানীয় এক সোনার দোকানে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে মাশফিক। সেই টাকা থেকে হিমেলের জন্য একটি আইফোন, নিজের ও স্ত্রীর জন্য আরও দুটি মোবাইল ফোন কেনে। বাকি দুটি স্বর্ণের টুকরো (১৯ ভরি) ও অবশিষ্ট প্রায় ৪ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা ইতির কাছে রেখে কক্সবাজারে আত্মগোপনে চলে যায় মাশফিক।’
তিনি বলেন, ‘সিআইডির সাইবার পুলিশের একটি টিম কক্সবাজারে অভিযান চালিয়ে মাশফিককে (২৮) গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে সোনা বিক্রির ২৭ হাজার টাকা ও একটি ভিভো-৪০ভি মডেলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে রাজধানীর রামপুরা থেকে ইতিকে (২৭) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার বাসার ডিপ ফ্রিজের ভেতর থেকে দুটি সোনার টুকরা (১৯ ভরি) এবং সোনা বিক্রির ৪ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাশফিক ও ইতির তথ্যমতে ময়মনসিংহ সদরে অভিযান চালিয়ে আব্দুর জব্বারকে গ্রেফতার করা হয়। জেলার গৌরীপুরের বোকাইনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় হিমেলকে। তার কাছ থেকে ৩৩ ভরি সোনার একটি বার এবং সোনা বিক্রির টাকায় কেনা আইফোন জব্দ করা হয়।’