X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
১৯ বৈশাখ ১৪৩২

‘মুন্নী সাহার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট’ বলে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করায় বিস্ময় প্রকাশ মুন্নী সাহার

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:২৭আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৪৪

দেশের সংবাদপত্রে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) আলোচনায় ছিল মুন্নী সাহার ব‍্যাংক অ‍্যাকাউন্টে ১৩৪ কোটি টাকার বিষয়টি। বেশির ভাগ গণমাধ‍্যম ‘মুন্নী সাহার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট’ বলে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করায় দিনশেষে বিস্ময় প্রকাশ করেন মুন্নী সাহা। তার ফেসবুক অ‍্যাকাউন্টে দেওয়া দীর্ঘ স্ট‍্যাটাসে তিনি লিখেন, আজ দেশের অনেক নিউজ পোর্টাল এবং দৈনিকে আমার অ্যাকাউন্টে কত টাকা, তা নিয়ে কিছু মিসলিডিং হেডলাইন দেখে বিস্মিত হয়েছি।

অনেকেই আমার অ্যাকাউন্টে ১৩৪ কোটি টাকা—এমন ফটোকার্ড বানিয়ে ক্লিক নিচ্ছেন। ‘মুন্নী সাহার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট’ বলে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, যাতে জনমনে ধারণা হচ্ছে—এই অ্যাকাউন্টগুলো আমার। কোনও অ্যাকাউন্টের নমিনি হলে সেটি ‘স্বার্থ -সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট’ বলে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করা যায়, কিন্তু সেই অ্যাকাউন্টগুলো যে আমার নয়, সেটি কৌশলে এড়িয়েও যাওয়া যায়।

যে অ্যাকাউন্টের কথা বলা হচ্ছে সেটি যে তার নয় এবং তিনি অ্যাকাউন্টের একজন নমিনি মাত্র তা উল্লেখ করে মুন্নী সাহা লিখেছেন, কবির হোসেন তাপস দেশের একজন পুরোনো ব্যবসায়ী। বিগত সুদীর্ঘ ২২ বছর ধরে তিনি বিজ্ঞাপন ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত। ওয়ান ব্যাংকের যে অ্যাকাউন্টটির কথা বলা হয়েছে, আমি সেই অ্যাকাউন্টের একজন নমিনি মাত্র, অ্যাকাউন্টের লেনদেনের সঙ্গে আমার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। কবির হোসেন তাপসের কোনও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আমি অংশীদার নই, কোনও অ্যাকাউন্টের গ্যারান্টারও নই। অ্যাকাউন্ট ওপেন করার সময় পরিবারের কাউকে নমিনি হিসেবে দিতে হয় বলে এই অ্যাকাউন্টে আমার নাম দেওয়া আছে মাত্র।

একই সঙ্গে যারা তার সঙ্গে জড়িয়ে ‘কবীর হোসেন তাপসের অ্যাকাউন্টে ১৪ কোটি টাকার’ স্থিতির খবর দিয়েছেন—তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এবং যারা ভুল ফটোকার্ড করে, ‘মুন্নী সাহার অ্যাকাউন্টে ১৩৪ কোটি টাকা’ লিখলেন, তাদের প্রতি দোয়া প্রার্থনা করেছেন। যেন তারা বিভ্রান্তিমূলক হেডলাইন সাংবাদিকতা থেকে নিয়মের সাংবাদিকতা সম্মানের সঙ্গে চর্চা করতে পারেন।

স্ট‍্যাটাসে তিনি বলেন, ‘আলোচিত অ্যাকাউন্টটি ২০১৭ সালে খোলা হয়েছে এবং বিগত ৭ বছরে এই অ্যাকাউন্টে ১৩৪ কোটি টাকা ‘লেনদেন’ হয়েছে। ‘লেনদেন’-এর মানে আমার বন্ধুরা নিশ্চয়ই বুঝেন, এর মানে হচ্ছে প্রতিটি কার্যাদেশের বিপরীতে সব টাকা এখানে জমা হয় এবং সেই টাকা থেকে বিভিন্ন সাপ্লায়ার, ভেন্ডর, সরকারি কর ও ভ্যাট, কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য অপারেটিং খরচ পরিশোধ করা হয়। সেই হিসাবে ৭ বছরে এই অ্যাকাউন্টে মোট ১৩৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গড়ে মাসে দেড় কোটি টাকার মতো। একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে মাসে দেড় কোটি টাকার ব্যবসা করা অস্বাভাবিক নয় এবং সেই টাকার বড় অংশই বিভিন্ন সাপ্লায়ার, ভেন্ডর, অফিস খরচ, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ভ্যাট ও কর হিসেবে খরচ হয়, যাকে এখানে ‘লেনদেন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু খবরে এমনভাবে বিষয়টি প্রচার করা হচ্ছে—যাতে মনে হয় ১৩৪ কোটি টাকা একইসঙ্গে এখানে জমা ছিল, যা সত্যের অপলাপ।

কবির হোসেন তাপসের প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ব্যাংক ঋণগুলো নিয়মিত আছে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, আলোচ্য ব্যাংকটি একটি প্রাইভেট ব্যাংক—যারা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে বিভিন্ন সময়ে এই ব্যাংক ঋণগুলোর মেয়াদ ও কিস্তি সমন্বয় করে থাকে, যেটি খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। কবির হোসেন তাপসের কোনও খেলাপি ঋণ নেই এবং বর্তমান ঋণগুলোও খেলাপি হওয়ার আশু কোনও সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট যে কারোরই হিসাব চাইতে পারে। সেই তালিকায় সাংবাদিক হিসেবে অনেকের সঙ্গে আমার নাম ছিল। এবং কর্তৃপক্ষ দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসন্ধান করেছে বলে আমার বিশ্বাস।

একজন সংবাদকর্মী হিসেবে মনে করি, বাংলাদেশের যেকোনও ব্যবসায়ীর দীর্ঘ ২২ বছরের ব্যবসায়, মোট লেনদেন ১৩৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয় ১৪ কোটি টাকা, কোনও গুরুত্ব বহন করে না।  দুর্ভাগ্য হচ্ছে, শুধু আমার নামটি নমিনিতে ব্যবহার করায় একজন ব্যবসায়ী সামাজিক হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছেন, এখনও তার লেনদেন ব্যাহত হচ্ছে।

বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর হিসেবে ট্যাগ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ১০ বছর আমি এবং আমার মতো আরও দু-একজন সেলিব্রিটি সাংবাদিক সরকারি অনুষ্ঠান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্স কাভার করার তালিকায় নিষিদ্ধ ছিলাম। ‘এক টাকার খবর’ নামের অনলাইনের অনুমতিপত্রও সাবেক তথ্যমন্ত্রী দেন নাই। সাংবাদিক হিসেবে কোনও সরকারি পদপদবির সুযোগও আমাকে নিতে হয়নি বলে আমি গর্বিত। প্রধানমন্ত্রীর ইন্টারভিউ বা সালমান এফ রহমানের মুখের ওপর কড়া প্রশ্ন করায় নানান সময় আমাকে যে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, সেটি আমি সাংবাদিকতার শক্তিই মনে করি। সাহা পরিবারে জন্ম বলে আমাকে ভারতের দালাল বলতে মুখিয়ে থাকা মানুষগুলো অন্তত এই সরকারের স্বচ্ছ অনুসন্ধান থেকে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন—কতটা অন্ধত্ব নিয়ে আমার ওপর অবিচার  করা হয়েছে! যেটা গত ১৫/১৬ বছর ধরেই আমাকে সহ্য করতে হয়েছে। বিগত সরকারের সময় আমি বারবার এসব মিথ্যাচারের ব্যাপারে, সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যারাসমেন্টের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেও ফল পাইনি। বরং এই সরকারের স্বচ্ছতার প্রক্রিয়ায় বিষয়গুলো তদন্ত হওয়াতে আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বস্তিবোধ করছি, কিন্তু আমার সহকর্মীদের কেউ কেউ যেভাবে তথ্যগুলো টুইস্ট করে ফায়দা নিতে চাচ্ছেন, তা দুর্ভাগ্যজনক।

/ইউআই/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসসব কালো আইন বাতিলের দাবি ডিআরইউর
ডুরার সভাপতি আবির, সম্পাদক জহির
এখন মানুষ মন খুলে লিখছেন, সমালোচনা করছেন: প্রেস সচিব
সর্বশেষ খবর
১৪ বছর পর নিয়াজ-ফাহাদদের নিয়ে তিতাস চ্যাম্পিয়ন
১৪ বছর পর নিয়াজ-ফাহাদদের নিয়ে তিতাস চ্যাম্পিয়ন
ভারতের সেনাবাহিনীর ব্যবহার করা মডেলের গুলি পাওয়া গেলো বাংলাদেশের সীমান্তে
ভারতের সেনাবাহিনীর ব্যবহার করা মডেলের গুলি পাওয়া গেলো বাংলাদেশের সীমান্তে
আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস
আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস
দাপট দেখিয়ে হায়দরাবাদকে হারালো গুজরাট
দাপট দেখিয়ে হায়দরাবাদকে হারালো গুজরাট
সর্বাধিক পঠিত
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয় আটক
দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয় আটক
নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীর বুকে-পেটে প্রকাশ্যে গুলি
নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীর বুকে-পেটে প্রকাশ্যে গুলি
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’