X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
২০ বৈশাখ ১৪৩২

পথকুকুর নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থাপনা নেই উত্তরে, দক্ষিণেও পূরণ হচ্ছে না লক্ষ্যমাত্রা

জুবায়ের আহমেদ
১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:৫২আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৩৭

রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে প্রতিদিন পশুর কামড়ের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন শতাধিক মানুষ, মৌসুমে এ সংখ্যা প্রায় ৩শ’তে গিয়ে ঠেকে। যার প্রায় শতভাগই কুকুরের আক্রমণ বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জলাতঙ্ক কমলেও বেড়েছে কুকুরের আক্রমণের ঘটনা। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সমস্যা বেড়েছে বলে অভিযোগ রাজধানীবাসীর। এদিকে কুকুরের  সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং কামড় থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করার ব্যাপারে কার্যকর কোনও উদ্যোগ নেই রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের। এক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আবার নির্ভরশীল বেসরকারি একটি সংস্থার ওপর। সেই সংস্থাও কার্যকর ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পূরণ হচ্ছে না লক্ষ্যমাত্রা। অন্যদিকে কুকুরের জলাতঙ্ক টিকা দেয় কেবল স্বাস্থ্য অধিদফতর, সেই কার্যক্রমও গত এক বছর ধরে বন্ধ।

জাতিসংঘের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহযোগিতায় ‘জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচি-২০২২’ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকায় কুকুরের সংখ্যা ৭৩ হাজার ৭৭৮টি। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রায় ৫০ হাজার ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৩ হাজার কুকুর রয়েছে। হিসাব মতে, শহরের প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১৭টি কুকুর রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকায় কুকুরের সংখ্যা ৭৩ হাজার ৭৭৮টি (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

এক সময় সিটি করপোরেশন কুকুর নিধন করলেও বর্তমানে সেটি আইনে নিষিদ্ধ। তাই বিকল্প হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ২০৩০ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে পাঁচটি পদক্ষেপ নেয়। এর অন্যতম একটি হলো ‘কুকুরের গণটিকা প্রদান’ কার্যক্রম। এতে একটি কুকুরকে তিন ডোজ টিকা দিতে বলা হয়।। ২০১১ সালে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে প্রথম ডোজ টিকা সারা দেশে অর্থাৎ ৬৪টি জেলার কুকুরকে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয় ১৭টি জেলায়। তৃতীয় ডোজ টিকা কেবল ছয় জেলার কুকুরকে দেওয়া হয়। তবে ২০২৩ এর জুনের পর থেকে সরকার থেকে অর্থ ছাড় না পাওয়ায় এই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

শহরের প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১৭টি কুকুর রয়েছে (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) তথ্যমতে, জলাতঙ্ক নির্মূল কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ১০ বছরে তিন রাউন্ড টিকার আওতায় ২৪ লাখের বেশি কুকুরকে টিকা দেওয়া হয়েছে। কোনও এলাকায় বা দেশে ৭০ শতাংশ কুকুরকে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হলে জলাতঙ্কের ভাইরাস বিস্তার চক্র ভেঙে পড়ে এবং এক প্রাণী হতে অন্য প্রাণীতে এর সংক্রমণ বাধাগ্রস্ত হয়। সে অনুযায়ী সরকারি উদ্যোগ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যুর হার কমেছে বলে জানিয়েছে সিডিসি। তবে কুকুরের কামড়ে আক্রমণের সংখ্যা কমেনি।

এদিকে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা জলাতঙ্ক নির্মূলে টিকা কার্যক্রম চালু করলেও পথের কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রোগামের (ডিপিএম) আওতায় বন্ধ্যত্বকরণ (সিএনভিআর) কার্যক্রমের কোনও অগ্রগতি নেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বন্ধ্যত্বকরণ চালু রাখলেও উত্তর সিটি করপোরেশনের বেসরকারি প্রাণী সুরক্ষা সংস্থা ‘অভয়ারণ্য’ এর সহযোগিতা নিচ্ছে। তবে দুই সিটি করপোরেশনের স্বল্প পরিসরের এই কার্যক্রমে আশাতীত কোনও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। দুই সিটি করপোরেশনের স্বল্প পরিসরের কার্যক্রমে আশাতীত কোনও ফল পাওয়া যাচ্ছে না (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

গত বছর জানুয়ারিতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিজ উদ্যোগে কুকুর বন্ধ্যত্বকরণ কার্যক্রম শুরু করে। লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় দৈনিক ১০টি করে কুকুর বন্ধ্যত্ব করা। এ কাজে শুরুতে পাঁচ জন পশু চিকিৎসক নেওয়া হলেও বর্তমানে তিন জন ভেটেরিনারি চিকিৎসক রয়েছেন। তবে কার্যক্রম ধীর গতিতে চলছে এখন। অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনে কোনও ভেটেরিনারি চিকিৎসক না থাকলেও জনস্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোথাও অভিযোগ পেলে সেখান থেকে কুকুর নিয়ে এসে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া মহাখালীতে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালের পেছনের একাংশে অভয়ারণ্যকে কার্যক্রম পরিচালনায় জায়গা দেওয়া হয়। ডিএনসিসি থেকে খোঁজ রাখা হয়। তবে সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত পাঁচ মাস ধরে পথের কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণের কোনও কার্যক্রম নেই।

সম্প্রতি রাজধানীর জাপান গার্ডেন সিটিতে বিষ প্রয়োগে কুকুর ও বিড়াল হত্যার ঘটনায় উত্তর সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ হতে জানতে চাইলে ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়, বন্ধ্যাত্বকরণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল এবং অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। এছাড়া জনসচেতনতার অভাবে কুকুর-বিড়ালের প্রতি সহিংস আচরণ বেড়েছে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পূরণ হচ্ছে না লক্ষ্যমাত্রা (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কোনও ব্যবস্থাপনা না থাকলেও অভয়ারণ্যের মাধ্যমে কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ কার্যক্রম চলমান। তাদের আমরা দুটি গাড়ি ও জায়গা দিয়েছে। আমরা নিয়মিত তাদের কাজের তদারকি করি।’

এদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘আমাদের কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ কার্যক্রম চলমান। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৫০টি কুকুরের বন্ধ্যাত্বকরণ করা হয়েছে। নিয়মিতই আমরা কাজটি করছি। আমাদের নিজস্ব ভেটেরিনারি চিকিৎসক রয়েছে।’

/আরআইজে/ইউএস/
সম্পর্কিত
বিভিন্ন অভিযোগে রাজধানীতে ১১ জন গ্রেফতার
৫০০ কর্মীর সমন্বয়ে ডিএসসিসির মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান
খিলগাঁওয়ে পৃথক ঘটনায় দুই শিশুর মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
দর্শক-শ্রোতা প্রতিক্রিয়ায় ‘তীর’বিদ্ধ জেফার!
দর্শক-শ্রোতা প্রতিক্রিয়ায় ‘তীর’বিদ্ধ জেফার!
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলো ছাড় দেবে, আশা আলী রীয়াজের
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলো ছাড় দেবে, আশা আলী রীয়াজের
টি-টোয়েন্টিতে র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে গেলো বাংলাদেশের মেয়েরা
টি-টোয়েন্টিতে র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে গেলো বাংলাদেশের মেয়েরা
ঢাকায় আসছে কানাডার ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল
ঢাকায় আসছে কানাডার ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল
সর্বাধিক পঠিত
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
কমোডের ওয়াটার ট্যাংক পরিষ্কার করবেন যেভাবে
কমোডের ওয়াটার ট্যাংক পরিষ্কার করবেন যেভাবে
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’