ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে ১৯ বছর আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের মালেকা খাতুন। কিন্তু নিয়োগকর্তার শোষণ-অবিচারে গত ১৩ বছর ধরে বারবার চেষ্টা করেও দেশে ফিরতে পারেননি। যে সন্তানদের জন্য তার বিদেশ যাওয়া সেই সন্তানদের আর দেখা পাচ্ছিলেন না। অবশেষে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহায়তায় দেশে ফিরে সন্তানদের জড়িয়ে ধরলেন তিনি। মা ও সন্তানদের কান্নায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে একটি ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
মালেকা খাতুন জানান, সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ আর পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচাতে ২০০৬ সালে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবের জেদ্দায় গিয়েছিলেন। দালাল বলেছিল অনেক বেতন। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন মরুভূমিতে ছাগল চড়ানোর মতো পরিশ্রমের কাজ করতে হচ্ছে। বেতনও কম। তারপরও নিজের এবং ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি অল্প বেতনেই কাজ করতে থাকেন। একবার দেশে আসতে পারলেও গত ১৩ বছর ধরে তাকে দেশে আসতে দেওয়া হচ্ছিল না। মাকে ফেরাতে তার দুই সন্তান সোনিয়া ও স্বপন গত ১৩ বছরে নানা জায়গায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। মালেকা খাতুন একেবারে চলে আসতে চাইলেও পাসপোর্ট-কাগজপত্র নিয়োগকর্তা আটকে রাখায় তিনি ফিরতে পারেননি। এসময় অভিবাসন নিয়ে কাজ করা এক সাংবাদিক সাইফুল রাজিবের মাধ্যমে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের আটকে পড়া বাংলাদেশিদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার সেবা সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর মায়ের প্রত্যাবাসনের জন্য সন্তানরা আসেন রাজধানীর আশকোনায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্লাটফর্ম) শরিফুল হাসান জানান, ‘মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের কর্মীরা পরিবারের কাছ থেকে বিস্তারিত সব তথ্য জানার পর শুরু করেন মালেকা খাতুনকে দেশে ফিরিয়ে আনার কাজ। এজন্য দূতাবাস, ইমিগ্রেশনসহ সৌদি আরবের নানা দফতরে যোগযোগ করা হয়। সবার চেষ্টায় এক মা ফিরে এসেছেন তার সন্তানদের কাছে।’
১৩ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর দুই সন্তানের সঙ্গে মায়ের এই মিলনের মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এভসেক সিকিউরিটি ম্যানেজার স্কোয়াড্রন লিডার রাসেল আলুকদার। তিনি বিদেশ ফেরতদের বিমানবন্দরে সহায়তা ও আটকে পড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধারে ব্র্যাকের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্র্যাকসহ সবাই মিলে কাজ করছি, যাতে বিমানবন্দরে প্রবাসীরা সর্বোচ্চ সেবাটা পান। আমরা সবাই মিলে সেটি নিশ্চিত করবো।’
মাকে ১৩ বছর পরে ফিরে পেয়ে আপ্লুত সোনিয়া খাতুন বলেন, ‘আমরাতো আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। আমিতো ভাবিনি যে, মাকে আর আমরা দেখতে পারবো। আজ ব্র্যাক আর সাইফুল ভাইয়ের কারণে আমরা মাকে ফিরে পেয়েছি। আমরা আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’
বিমানবন্দরে বিদেশ ফেরতদের জরুরি সহায়তায় দিতে গত আট বছর ধরে কাজ করছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার। সিভিল এভিয়েশন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, এপিবিএনসহ সবার সহযোগিতায় গত আট বছরে ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে নানা ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই ৪০ জন প্রবাসীকে বিশ্বের নানা দেশ থেকে উদ্ধার করা হয়।