প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগরীর নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি মাঠে থাকছে অক্সিলারি (সহায়ক পুলিশ) ফোর্সের ৪৩১ জন সদস্য। এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটিতে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঠেকাতে রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের সহায়ক হিসাবে কাজ করবে অক্সিলারি ফোর্স। সহায়ক এই ফোর্সকে গ্রেফতারের ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। তবে তারা কোনও তদন্ত করতে পারবেন না। গ্রেফতারের পর দ্রুত পুলিশের কাছে অপরাধীকে হস্তান্তর করবেন। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এলাকার নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্য থেকে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ডাকাতি ঠেকাতে অক্সিলারি পুলিশের ভূমিকা
সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডিতে অলংকার নিকেতন জুয়েলার্সের মালিক এম এ হান্নান আজাদের বাসায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। বুধবার (২৬ মার্চ) ভোরে ২০-২৫ জনের একটি ডাকাত দল র্যাবের পোশাক পরে, ছাত্র ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বাড়িতে ঢোকে। ডাকাতির সময় বাসার মালিক ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পাশের একটি ভবনের নির্মাণশ্রমিকদের সহায়তায় চার ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। সাহসিকতা দেখানো পাঁচ শ্রমিককে পুরস্কৃত করেছে ডিএমপি এবং তাদের অক্সিলারি ফোর্সে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘ধানমন্ডির ডাকাতির ঘটনায় সাহসী ভূমিকা রাখা শ্রমিকদের অক্সিলারি ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়াও রাজধানীর নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে ৪২৬ জন অক্সিলারি পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা আবাসিক এলাকা, মার্কেট ও বাণিজ্যিক স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অক্সিলারি পুলিশ সদস্যরা পুলিশের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। তারা সন্দেহভাজন অপরাধীদের আটকে পুলিশকে সহায়তা করবে এবং তথ্য সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে তাদের কোনও অস্ত্র বহনের অনুমতি নেই।’
কেন অক্সিলারি ফোর্স?
পুলিশ প্রশাসনের জনবল সংকটের কারণে অক্সিলারি ফোর্সের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডিএমপির ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জনবল অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী আছে। তবে পুলিশের সঙ্গে নগরবাসীর সম্পর্ক তৈরি করা এবং পুলিশ-পাবলিক পার্টনারশিপের অংশ হিসেবেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘১৯৭৬ সালের ডিএমপি অর্ডিন্যান্সের ১০ ধারা অনুযায়ী, পুলিশের কাজে সহায়তার জন্য পুলিশ কমিশনার অক্সিলারি ফোর্স নিয়োগ দিতে পারেন। এর আওতায় ঢাকার ৪৮ থানায় এই ফোর্সের সদস্যরা কাজ করবেন।’
অক্সিলারি ফোর্স নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ডিএমপি সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে রাজধানী অনেকাংশে ফাঁকা হয়ে যাবে, ফলে বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধের শঙ্কা থাকায় অক্সিলারি ফোর্স সদস্যদের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। ঈদের পরেও প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সম্প্রতি ডিএমপির পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, ‘নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পুলিশের পাশাপাশি অক্সিলারি ফোর্স সদস্যরাও সক্রিয় থাকবে। তবে জনগণকেও সচেতন থাকতে হবে এবং নিরাপত্তা রক্ষায় নিজেদের উদ্যোগ নিতে হবে।’
নগরবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যে কোনও সন্দেহজনক ঘটনা ঘটলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় অথবা পুলিশের হেল্পলাইন ৯৯৯-এ ফোন করুন। আমরা সবসময় আপনাদের পাশে আছি।’