X
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

গাজার সমর্থনে ঢাকায় জনতার স্রোত, নজরে কালো পতাকা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:০২আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৩৫

ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মানুষজন পায়ে হেঁটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হচ্ছেন। শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় সেখানে কেন্দ্রীয় সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই অংশগ্রহণকারীরা রওনা হন। এদিকে কারও হাতে আইএস বা জঙ্গি সংগঠনের সাদৃশ্যযুক্ত কালো পতাকা, টুপি কিংবা ব্যানার দেখা গেলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তা জব্দ করছেন।

রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মানুষজন পায়ে হেঁটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হচ্ছে (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

সরেজমিন দেখা গেছে, কাওরান বাজার মোড়, বাংলামোটর, কাকরাইল মোড় এলাকা থেকে দলে দলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাচ্ছে মানুষ। এছাড়া সদরঘাট, যাত্রাবাড়ী, কেরানিগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পায়ে হেঁটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাচ্ছেন হাজারো মানুষ। সকাল থেকেই ঢাকার বাইরের জেলা থেকে বাস, মিনি ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহনে করে মানুষ এসে জড়ো হন। পরে তারা পায়ে হেঁটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে রওনা দেন। এ সময় ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’, ‘ইজরায়েলি পণ্য, বয়কট বয়কট’ সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন রাজধানীতে প্রবেশ করা ব্যক্তিরা।

সমাবেশে অংশ নেওয়া অনেকের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং ফিলিস্তিনি পতাকা দেখা গেছে। কেউ কেউ কালেমা খচিত ফিতা মাথায় বেঁধেছেন। অংশগ্রহণকারীরা ইসরায়েলবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। পাশাপাশি জাতিসংঘের কাছেও জবাবদিহি দাবি জানান।

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই মার্চে অংশ নিয়েছেন  (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই মার্চে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ, এমনকি তরুণ প্রজন্মেরও উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

মিরপুর থেকে আসা মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ মোহাম্মদ তায়েব বলেন, ফিলিস্তিনে যে গণহত্যা চলছে, তার বিরুদ্ধে আমরা মুসলমান হিসেবে চুপ থাকতে পারি না। তাই এই সংহতি সমাবেশে এসেছি।

বাবার কাঁধে চড়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে এক শিশু (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

সাভার থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি দল করি না, ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িতও নই। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে ফিলিস্তিনের শিশুদের কান্না আমাকে নাড়া দিয়েছে। তাই এখানে এসেছি।

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিয়াম ইসলাম বলেন, সরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমাজকে জাগাতে হবে। বাংলাদেশ থেকেও সেই আওয়াজ তুলতে হবে।

অনেকের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

নোয়াখালী থেকে ট্রাকে করে আসা একদল লোকের সঙ্গে কথা হয় গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে। বাংলা ট্রিবিউনকে তারা জানান, মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে যোগ দিতে গত রাতে নোয়াখালী থেকে নূন্যতম ৫০টা ট্রাক ঢাকায় এসেছে। সকালে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে কষ্ট করে আরেকটা ট্রাক ম্যানেজ করে ঢাকায় এসেছেন তারা। আরও অনেকেই পরিবহন সংকটের কারণে আসতে পারেননি।

জিরো পয়েন্টে আসা বেশ কয়েকটি ট্রাকের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন।

ফেনী থেকে ট্রাকে করে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা সবুজ মাল নামে একজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা রাতে ট্রাক পায়নি। তাই সকালে রওনা দিয়েছি। এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। তাই পরিবারের বড় ভাই, বাবা, ছোট ভাইসহ এলাকার বন্ধুবান্ধব সবাই মিলে এসেছি।’

এদিকে এই জনসমাগমের মধ্যেও রাস্তার গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি সড়কে। রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাকরাইল মোড়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এবং কাকরাইল মসজিদ মোড়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়া জনতাকে সেসব জায়গায় তল্লাশি করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনেও সংগঠনের ব্যানার বা পতাকা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কোনও বস্তু যাতে কেউ সমাবেশস্থলে নিয়ে যেতে না পারে সে জন্য এই তল্লাশি। তল্লাশির সময় কালো কাপড়ে কালেমা লেখা কোনও কাপড় বা পতাকা পাওয়া গেলে সেগুলো রেখে দিতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

কাকরাইল মোড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিনিয়র এএসপি (পিএমও) মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছ। কোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। কেউ যাতে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের ব্যানার বা পতাকা নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য আমরা সজাগ আছি। কর্মসূচিতে যাওয়া ব্যক্তিরা আমাদের সহযোগিতা করছেন, আমরাও তাদের সহযোগিতা করছি। কর্মসূচির কারণে সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানি না হয় এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা যাতে স্বাভাবিক থাকে সেটা আমরা নিশ্চিত করছি।’

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মার্চ ফর গাজা কর্মসূচির আয়োজন করেছে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। কর্মসূচি চলবে মাগরিবের নামাজের আগ পর্যন্ত।

/জেডএ/এএজে/এএইচএস/আরকে/
সম্পর্কিত
গাজায় ত্রাণ বিতরণের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: যুদ্ধ কি আবারও স্বাভাবিক হয়ে উঠছে?
ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ থেকে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশত শিক্ষার্থী আটক
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (১১ মে, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (১১ মে, ২০২৫)
এবার শাহবাগে অবস্থান নিলেন আহত জুলাই যোদ্ধারা
এবার শাহবাগে অবস্থান নিলেন আহত জুলাই যোদ্ধারা
থ্যালাসেমিয়া পেশেন্টস অ্যান্ড প্যারেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আত্মপ্রকাশ
থ্যালাসেমিয়া পেশেন্টস অ্যান্ড প্যারেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আত্মপ্রকাশ
আ.লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি: হাসনাত আব্দুল্লাহ
আ.লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি: হাসনাত আব্দুল্লাহ
সর্বাধিক পঠিত
জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
লঞ্চঘাটে তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধর, যুবক বললেন ‘ভাই হিসেবে মেরেছি’
লঞ্চঘাটে তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধর, যুবক বললেন ‘ভাই হিসেবে মেরেছি’
ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক অভিযান শুরু
ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক অভিযান শুরু
চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে তামিম ইকবাল, বললেন ‘আমি পলিটিক্যাল কেউ না, স্পোর্টসম্যান’
চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে তামিম ইকবাল, বললেন ‘আমি পলিটিক্যাল কেউ না, স্পোর্টসম্যান’
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ