X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যাদের সহযোগিতার বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই

হাসনাত নাঈম
০৯ মে ২০২০, ০৬:৩৪আপডেট : ০৯ মে ২০২০, ১৫:৩০

যৌনকর্মী (ছবি: ডয়চে ভেলে) বাংলাদেশের আইনে গণিকাবৃত্তিকে নিবারণ করার কথা বলা হলেও এই পেশায় যুক্তদের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা কেমন হবে, সে বিষয়ে বলা নেই। গত দু’মাস ধরে করোনা মহামারিতে এই পেশায় যুক্তদের বন্ধ রয়েছে আর্থিক রোজগারের পথ। এই সময়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে কিছু খাদ্য সহযোগিতা পেলেও হাতে নেই কোনও অর্থ। শুধু ত্রাণ হিসাবে চাল, ডাল, আলু পেয়েছেন। আনুষঙ্গিক আরও অনেক কিছু কেনার জন্য টাকার প্রয়োজন। এজন্য করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই রাস্তায় নামছেন। যৌনকর্মী এবং তাদের একাধিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে। 

২০১৫-১৬ সালের সরকারি পরিসংখ্যান মোতাবেক এদেশের মোট যৌনকর্মী রয়েছেন এক লাখ দুই হাজারের মতো। এই তথ্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘সেক্স ওয়ার্কার নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশ’। তারা বলছে, তাদের তালিকায় ৬৫ হাজারেরও বেশি যৌনকর্মী থাকলেও দেশে মোট যৌনকর্মীর সংখ্যা এক লাখের বেশি।

করোনাভাইরাসের এই মহামারি সময়টাতে যৌনকর্মীরা কেমন আছেন তা জানতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানরত যৌনকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, বর্তমানে তাদের অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সঞ্চয় না থাকায়, হাতে নেই নগদ টাকাও। চলতে হচ্ছে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ সহযোগিতার পাশাপাশি সরকারের তহবিল থেকে নগদ অর্থ প্রত্যাশা করছেন যৌনকর্মীরা।

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার যৌনপল্লী পল্লীর অসহায় নারী ঐক্য সংঘের সভানেত্রী ঝুমুর বেগম বলেন, ‘মার্চের ২০ তারিখ থেকে লকডাউন শুরু হয় এখানে। এই পল্লীতে যারা, তাদের তো কোনও সঞ্চয় ছিল না। পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে মার্চ মাসের শেষের দিকে আমরা ৩০ কেজি করে চাল পেয়েছি। এরপরে আরও দুই দফায় সহযোগিতা পেয়েছি। শুধু চাল-ডাল পেলেই তো হয় না, আনুষঙ্গিক আরও কিছু লাগে। আমাদের সবকিছুই তো কিনে ব্যবস্থা করতে হয়। তাই নগদ সহায়তা দরকার। ’

টাঙ্গাইল যৌনপল্লীর নারীমুক্তির সংগঠনের সভাপতি আকলিমা বলেন, ‘টাঙ্গাইলের ডিসি সাহেব আমাদের ৩০ কেজি করে চাল দিয়েছেন। শুধু চাল দিলে তো চলে না। এছাড়া সুস্থ থাকতে নানা ধরনের ওষুধ কিনতে হয়। দুই মাস বাড়িওয়ালারা ভাড়া নেওয়া বন্ধ করেছে। বাড়িওয়ালার আমাদের সহায়তা করেছে। মোটামুটি আমরা কোনরকম খেয়ে বেঁচে আছি।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পতিতাবৃত্তি চালানোর জন্য বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। তবে ২০০০ সালে হাইকোর্ট বিভাগের একটি রায়ে কিছু অবজারবেশন দিয়েছিল। আইন না থাকলেও কারও যদি ১৮ বছর পূর্ণ হয়, তবে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হলফনামা দিতে পারে।  সেখানে সে বলতে পারে, আমি প্রাপ্তবয়ষ্ক এবং অন্য কোথাও কোনও পেশার সংস্থান করতে পারিনি। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে ১৮ অনুচ্ছেদে পতিতাবৃত্তিকে নিবারণ করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১২ সালের মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে বলা আছে, কাউকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা যাবে না। কোথাও যদি পরিচালনা করা হয়, তবে সেখানে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তারা সরকারি সহযোগিতা পাবে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে।’

যৌনকর্মীদের বড় সংগঠন ‘সেক্স ওয়ার্কার নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশে’র সাধারণ সম্পাদক আলেয়া আক্তার লিলি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে মেয়েদের রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমান সময়েও পেটের দায়ে অনেক মেয়ে রাস্তায় বের হচ্ছে। তাদের হাতে ওষুধ কেনার মতো টাকাও নেই। বর্তমানে ঢাকা শহরে ১২টি ড্রপিং সেন্টারের অধীনে প্রায় ৮ হাজার যৌনকর্মী আছে। এখন বাড়িওয়ালারা তাদের সেখানে ঢুকতে দিচ্ছে না। অনেকেরই থাকার জায়গা নেই। এরা ভাসমান, এদের অবস্থা এখন খুবই খারাপ। খাবার-দাওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সবকিছু মিলিয়ে তারা এখন খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের নেটওয়ার্ক থেকে সহযোগিতা করার।’

যৌনকর্মীদের আরেকটি আলাদা সংগঠন ‘দুর্জয় নারী সংঘে’র সহ-সভাপতি চুমকি বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় আমাদের মেয়েরা এমন অনেকে আছে, যারা এক বেলার খাবারও জোগাড় করতে পারছে না। কারণ, তাদের কাছে নগদ টাকা-পয়সা নেই। কিছু কিছু জায়গা থেকে আমরা চাল-ডাল পাচ্ছি। কিন্তু এসব শুধু পেলেই হয় না। রান্না করতে আরও কিছু লাগে। টাকা না থাকলে তো সেগুলো কেনা সম্ভব হচ্ছে না। ওষুধ কেনার টাকাটাও নেই অনেকের কাছে। অনেকে ধারদেনা করে চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এনজিওগুলো থেকে আমরা কিছু কিছু সহায়তা পাচ্ছি। কিন্তু সরকারিভাবে কোনও সহায়তা পাচ্ছি না। যদি সরকার আমাদের নগদ অর্থ সহায়তা দেয়, তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও সুবিধা হবে। সরকার অনেকের জন্য বাজেট ঘোষণা করছে, আমাদের জন্য কি কিছু নেই? আমরা চাই, বাজেটে আমরাও যেন অন্তর্ভুক্ত থাকি। ’

যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সেলিমা সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার ক্যাশ প্রণোদনা দেবে না। কিন্তু ১০ কেজি বা ২০ কেজি করে চাল ত্রাণ দিচ্ছে। যে সংস্থাগুলো এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করে, তারা যদি আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় বিষয়ের জন্য সমন্বয় করে নগদ টাকা প্রদান করে তাহলে এই মুহূর্তে যৌনকর্মীরা সংকট মোকাবিলা করতে পারবে। আর এটার জন্য যেসব সংস্থা নগদ টাকা দেবে তাদের সেক্স ওয়ার্কার নেটওয়ার্কের সঙ্গে সমন্বয় করা জরুরি। কারণ, তাদের কাছেই সঠিক তথ্য আছে। কাদের এই নগদ অর্থ দিতে হবে, সেটা ভালো তারাই বলতে পারবে।’

*এই রিপোর্ট তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বাংলা ট্রিবিউনের রাজবাড়ী প্রতিনিধি তানভীর মাহমুদ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি এ কে বিজয়, যশোর প্রতিনিধি তৌহিদ জামান, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি আতাউর রহমান জুয়েল।

 

 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম