সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কোনও ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। হাসপাতালে এমন ‘ভুয়া রিপোর্ট’ কীভাবে এলো তাও জানা নেই তাদের।
সোমবার (১৯ জুলাই) সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. জাফর উল্ল্যাহ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন।
রবিবার ওই হাসপাতালে পরিচালিত র্যাবের অভিযানটি মিস ইনফরমেশনে হয়েছে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. জাফর উল্ল্যাহ বলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্র বলবো না। এটি মিস ইনফরমেশন (ভুল তথ্য) হতে পারে। আমি বলবো, মিস ইনফরমেশনের কারণে এই অভিযান হতে পারে।’
র্যাবের অভিযানে উদ্ধার করা জাল বা ভুয়া রিপোর্ট ও র্যাপিড টেস্ট কিট উদ্ধারের বিষয়ে অধ্যাপক ডা. মো. জাফর উল্ল্যাহ দাবি করেন, ‘হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে কোনও অনিয়ম হয়নি বলে আমি নিশ্চিত। আমাদের প্রতিটি রিপোর্টে ল্যাব নম্বর দেওয়া থাকে। যেসব রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলোতে কোনও ল্যাব নম্বর ছিল না। আমাদের ল্যাব থেকে পরীক্ষা করা হলে ল্যাব নম্বর থাকতো। এর মানে আমরা এই রিপোর্ট দেইনি। যদি কেউ গণস্বাস্থ্যের কিট দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে টেস্ট করে রিপোর্ট দিয়ে থাকে, তাহলে সেটার দায় তার। হাসপাতালের নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘করোনা টেস্ট (RT-PCR) করার জন্য আমরা প্রাভা হেলথ কেয়ার বাংলাদেশ ও ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে চুক্তি করেছি। সেখান থেকে রোগীর স্যাম্পল পরীক্ষা করে আনা হয়েছে। এছাড়া, এই হাসপাতালটি মেডিক্যাল কলেজের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান। এখানে অনলাইনে ও অন্যান্য উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। কিছুদিন পরেই ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে। এই হাসপাতালে দেশি-বিদেশি শিক্ষানবিশ ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ যথারীতি চালু আছে। এমতাবস্থায় এই প্রতিষ্ঠান নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু না থাকলে শত শত মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও রোগীদের চিকিৎসা এবং কর্মচারীদের জীবিকা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।’
‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও চিকিৎসক বিশেষজ্ঞসহ সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সুবিবেচনার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।’
ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থাকার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে রোগীদের জন্য ওষুধ ব্যবহার করি। তবে হাসপাতালের ফার্মেসির ব্যাপারে একটা ত্রুটি ছিল। সেটি হলো, ফার্মেসির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছিল। তা রিনিউ (নবায়ন) করা হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়টি আমার নলেজেই নেই, ধারণায়ও নেই। এটা কীভাবে এলো আমরা জানি না।’
হাসপাতালে একই মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস বারবার ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ডা. মো. জাফর উল্ল্যাহ দাবি করেন, ‘সুস্পষ্টভাবে আপনাদের অবগতির জন্য জানাতে চাই যে, আমাদের হাসপাতালে কখনও সার্জিক্যাল হ্যান্ড-গ্লাভস দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা হয় না। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে পূর্ব প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কিছু সংখ্যক সার্জিক্যাল হ্যান্ড-গ্লাভস পাউডার মিশ্রিত করে রাখা হয়। যাতে যেকোনও অপারেশনেই দ্রুত সেগুলো ব্যবহার করা যায়।’
হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩০ জুন মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও তা নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি স্বাস্থ্য অধিদফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। নবায়নের বিষয়টি এখনও চলমান রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, রবিবার (১৯ জুলাই) বিকালে রাজধানীর গুলশানে সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। নেগেটিভ রোগীকে করোনা পজিটিভ বলে হাসপাতালে ভর্তি রেখে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অসঙ্গতি পেয়েছে র্যাব। হাসপাতালটির দুজন কর্মকর্তাকে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
রোগী স্থানান্তরের পর সিলগালা করা হবে সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল
নেগেটিভ রোগীকে করোনা পজিটিভ ঘোষণা দিয়ে ভর্তি রেখেছিল সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল