X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত প্রশ্নে দোলাচলে বিএনপি, ‘উত্তরে’র অপেক্ষায় বাম দলগুলো

সালমান তারেক শাকিল
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২২:০০আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২২:৪৮

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সময় জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট অক্ষুণ্ণ রেখেছিল বিএনপি। তবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য বিরোধী দলীয় ঐক্যের প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে এ প্রশ্নটি নতুন করে উঠে আসছে। ঐক্যে আগ্রহী কোনও কোনও দল বলছে, জামায়াত ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান জানার পরই বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের উদ্যোগটি সামনের দিকে যাবে।

যদিও খোদ বিএনপিতে জামায়াত-প্রশ্নে দুই ধরনের অবস্থান। দলের স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য মনে করেন, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে জামায়াতকে পাশে রেখে কোনওভাবেই কার্যকর কোনও রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করতে পারবে না বিএনপি। আর স্থায়ী কমিটির দুই-তিনজন মনে করেন, ক্ষমতাসীন সরকারের পতন নাকি জামায়াত—কোনটি বড় সমস্যা তা বিএনপিকে ঠিক করতে হবে।

জামায়াত প্রশ্নে দোলাচলে বিএনপি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যে সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ স্থায়ী কমিটির অন্তত অধিকাংশ সদস্য বিতর্কিত ও নিবন্ধন হারানো জামায়াতকে বাদ রেখে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণের পক্ষে। ইতোমধ্যে দলের অভ্যন্তরে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে—জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ার। আর এ কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দলটির সঙ্গে যৌথ কোনও কর্মসূচিতে দেখা যায়নি বিএনপিকে। তবে জামায়াতকে কোন কৌশলে বাদ দেওয়া হবে, তা চূড়ান্ত করতে পারেননি দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।

২০১৬ সালে বিএনপির ইফতারে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে জামায়াতের নেতার কুশল বিনিময় (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

দলের স্থায়ী কমিটির এক প্রভাবশালী সদস্য জানান, এই বিএনপি বিগত ২০ বছর আগের বিএনপি নয়। দলের মধ্যে গুণগত পরিবর্তন এসেছে কিনা—তা সামনে আসবে জামায়াত ইস্যুটি নিষ্পত্তি করার ওপর। সেক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে বিএনপির গুণগত পরিবর্তনের পলিসি কী হবে, তা নির্ভর করবে এই সিদ্ধান্তের ওপর।

জামায়াত রাজনীতি করছে ৫০ বছরের বেশি সময় হয়েছে। এরমধ্যে ভারতে বিজেপি ধর্মভিত্তিক পার্টি হয়ে ক্ষমতায় যেতে সক্ষমতা দেখালেও জামায়াত কিন্তু এই দেশে তিন পার্সেন্ট ভোটও রক্ষা করতে পারেনি; বলছিলেন স্থায়ী কমিটির আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তার পর্যবেক্ষণ, স্বাধীনতার বিরোধিতা এবং দলটির সিনিয়র কয়েকজন নেতা ফাঁসির মধ্য দিয়ে দলটির ‘রাজনৈতিক অস্তিত্ব’ এখন নিজেদের পরিমণ্ডলে। এই দেশের মানুষ ধর্মীয়ভাবে ‘ফ্যানাটিক’ না। তারা মডারেট দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।

শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী এক নেতার আলাপ অনেকটাই এমন, ‘দেশের সামনে সরকার সমস্যা নাকি জামায়াত সমস্যা। এটাও তো বিবেচনায় নিতে হবে। এরপর আছে আমরা কী এজেন্ডা রাখবো ঐক্যের জন্য। এজেন্ডা দেখে রাজনৈতিক দলগুলো মতামত দেবে। হয়তো কোনওটা যুক্ত হবে, কোনওটা বাদ পড়বে।’

বিএনপির প্রভাবশালী একজন দায়িত্বশীল এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, ‘জামায়াত ইস্যুটিকে নিষ্পত্তি করার আগে বিএনপি সম্ভবত আগে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। এরপর নীতি তৈরি করার পর রাজনৈতিক জোটের দিকে যাবে। সেক্ষেত্রে এখনই জামায়াত ইস্যু সেটেল হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।’

দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল বলেন, ‘বিএনপি আসলে কী করতে চায়, সেটি ঠিক করতে হবে। তারা গুণগত পরিবর্তনের জন্য ঐক্য করলে অবশ্যই জামায়াতকে বাদ রেখে বাম দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জোট গঠনের দিকে যাবে। আর সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাইলে ১৪ দলীয় জোটেও মনোযোগ দিতে হবে। তবে যদি দাবি আদায় করতে হয়, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটাধিকার অর্জন করতে হয়, তাহলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সামনে যেতে হবে।’

জানতে চাইলে শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জামায়াত ইস্যুতে কী সিদ্ধান্ত হবে, তা পরিস্থিতি বাতলে দেবে। সব সময় সব সময় একই রণনীতি ফলো করা হয় না।’

অলি আহাদের স্মৃতিসভায় বাম ও প্রগতিশীল নেতাদের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব

 উত্তরের অপেক্ষায় বাম দলগুলো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে খুব শিগগিরই সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে বিএনপি। ইতোমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ সংক্রান্ত আলোচনা গুছিয়ে এনেছেন। আগামী সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সম্ভাব্য স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত তিনি দেবেন। এরপরই স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে।

বাম, ডান ও ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য মতবিনিময়ে দলীয় প্রতিশ্রুতি তুলে ধরবে বিএনপি। এছাড়া অতীতের বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে সম্ভাব্য প্রশ্নের জবাবও তৈরি করছেন নেতারা।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বিভিন্ন বাম ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের বিরুদ্ধে যেসব রাজনৈতিক দল তৎপর, তাদের সবার সঙ্গেই কথা বলতে পারে বিএনপি। তবে, জামায়াত ইস্যুতে তাদের অবস্থান পরিষ্কার হতে হবে।

জানতে চাইলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আলোচনায় এলে বিএনপির কাছে আমরা জামায়াত ইস্যুটিতে জানতে চাইবো। তারা কী বলে সেটা শুনবো।’

সাইফুল হক এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তারা তো ইসলামপন্থীদের সঙ্গেও কথা বলতে পারে। স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে যারাই সোচ্চার রয়েছে, তাদের সঙ্গেই তারা বলতে পারে। যারা-যারা ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চায়, তাদের সবার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ আছে।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, ‘বিএনপি ২০ দল বা ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে দিবে, এমনটি মনে হয় ভাবছে না। এগুলোর সঙ্গে আরও বাড়ানো যায় কিনা, সে চেষ্টা করবে সম্ভবত। তবে এসব চিন্তা ইউটোপিয়ান চিন্তা। একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে চিন্তা করতে হবে।’

তবে, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান মনে করেন, জনগণের সামনে যার-যার অবস্থান পরিষ্কার করার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হবে, গুণগত পরিবর্তনের জন্য কোন দল কী করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন ও সংবিধানের মূলনীতিগুলোর ভিত্তিতে জনগণের জন্য কার কী করার আছে, সেটা আগে পরিষ্কার করতে হবে।

খালেকুজ্জামান উল্লেখ করেন, দেশের সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জনগণের নেই। বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা, আমলাতন্ত্র, নির্বাচন প্রক্রিয়া—এসব বিষয়ে মৌলিক পরিবর্তন কীভাবে আসবে, তা ঠিক করতে হবে। ফলে শ্রেণিগত সীমাবদ্ধতা থাকলেও জনগণের দুর্ভোগ কমাতে কারা কি করতে চায়, সেটাই বিবেচ্য বলে জানান বামনেতা খালেকুজ্জামান।

বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম একজন উদ্যোক্তার দাবি, তিনি এরইমধ্যে বিএনপির কোনও-কোনও নেতার সঙ্গে আলাপে জানিয়েছেন, জামায়াত ইস্যুটি বড় না করে বিষয়টিকে কৌশলগত জায়গা থেকে বিবেচনা করার জন্য। বিশেষ করে জোট ভেঙে দিলে বা বের করে দিলে সরকারি দল জামায়াতকে কাজে লাগাবে, এমন সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।

শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ফোনালাপে এই নেতা আরও বলেন, ‘জামায়াতের যেহেতু ধর্মভিত্তিক ঘরানার সমর্থন রয়েছে, সে কারণে দলটিকে আরও কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ রাখা যায় কিনা, সে বিষয়টিও আমলে নিতে পারে বিএনপি।’

জামায়াত ইস্যুতে দোলাচলে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন দলটির নির্ভরযোগ্য একজন জোটনেতা। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘জামায়াত ইস্যু তাদের কাছে পরামর্শ দিয়েছি, যদি চলতে না চান, তাহলে তাদের সঙ্গে বসে আলাপ করে বুঝান, যে; এতে করে আন্দোলনের ক্ষতি হচ্ছে, নিজেদের লাভ হচ্ছে না।’

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে সামাজিক কুসংস্কার’
‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে সামাজিক কুসংস্কার’
নারী উদ্যোক্তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবহার বিষয়ক প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠিত
নারী উদ্যোক্তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবহার বিষয়ক প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠিত
ইউক্রেনকে ৬২ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য
ইউক্রেনকে ৬২ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য
ছেলেকে প্রার্থী করায় এমপি একরামুলকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি
ছেলেকে প্রার্থী করায় এমপি একরামুলকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী