X
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

পোশাকশ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর আহ্বান জাতীয় পার্টির এমপির

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০২ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৩৫আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৩৫

গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, যে শিল্পে কাজ করে একজন শ্রমিক ৩০ দিন খেতে পারে না, বাচ্চার স্কুলের বেতন দিতে পারে না। ২০ দিনের মাথায় বেতন শেষ হয়ে যায়, সেই শিল্পের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর ঝুঁকি নিতে হবে। সবকিছুর সমন্বয় করে শ্রমিক স্বস্তিতে না থাকলে দেশ স্বস্তিতে থাকবে না।’

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

শামীম হায়দার বলেন, একদিকে মালিক পক্ষের স্বার্থ, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন অনেক বাড়ালে বেশকিছু গার্মেন্টস ড্রপ আউট হবে। ২৫ বছর ধরে আপনি লাভ করেছেন, দুই বছর ঝুঁকি নিতে পারবেন না? ২৫ বছরের লাভে বাড়ি করেছেন তিনটা, চারটা, পাঁচটা। দেশে-বিদেশে ছেলে-মেয়েকে পড়াচ্ছেন। শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর ঝুঁকি নিতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষি করে মূল্য বাড়াতে হবে। সবকিছুর সমন্বয় করে শ্রমিক স্বস্তিতে না থাকলে দেশ স্বস্তিতে থাকবে না।’

জাতীয় পার্টির এই এমপি বলেন, ‘একটা খাতের উন্নয়ন হচ্ছে মানে হলো— সে খাতের শ্রমিকদেরও উন্নয়ন করতে হবে। আমরা গার্মেন্টস মালিকদের চকচকে বাড়ি দেখি, কারখানাও চকচকে দেখছি। গার্মেন্টস শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের উন্নতি দেখছি না। সকালে যখন হাঁটি, তখন দেখি হাজার হাজার মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে, সবাই লিকলিকে। কারও স্বাস্থ্য ভালো না, খেতে পারে না ঠিকমতো। ডিম খায় না সপ্তাহে একদিনও। ডালভাত খায়।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিকরা অনেক দুর্ঘটনার শিকার হয়, কিন্তু মালিক পক্ষ সেভাবে যত্নশীল না। যদিও আইনি কাঠামোতে আছে— তিন দিনের বেশি হাসপাতালে থাকলে তারা দেখবেন, কিন্তু সেটা দেখে না। আজকে তাদের সেই পরিবেশও নাই, পরিবহনও নাই । বাচ্চাদের দেখার জন্য ডেকেয়ার সেন্টার নেই। হাসপাতাল নেই। বেতন-ভাতা কম। অনেক সমস্যায় জর্জরিত শ্রমিকেরা। এ দিকটা খেয়াল করা দরকার। মালিকেরা টাকার পাহাড় গড়বে, আর শ্রমিকেরা প্রয়োজন মতো অর্থ পাবে না, তা মানবিক না। মানবিকভাবে দেখলে তাদের স্বার্থগুলো পূরণ করতে পারি।’

জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান এমপি বলেন, ‘কিছু কিছু গার্মেন্টস মালিকের অনেক টাকা, তারা বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করেছেন। শ্রমিকদের অনেক কষ্ট।’

ফখরুল ইমাম বলেন, ‘আজকে গার্মেন্টস শিল্প খুব মুশকিলে আছে। সারা দিন কাজ করে নিজের খরচটুকু উপার্জন করা না গেলে, সেই কাজটার স্বার্থকতা থাকে না। সেটা জোর করে কাজ করার শামিল হয়। এদিকে সরকার ও গার্মেন্টস মালিকদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।’

বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল পাস

কোনও প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মোট সংখ্যা তিন হাজার পর্যন্ত হলে— সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন করতে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগবে। আর মোট শ্রমিকের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি হলে শতকরা ১৫ ভাগের সম্মতি হতে হবে। এই বিধানসহ শ্রম আইনের বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী এনে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল–২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি পাস হয়।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ২০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষরযুক্ত আবেদন লাগে। সেটিকে এখন ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে।

২০০৬ সালে দেশে প্রথম শ্রম আইন করা হয়। এরপর আইনটি একাধিকবার সংশোধন করা হয়। এই আইনটি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কিছু পর্যবেক্ষণ ও উদ্বেগ ছিল।  সরকার চলতি মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে এই আইনটি আবার সংশোধনে করলো।

বিলে বলা হয়েছে, কোনও প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত শ্রমিকদের মোট সংখ্যা তিন হাজার পর্যন্ত হলে শতকরা ২০ ভাগ এবং তিন হাজারের বেশি হলে শতকরা ১৫ ভাগ ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য না হলে, তা নিবন্ধনের অধিকারী হবে না। একই মালিকের অধীন একাধিক প্রতিষ্ঠান যদি একই শিল্প পরিচালনার উদ্দেশ্যে একে অপরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সম্পর্কযুক্ত হয়, তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান যেখানেই স্থাপিত হোক না কেন, তা একটি প্রতিষ্ঠান বলেই গণ্য হবে।

এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানপুঞ্জ বলতে কোনও নির্ধারিত এলাকায় একই প্রকারের কোনও নির্ধারিত শিল্পে নিয়োজিত এবং অনধিক ২০ জন শ্রমিক নিযুক্ত আছেন— এ ধরনের সব প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়।

বিদ্যমান আইনে বলা আছে, প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন করতে হলে সেখানকার মোট শ্রমিকের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ এর সদস্য হতে হবে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে,  এক্ষেত্রে ২০ শতাংশ শ্রমিক সদস্য হলে ট্রেড ইউনিয়নের অনুমোদন মিলবে।

এছাড়া বিলে নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৮দিন বাড়িয়ে ১২০ দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে— কোনও মালিক তার প্রতিষ্ঠানে সজ্ঞানে কোনও নারীকে তার সন্তান প্রসবের অব্যাবহিত পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে কোনও কাজ করাতে পারবেন না, বা কোনও নারী ওই সময়ের মধ্যে কোনও প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন না।

বিলে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের বিধানাবলি হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রযোজ্য হয়, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রেও সেভাবে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে সরাসরি আপিল বিভাগে।

/ইএইচএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
আবারও শ্রম ভবনের সামনে বিক্ষোভ করবেন টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা
গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হলে পোশাক শিল্পে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি সম্ভব
শ্রমিক-মালিকের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাবে: অধ্যাপক তামিজী 
সর্বশেষ খবর
আমের এই আচার বানিয়ে ফেলা যায় তেল ছাড়াই
আমের এই আচার বানিয়ে ফেলা যায় তেল ছাড়াই
২০২২ সালের খসড়া চুক্তিকে কেন্দ্র করে শান্তি আলোচনা চায় রাশিয়া
২০২২ সালের খসড়া চুক্তিকে কেন্দ্র করে শান্তি আলোচনা চায় রাশিয়া
তিনি এখন হলিউডের শীর্ষ কাঙ্ক্ষিত ব্যাচেলর!
তিনি এখন হলিউডের শীর্ষ কাঙ্ক্ষিত ব্যাচেলর!
সাবেক এমপি শামীমা কারাগারে
সাবেক এমপি শামীমা কারাগারে
সর্বাধিক পঠিত
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ