জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি দলকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে অভিযোগ তুলে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাম দলগুলো। মঙ্গলবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই সংশয়ের কথা জানান দলের নেতারা। প্রায় একই ধরনের মত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সেরও।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন যে দলগুলোকে আলোচনায় ডাকছে, সেখানে একটি নির্দিষ্ট দল এবং তাদের মিত্রদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এতে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’
ঐক্যমত্য কমিশনের সভাপতির আগের বক্তব্য উল্লেখ করে আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, ‘ঈদের আগে দেওয়া বক্তব্যে ছয় দফা সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে পরবর্তী সংসদের ওপর সিদ্ধান্ত নির্ভর করার যে ইঙ্গিত ছিল, তা কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।’
জুলাই সনদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদ বা গণভোট ছাড়া কোনো কার্যকর পথ নেই।’
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা জানান, ‘আজকের আলোচনায় ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটি, নারী আসন, উচ্চকক্ষ এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয় ছিল।’
৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে দলের অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে চাই ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হোক। তবে ঐকমত্যের স্বার্থে অর্থবিল ও আস্থা ভোটের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মেনে নেওয়া যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনী ও যুদ্ধাবস্থা নিয়ে বিএনপির কিছু প্রস্তাব ছিল। এ বিষয়ে আমাদের ভিন্নমত রয়েছে, বিশেষ করে সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত ও ভোটদানের অধিকার থাকা উচিত।’
‘একটি দেশ যুদ্ধে যাবে কি না, সে সিদ্ধান্তে সর্বদলীয় ঐকমত্য থাকা দরকার। জাতীয় নিরাপত্তার মতো বিষয়ে সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি।’
নারী আসন ও স্থায়ী কমিটি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১০০টি নারী আসনে সরাসরি ভোট ও ৪টি স্থায়ী কমিটির বাইরেও স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দিতে হবে—এটাই এনসিপির অবস্থান।’
একই বিষয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘দেশবাসীর জানা উচিত, ঐক্যমত্য মানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মত নয়। পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য ছাড়া কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের প্রস্তাব ছিল, আগামীর ফ্যাসিবাদ ঠেকানো এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়া। তবে এসব সংস্কার করবে নির্বাচিত সংসদ। সরকার যেন কোনও এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ না করে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’