ভারত-বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টের আগে হুট করেই সাকিব আল হাসান টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন। তিনি বলেছেন, দেশে ফিরেনিরাপত্তা পেলেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ খেলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চান। যদিও বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, সাকিবের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি বোর্ডের দেখার সুযোগ নেই। এদিকে নতুন বোর্ড পরিচালক ও সাকিবের মেন্টর নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক পট পরিবর্তন না হলেও বাঁহাতি অলরাউন্ডার অবসরের সিদ্ধান্ত নিতেন। তিনি চান, সাকিব ঘরের মাঠে শেষ টেস্ট খেলার সুযোগ পাক।
পুরো ক্যারিয়ারে সাকিব কোনও সমস্যায় পড়লেই ছুটে গেছেন ফাহিমের কাছে। খুব কাছ থেকে তাকে বেড়ে উঠতে দেখা ফাহিম মনে করেন, সাকিবের এই সিদ্ধান্তের পরিকল্পনা আগে থেকেই নেওয়া, ‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যেমন কথা হয়েছে, আমার সঙ্গেও তেমন কথা হয়েছে। আমার মনে হয় ও শুধু নিজের ক্রিকেট নিয়েই ভেবেছে, তা না। বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভেবেছে। এগুলো নিয়েও আলাপ হয়েছে- ২০২৬ বিশ্বকাপে কারা খেলবে, কখন থেকে তাদের সুযোগ দেওয়া উচিৎ, শুরু করা উচিৎ। আমি শুরু থেকেই জানতাম দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলে ওর অবসর নেওয়ার কথা। বেশ কিছু দিন আগেই আলাপ হয়েছিল। একেবারে হঠাৎ করে হয়েছে, তা না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও আমার মনে হয় এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। নিজেও আস্তে আস্তে উপলব্ধি করেছে কম কম খেলা দরকার, যাতে ওর শারীরিক সক্ষমতার সঙ্গে মিলিয়ে খেলতে পারে।’
কানপুরে চলছে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট। আগামী মাসে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ওই সিরিজ সাকিবের খেলা নিয়ে সংশয় আছে। কেননা ৫ আগস্ট হত্যা মামলার আসামী করে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এই অবস্থায় দেশে ফিরলে গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতেও সাকিবের আশা, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজ মাঠে দর্শকদের সামনে বিদায় নিতে পারেন।
ফাহিমও সেটাই চাইছেন, ‘আজকেও (বৃহস্পতিবার) যখন ওর ইন্টারভিউ দেখছিলাম, ওর কণ্ঠস্বর খুব স্বাভাবিক শোনাচ্ছিল। জানি ওর মনের ভেতর অনেক কিছু বয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে ওর অবদান আমরা সবাই জানি। হয়তো অনেকে সামনাসামনি স্বীকার করি না। সবার মনের মধ্যে ও কোনও না কোনোভাবে থেকে যাবে। কারও কাছে ইতিবাচকভাবে, কারও কাছে নেতিবাচকভাবে। ঘরের মাঠে শেষ টেস্ট খেললে সবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে অবসর নিলে ভালো হতো।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে সাকিব অবসরের ঘোষণা দেন। টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরও নিলেও যদি...কিন্তু... রেখে দিয়েছেন! তিনি বলেছিলেন, ‘আমার তো মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে আমি শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি বিশ্বকাপে। তবে আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলতে থাকি, ছয় মাস-এক বছর পরে যদি বিসিবি মনে করে আমার টি-টোয়েন্টিতে অবদান রাখার সুযোগ আছে, আমি পারফর্ম করছি এবং ফিট আছি, তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজেকে টি-টোয়েন্টিতে দেখছি না।’
সাকিবের টি-টোয়েন্টি ভবিষ্যৎ নিয়ে ফাহিম স্পষ্ট করে কিছু না বললেও তার কথাতে কিছু ধারণা পাওয়া যায়, ‘দুটো টেস্টে ওর যে ব্যাটিং দেখেছি, সাম্প্রতিক সময়ে এমন ব্যাটিং দেখিনি। খুব সংগঠিত ব্যাটিং। যে পরিস্থিতিতে ব্যাট করেছে, সেটা আশাবাদী করে। সামনে হয়ত ওকে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলতে দেখবো। আমার ধারণা সেখানে ও ভালো ব্যাটিং করবে।’