সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে হাভিয়ের কাবরেরা শিলংয়ের ভিভান্তা হোটেলের ব্যাংকুয়েট হলের ভেতরে ঢুকে এদিক-সেদিক দেখে নিচ্ছিলেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি কেমন হতে পারে সেটাই হয়তো আন্দাজ করছিলেন। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচকে সামনে রেখে হলের প্রায় অধিকাংশ অঙ্গন ছিল পরিপূর্ণ। এরমধ্যে বাংলাদেশ থেকে আসা সাংবাদিকদের উপস্থিতি-ই বেশি। পরবর্তীতে প্রশ্নও এসেছে বেশি। তবে হাভিয়ের কাবরেরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একের পর এক উত্তর দিয়ে সেসব সামলেছেন। তাতে সারকথা হলো- ভারতের বিপক্ষে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামবে লাল-সবুজ দলের সেনানিরা।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ভারত। ভারতের র্যাঙ্কিং ১২৬, বাংলাদেশ আছে ১৮৫তম স্থানে। হেড টু হেডেও ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে জামাল-তপুরা। দুই দলের ৩১ বারের সাক্ষাতে ১৬ ম্যাচেই জয়ী হয়েছে সুনীল ছেত্রীরা। বাংলাদেশের জয় মাত্র তিনটিতে। ড্র হয়েছে ১২টি।
ভারত বাংলাদেশের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৯৭৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর, এশিয়ান গেমসে। সেই ম্যাচে ৩-০ জিতেছিল ভারত। বাংলাদেশ তাদের প্রথম জয় পায় ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর, দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে। সেবার লাল সবুজের প্রতিনিধিরা জেতে ২-১ গোলে। সর্বশেষ ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ভারতকে হারানেরা কীর্তি দেখাতে পেরেছিল। তাছাড়া শেষ পাঁচ লড়াইয়ে ভারতের জয় মাত্র এক ম্যাচে। বাকি চারটি ড্র হয়েছে।
এমন পরিসংখ্যান দেখলে আপনি হয়তো চিন্তা করবেন দুই দলের ম্যাচে এমন উত্তেজনা কিংবা সমানে সমানে লড়াইয়ের আভাস কেন? কিন্তু নানান কারণে এমনটি হয়ে আসছে। ভারত বেশি ম্যাচ জিতলেও বাংলাদেশ সবসময় তাদের বিপক্ষে লড়াই করে আসছে। অনেক সময় অল্পের জন্য ড্র হয়েছে ম্যাচ।
তাই তো তিন বছর ধরে বাংলাদেশ দলের কোচ হয়ে থাকা স্প্যানিশ কাবরেরাও বলছেন,‘আমি মনে করি, এটা খুবই রোমাঞ্চকর ম্যাচ হবে। আমরা ভীষণ অনুপ্রাণিত। ইতোমধ্যে ২৪ দিন এই ম্যাচের জন্য কঠোর অনুশীলন এবং পরিশ্রম করেছি, যেটা লম্বা সময়। ভীষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হবে। আশা করি, ভারতের জন্য সবকিছু কঠিন করে তুলতে পারবো আমরা।’
শিলংয়ে আগেভাগে এসেও অনুশীলনের জন্য ভেন্যু নিয়ে কম জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়নি। এ নিয়ে প্রশ্ন ছুটে গেলে কাবরেরা বলেছেন,‘এসব বিষয় নিয়ে অনেক শোরগোল হয়েছে। সম্ভবত বিষয়গুলো আরও ভালো হতে পারত, কিন্তু আমাদের কাছে বিষয়টা অতীত। ওগুলো নিয়ে কোনও অজুহাত দাঁড় করাতে চাই না। শেষ পর্যন্ত আমরা মূল মাঠে আজ অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছি। এই সুযোগেরে সর্বোচ্চটা নেওয়ার চেষ্টা করবো। যাই হোক, আমরা প্রস্তুত। আমরা সেরা ফ্যাসিলিটিজ নিয়ে অনুশীলন করতে পারিনি, কিন্তু সেরা প্রস্তুতিই নিয়েছি। তো ওই বিষয়গুলো আমাদের ভাবনায় এখন আর নেই।’
বাংলাদেশ দলে যোগ দিয়েছেন হামজা চৌধুরী। অন্যদিকে ভারতীয় দলে অবসর ভেঙে ফিরেছেন সুনীল ছেত্রী। কাবরেরা মনে করছেন, তাতে ম্যাচটি আরও জমজমাট হবে,‘আমি মনে করি, হামজার আসা এবং সুনিলের ফেরা আরও রোমাঞ্চকর বিষয়। এটা খুব, খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হতে যাচ্ছে। তবে নিশ্চিতভাবেই এটা কেবল ওই দুজনের ম্যাচ নয়, যদি আগামীকাল জিতি, সেটা কেবল হামজার জন্য নয়। হামজা আসায় সেটা নিশ্চিতভাবে আমাদেরও আরও ভালো দলে রূপ দিয়েছে, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আমি মনে করি, সুনিলের ফেরাও ভারতকে আরও ভালো দল করেছে। কিন্তু আগামীকাল একটা দল জিতবে। ভারতের প্রতি আমাদের অনেক শ্রদ্ধা আছে।’
বাংলাদেশ দলের হয়ে চার বছর ধরে কোচিং করাচ্ছেন কাবরেরা। কখনই ভারতের বিপক্ষে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা হয়নি। এবার সেটা হতে যাচ্ছে। কালকের ম্যাচ নিয়ে কাবরেরা নিজেও বেশ রোমাঞ্চিত। কেননা এমন ‘ডার্বির’উত্তেজনা আগে কখনও পাননি। খেলোয়াড়দের পাশাপাশি তিনি নিজেও যেন মানসিকভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। তার ভাষায়,‘আবারও বলছি, আমি আসলেই অনুভব করছি, আগামীকালের জন্য আমরা প্রস্তুত। নিশ্চিতভাবে ভারতের সিনিয়র দলের বিপক্ষে আমার কোচ হিসেবে খেলার প্রথম অভিজ্ঞতা হবে। আমরা জানি, ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ভালো নয়। আমরা জানি, ২০০৩ সালের পর বাংলাদেশ তাদেরকে হারাতে পারেনি। কিন্তু আবারও বলছি, আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী এবং অতীতের চেয়ে এবার বেশি শক্তিশালী। তা কেবল পারফরম্যান্সের দিক থেকে নয়, মানসিকভাবেও। আমরা মানসিকভাবেও ভীষণ শক্তিশালী অনুভব করছি।’