পুরো ঢাকায় ঈদের ছুটিতে সুনসান নীরবতা থাকলেও জাতীয় স্টেডিয়ামের চারপাশ ব্যতিক্রম। দুপুরের আগে থেকে ঢাকা স্টেডিয়ামের সব গেটের বাইরে মানুষের ঢল! একে একে জড়ো হতে থাকেন দর্শক-সমর্থকরা। তাদের কেউ কেউ বাংলাদেশের জার্সি পরে এসেছেন, কেউবা লাল সবুজ পতাকা নিয়ে। তাদের মাঠে ঢোকার লাইন ছাড়িয়ে যায় প্রায় দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত। সব কিছুই এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচকে ঘিরে। যদিও দেখে মনে হচ্ছিল কাতার বিশ্বকাপের ম্যাচে যেমন ভিড় দেখা গিয়েছিল ঠিক তেমনই!
এই মাঠেই আজ সন্ধ্যা ৭টায় মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুই দল। আগেভাগে স্টেডিয়ামে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে বলেই দর্শকদের এত ভিড়। যা জন্ম দিয়েছে আলোচনার। ঢাকা স্টেডিয়ামকে ঘিরে দর্শকদের এমন উন্মাদনা সবশেষ কবে দেখা গিয়েছে?
বাংলাদেশের ফুটবলে ঐতিহ্য বেশ পুরনো। ৭০, ৮০ ও ৯০-এর দশকে উন্মাদনা ছিল আকাশচুম্বী। মাঝে ফুটবলের অবনতিতে দর্শকরা আগের মতো কম সাড়া দিচ্ছিলেন। তবে জাতীয় দলের ম্যাচে গ্যালারিতে তাদের উপস্থিতি সব সময় ছিল। মেয়েদের ফুটবলেও তাই। তবে সারা দেশব্যাপী ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা বোধকরি সবশেষ সুপার কাপে আবাহনী-মোহামেডান ফাইনালকে ঘিরে। বিশেষ করে তৎকালীন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের (বর্তমানে জাতীয় স্টেডিয়াম) আশপাশ ছিল লোকারণ্য। ভেতরে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না, অথচ তখনও বাইরে হাজারো দর্শক!
এক যুগ আগের সেই সময়ের পর আজ সেই স্মৃতি ফিরে এসেছে। বাংলাদেশ- সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট নিয়ে আগে থেকেই তো হাহাকার। আজও মাঠের বাইরে টিকিট না পেয়ে কেউ কেউ কালোবাজার থেকে কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এমনই একজন ফুটবলমোদী বাদল খান বাংলাদেশের পতাকা জড়িয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘কিছুতেই অনলাইনে টিকিট কিনতে পারিনি। আমার এই মাঠে সাম্প্রতিক সময়ে কোনও খেলা মিস হয়েছে কমই। তাই আজও খেলা দেখতে এসেছি। তবে টিকিট পাচ্ছি না। দাম অনেক চাইছে, চেষ্টা করে যাচ্ছি যদি একটা টিকিট পাওয়া যায়।’
অনলাইনে সব টিকিট বিক্রির কথা বলা হলেও আদতে কালোবাজারির হাতে কিছু টিকিট দেখা গেছে। তাদের হাতে সাধারণ গ্যালারির টিকিট ২ হাজার করে বিক্রি হচ্ছে। তবে ২২ হাজার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়ামে বেশিরভাগই আগে থেকে টিকিট নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তাদের একজন প্রায় ষাটোর্ধ্ব আজাদ বকুল বেসরকারি চাকুরে। গেন্ডারিয়া থেকে বন্ধু ব্যাংকার হান্নান খান হেলিমকে নিয়ে এসেছেন খেলা দেখতে।
৮০ দশকে নিয়মিত মোহামেডানের খেলা দেখতে আসতেন বকুল। আজ বহু বছর পর আবারও এসেছেন। হামজা-শমিতে নতুন করে ফুটবলে জোয়ার এসেছে। তাতেই নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন সবাই। এ কে আজাদ বকুল তাই বলছিলেন, ‘একসময় আমি আমার বড় ভাই প্রয়াত এস এম ফারুক নিয়মিত মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ দেখতে আসতাম। মাঝে অনেক বছর আসা হয়নি। এবার নতুন এক বাংলাদেশের ফুটবল দেখতে এসেছি। হামজা খেলছেন। জামালসহ অন্যরা আছেন। আশা করছি আজ আমরা জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারবো। দেশের ফুটবল পাবে নতুন দিশা।’
ঘরোয়া ফুটবলের নিয়মিত খবর রাখেন ব্যাংকার আল আমিন ভূঁইয়া। গোলাপবাগ থেকে এসেছেন। হাতে বাংলাদেশের পতাকা। অনেক কষ্টে একটা টিকিট সংগ্রহ করেছেন। তার কথা, ‘আমি আবাহনী লিমিটেডের সমর্থক। মাঠে নিয়মিত যাওয়া না হলেও খবর রাখি। হামজাসহ প্রবাসীরা এসে দেশের ফুটবলে নতুন করে জোয়ার এনেছে। আমরাও নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছি।’
সদ্য এইচএসসি পাস করা তাহসিন হাসান রাত জেগে ইউরোপিয়ান লিগ দেখেন। ঘরোয়া ফুটবলের পাশাপাশি জামালদের আন্তর্জাতিক ফুটবলের খবরও রাখেন। শেষ মুহূর্তে এসে আজকের ম্যাচের টিকিট পেয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত, ‘বাবার সঙ্গে খেলা দেখতে এসেছি। হামজা চৌধুরী-শমিত সোমরা
খেলছেন। তাদের খেলা দেখতে এসেছি। আমরা চাই বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা করতে। যেন একসময় এশিয়ার শীর্ষ ফুটবল দেশ হতে পারে।’
এটা গেলো সাধারণ দর্শকদের কথা। বাফুফের যারা প্রাণ সেই ক্লাবগুলো মাত্র দুটি করে টিকিট পেয়েছে। কাউন্সিলরদের অবস্থাও তথৈবচ। প্রেসবক্সের ওপরের জায়গাও অন্য কারও কাছে (বিক্রি) চলে গেছে! এ নিয়ে ক্ষোভও কম নয়। তারপরও সবার প্রত্যাশা বাংলাদেশ আজ জিতুক। সিঙ্গাপুরকে হারিয়ে ফুটবলের নতুন জয়গান হোক!