X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোদিকে হারাতে মমতার ‘গেম প্ল্যান’

কলকাতা প্রতিনিধি
১৬ জুলাই ২০২১, ২৩:০৫আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২১, ২৩:০৬

২০২১ সালের বিধানসভার ভোটে বিপুল জয়ে সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধীদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। ২০২৪ মমতার নেতৃত্বেই মোদি সরকারকে সরানোর আশায় বুক বাঁধছে বিরোধী শিবির। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতার এই লড়াইয়ে তিনি বঙ্গ বিজেপিকে হারাননি, হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এবারের বিধানসভা ভোটের আগে যে গেরুয়া ঝড়ের পূর্বভাস দেখা দিয়েছিল তা একাই সামলে তৃণমূলকে তৃতীয়বারের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতার নিরীখে ক্ষমতায় এনেছেন মমতা। এবার সেই গেম প্ল্যানেই ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে মোদিকে পরাজিত করতে চাইছেন তিনি। এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের।

পশ্চিমবঙ্গের ভোটে মমতার সঙ্গে বিজেপির মোদিসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের লড়াই স্বাভাবিকভাবেই গোটা দেশের নজরে ছিল। ভোট প্রচারে নিজেকে আহত বাঘিনী বলেছিলেন মমতা। জয়ের পর মমতা দাবি করেন,  পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এই পরাজয় আসলে দেশেও তাদের পতনের সূত্রপাত। বাংলায় ভোটের ফলাফল সামনে আসতেই সমাজবাদী পার্টি থেকে শিবসেনা, আপ থেকে ন্যাশনাল কনফারেন্স, সব বিরোধী দলের নেতারাই মমতার লড়াকু, একরোখা ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উড়ে এসেছে একের পর এক টুইট ও বিবৃতি। বলা হয়েছে, মোদিকে হারাতে মমতাই হতে পারেন একমাত্র মুখ। পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে স্বপ্ন দেখা বিজেপির গেরুয়া ঝড় পালটা মমতা-ঝড়ে মাঠে মারা পড়লো। নন্দীগ্রামে মমতা হারলেও তিনি আসলে গোটা বিজেপিকেই হারালেন। রাজনীতির এই মারপ্যাচে শেষ পর্যন্ত মমতা জিতে গেলেন। সেই 'ফর্মুলা'টাই এখন গোটা দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে হাতিয়ার করতে চাইছে বিরোধীরা।

তৃণমূলও মনে করছে, এবারের বাংলার ভোটে জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব জাতীয় রাজনীতিতে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। মোদিকে হারানো যে তার পরবর্তী লক্ষ্য, সেটা বিধানসভা ভোটে জয়লাভের পরেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা নিজেই। এই পরিস্থিতিতে দ্বিমুখী কৌশল নিতে চলেছে তৃণমূল। এমনটাই সূত্রের খবর।

 

জানা গেছে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারানোর লক্ষ্যে এখন থেকেই শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, জাতীয়স্তরে লড়াই শুরু করতে চাইছেন মমতা। ইতোমধ্যে রাজ্য জয়ের অন্যতম কাণ্ডারী প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তিনি জাতীয় স্তরে তৃণমূলের বিস্তার ছাড়াও সর্বভারতীয় স্তরে মোদি বিরোধী দলগুলিকে একছাতার তলায় এনে নতুন প্রচার পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন। তিনি শরদ পাওয়ারসহ বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও শুরু করে দিয়েছেন। ঠিক একইভাবে দেশজুড়ে সাংগঠনিক কাজ শুরু করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। খোদ যোগি রাজ্যে সম্প্রতি তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলকে।

সম্প্রতি তৃণমূলে এসেছেন বিজেপির একদা হেভিওয়েট তথা সাবেক কেন্দ্রীয়মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা। তার মতে, ‘২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা বড় ভূমিকা পালন করবেন। আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে সমস্যা নেই। অন্যতম প্রবীণ বিরোধী নেতা শরদ পাওয়ার এবং শিবসেনা নেতা ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে এখন মমতার সঙ্গে আছেন। অখিলেশের সঙ্গেও মমতার ভালো সম্পর্ক। বিজেপিবিরোধী আঞ্চলিক দলগুলোর একজোট হতে কোনও অসুবিধা হবে না। প্রশ্নটা কংগ্রেসকে নিয়ে। কংগ্রেসকেও বোঝানোর কাজ চলছে।’

এ প্রসঙ্গে তার দাবি, ‘বিরোধীদের মধ্যে কংগ্রেস একমাত্র জাতীয় দল। বাকিরা সবাই মূলত আঞ্চলিক দল। ফলে কংগ্রেস কীভাবে এই জোটে আসবে, কী শর্তে আসবে, সেসব তাদের ঠিক করতে হবে। মমতার সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর সম্পর্ক খুবই ভালো। সোনিয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে খুবই স্নেহ করেন। তাই কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলার কাজটা মমতাও করতে পারেন। বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলোর প্রায় সাড়ে তিনশ লোকসভা আসনে প্রভাব রয়েছে। তাই কংগ্রেস আঞ্চলিক দলের জোটকে উপেক্ষা করতে পারবে না। আর তাদের যে অবস্থা, তাতে আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোটে যেতে হবে।’

সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ছোট দলগুলোকে নিয়ে জোট করতে আগ্রহী। মায়াবতীর দলের সঙ্গে তিনি হাত মেলাতে চান না।

২০১৪ লোকসভা ভোটে প্রথমবার জিতে ক্ষমতায় আসার সময় থেকেই মমতার কট্টর মোদি বিরোধিতা শুরু। এরপর থেকে সময় যত বেড়েছে তার মোদি বিরোধিতার ঝাঁজও বেড়েছে।। ধর্মীয় মেরুকরণ, সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুলে ধারাবাহিকভাবে বারবার সরব হয়েছেন। নোট বাতিল থেকে জিএসটি নীতি, সিএএ, এনআরসি'র মতো বিভিন্ন ইস্যুতে সবচেয়ে জোরালো বিরোধী কণ্ঠস্বর ছিলেন মমতাই। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতা একাই উদ্যোগ নিয়েছিলেন বিজেপিবিরোধী দলগুলোকে একছাতার তলায় আনতে। ঘোষণা করেছিলেন, ভোটে জিতে বিরোধী জোটই সরকার গড়বে। কিন্তু সে যাত্রায় তা সম্ভব হয়নি। প্রবল মোদি ঝড়কে সঙ্গী করে ফের ক্ষমতায় আসে বিজেপি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন বলেই মনে করছে তৃণমূল। কারণ ২০২১ এর বিধানসভার ভোট অনেক সমীকরণই বদলে দিয়েছে। মমতা এই ভোটে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি মোদিকে হারাতে পারেন। মমতার এই সাফল্য দিয়ে ২০২৪ বাজিমাত হতে পারে বলে মনে করছে বিরোধী শিবির। তাহলে কী ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন হতে চলেছে মোদি বনাম মমতা?– এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে।

/এএ/
সম্পর্কিত
সরকার ক্ষমতায় থাকতে ভোটের ওপর নির্ভর করে না: সাকি
সীমান্তে কোনও ধরনের হত্যাকাণ্ড চায় না বাংলাদেশ
কেক কেটে আর কাচ্চি বিরিয়ানিতে বন্ধুত্বের উদযাপন দিল্লি ও ঢাকার
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো