X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জার্নাল সমাচার: ভালো বনাম প্রিডেটরি জার্নাল

ড. এ কে এম হুমায়ুন কবির
০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:৪১আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:১৪
ড. এ কে এম এম হুমায়ুন কবির আমাদের দেশে বর্তমানে সব পর্যায়ে গবেষণার ওপর বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গবেষণা শুধু নিজের জন্য নয়, দেশের জন্য, সমাজের জন্য। একেকটি গবেষণা নতুন কিছু সৃষ্টির লক্ষ্যে এগোতে থাকে, আর এ গবেষণার নতুন ফল প্রকাশ করতে হলে কনফারেন্সে উপস্থাপনা করতে হবে কিংবা পাঠাতে হবে জার্নালে।

অবশ্যই ভালো জার্নাল বা গবেষণা প্রকাশনার গুরুত্ব সর্বজন স্বীকৃত। গবেষণা প্রকাশনা জগতে নিম্নমানের অজস্র জার্নাল রয়েছে যেগুলো ‘প্রিডেটরি জার্নাল’  (যারা জার্নাল প্রবন্ধ, বই প্রভৃতি একাডেমিক গুণগত মান পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই না করে কেবল অর্থের বিনিময়ে প্রকাশ করে) নামেই সর্বাধিক পরিচিত, যার  প্রকাশনাগুলোকে বিজ্ঞানমহল অত্যন্ত নেতিবাচক দৃষ্টি দেখে থাকে।

সেজন্যই যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান ‘জেফরি বিয়াল’ (যিনি এ ধরনের জার্নালকে প্রিডেটরি জার্নাল হিসেবে অভিহিত করেন) বিশ্বব্যাপী প্রিডেটরি জার্নাল-এর একটি তালিকা করেন, এই তালিকা (https://beallslist.net) ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে।

জার্নালের মান বোঝার জন্য একটা পরিমাপ হলো জার্নালটির ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর। ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর হলো কোনও জার্নালে প্রকাশিত কোনও পেপার বা নিবন্ধ অন্যত্র কতবার রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার বা সাইট করা হয়েছে, তার একটা পরিমাপ। কোনও জার্নালটির ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর দশমিক সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়, যেমন- ০.৮, ১.১, ৫.৩…. ইত্যাদি। ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের মান যত বেশি হয়, জার্নালের মান তত ভালো হয় বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই প্রিডেটরি জার্নালসমূহ ভুয়া ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর  প্রচার করে বেড়ায়।

আচ্ছা, এখন প্রশ্ন হলো, কারা আছে প্রিডেটরি জার্নালের পেছনে? ভালো-মন্দ সব খানেই ব্যবসা চলে এসেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অনেক আগে থেকেই কিছু অসাধু লোক টাকা কমানোর ধান্ধায় এই প্রিডেটরি জার্নাল চালু করেছে, যার মধ্যে ইন্ডিয়া ও চীনভিত্তিক জার্নালগুলোই প্রবল। আচ্ছা,  প্রিডেটরি পাবলিকেশনের শিকার কারা হয় বেশি? বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশের গবেষকদের, বিশেষ করে শিক্ষার্থী/তরুণ গবেষকদের অধিকাংশের পিয়ার-রিভিউ, সাইটেশন, জার্নাল সাইটেশন রিপোর্ট ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় তারাই সবচেয়ে বেশি এই প্রিডেটরি জার্নালের শিকার হয়। কিছু ক্ষেত্রে কোনও কোনও শিক্ষক বা গবেষক আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃত একটি জার্নালে কষ্টকর পিয়ার রিভিউ প্রসেসের মধ্য দিয়ে গিয়ে একটি পেপার ছাপানোর ঝক্কি-ঝামেলা হয়তো নিতে চান না। তাই সংক্ষিপ্ত পথে, প্রিডেটরি জার্নালে প্রবন্ধ  প্রকাশ করে। প্রিডেটরি জার্নাল- পাবলিকেশন ফি’য়ের বিনিময়ে, নামমাত্র সময়ে পেপার জমা দেওয়ার ( হয়তো ১-২ সপ্তাহ) মধ্যে এরা এক্সেপ্টেন্স নোটিফিকেশন পাঠিয়ে, ফি নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পাবলিশ করে দেয়! অথচ একটা ভালো পিয়ার রিভিউড জার্নালে পেপার রিভিউ হতে ২-৫ মাস কিংবা তারও বেশি সময় লাগে। আচ্ছা, প্রিডেটরি জার্নালের শিকার কারা না হয় বোঝা গেলো, কিন্তু  প্রিডেটরি জার্নাল চেনার উপায় কী? একটা সহজ উপায় হলো- এরা আপনার পেপার ছাপানোর জন্য অবশ্যই টাকা চাইবে, আপনি টাকা দিতে না চাইলে দরকষাকষি করবে, অথবা আপনাকে ছাড় দেবে এবং কোনও রিভিউ রিপোর্ট দেবে না। অনেক সময় টাকা দিতে না পারলেও আপনি একদিন হঠাৎ দেখবেন আপনাকে বলা ছাড়াই পেপার পাবলিশ করে দিতে পারে।

তাই ভালো মানের জার্নাল শনাক্তকরণ একজন নবীন গবেষকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রিডেটরি জার্নাল চেনা গেলো, কিন্তু  ভালো  জার্নাল চেনার উপায় কী?  ভালো জার্নাল বোঝার সবচেয়ে কার্যকর উপায়টি হলো প্রথমেই যেকোনও জার্নালের ‘ইন্ডেক্সিং’ বা ‘ইন্ডেক্সড ইন’সেকশনে গিয়ে যদি, ‘এসসিআই, স্কোপাস, ক্ল্যারিভেইট, থমসন রাউটার, পাবমেড ও শীমাগো’ এই ৬টার অন্তত ২/৩টি দেখতে পাওয়া যায় তাহলে মোটামুটি বলা যায় যে এটি একটা ভালো জার্নাল। ভালো মানের স্বীকৃত জার্নাল বা পিয়ার রিভিউড জার্নালসমূহ ‘ওয়েব অব সায়েস ইনডেক্সিং’ কিংবা ‘স্কোপাস ইনডেক্সিং’ অথবা এই দুটোতেই তালিকাভুক্ত থাকে। আগেই বলছি ভালো জার্নাল শনাক্তকরণের পন্থা হচ্ছে জার্নালের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর। সাধারণত যেই জার্নালের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর  ১০ বা ততধিক সেই জার্নাল যে অসাধারণ জার্নাল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এর থেকে মনে করা যাবে না যে, কোনও   ‘পিয়ার রিভিউড’ জার্নালের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ১ হলে, সেটি খারাপ। এই ব্যাপারে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, আসল না নকল ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর  বুঝবো কীভাবে? জার্নালে উল্লেখিত ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর আসল নাকি নকল সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া খুব জরুরি, জার্নালের প্রকৃত ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর  জেনে নিতে হবে ‘ক্ল্যারিভেইট’/ ‘থমসন রাউটার’-এর ওয়েবসাইট থেকে। কোনোক্রমেই অন্য কোনও ভুয়া ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর  বিশ্বাস করা যাবে না। কারণ, প্রিডেটরি কিংবা দুই নম্বর জার্নালগুলোও কিন্তু এরকম মনগড়া ভুয়া ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর অনেক সময় তাদের ওয়েবসাইটে লিখে রাখে। এতে, নবীন গবেষকদের ধোঁকা দেওয়া গেলেও, পরে উচ্চশিক্ষা কিংবা গবেষণার জন্য কোথাও সেগুলো উপস্থাপন করতে গেলে দেখা যায়, প্রকাশিত পেপারগুলোর বেশিরভাগই প্রিডেটরি জার্নাল এবং যেগুলোর কোনও ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর-ই নেই। তখন পুরোপুরি হতাশ হওয়া ছাড়া অন্য উপায় থাকে না।

তাই পরিশেষে বলতে চাই, সংক্ষিপ্ত পথে, তাড়াহুড়া করে, প্রিডেটরি জার্নালে একটি প্রবন্ধ  প্রকাশ করে একজন গবেষক তার পেশাগত জীবনে ‘আবর্জনা’ বা ‘অতিরিক্ত বোঝা’ যোগ করা ছাড়া বিজ্ঞানমহলের কাছ থেকে কিছুই অর্জন করতে পারেন না। তাই প্রিডেটরি গবেষণা প্রকাশনা থেকে সাবধান থাকুন ও দূরে থাকুন। অন্যদিকে সততা ও নৈতিকতার সঙ্গে কষ্ট করে ভালো মানের স্বীকৃত পিয়ার রিভিউড জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে পারলে বিজ্ঞানমহলে সমাদৃত হয় এবং এতে গবেষকের সুনাম ও পেশাগত উন্নতির পাশাপাশি উক্ত গবেষণার বাস্তব প্রয়োগে সমাজ তথা রাষ্ট্রের এমনকি বিশ্বের ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।

লেখক: অধ্যাপক, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

[email protected]
 
 
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ