‘প্রেম বিরহে উজ্জ্বল’-পরিচিত এই দর্শনে শত ছবি নির্মিত হলেও নতুন আরেক ছবি ‘প্রিয়তমা’। ‘প্রিয়তমা’ নামটিতে মনে হতে পারে নায়িকা কেন্দ্রিক কোনও ছবি, অথচ পুরোপুরি নায়ক নির্ভর এক ছবি ‘প্রিয়তমা’! পশ্চিম বাংলার ‘কপালকুণ্ডলা’, ‘রিমলী’ বা ‘পিলু’ সিরিয়ালখ্যাত ইধিকা পালের প্রথম বাংলাদেশি ছবি ‘প্রিয়তমা’। অসঙ্গতি ও খানিক ধীরগতির এক ছবি ‘প্রিয়তমা’। পরিচিত শাকিব খানের নতুন ‘গেটআপের’ ছবি ‘প্রিয়তমা’।
কোরবানির হাটের ইজারাদার সুজনের আদরের ভাই সুমন। সুজন কক্সবাজারের ওসমানের সাথে মাছের ব্যবসা করে। ওসমান তার কোনও পার্টনারকে জীবিত রাখে না। প্রথমে সুজনের ড্রাইভার এবং পরে সুজনকে খুন করে সে। সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালাতে চাইলেও সুমন তার ভাই সুজনের গলায় কালো দাগ দেখতে পায়। বিচিত্র কারণে মরদেহর সুরতহাল করানো হয় না, উল্টো সুমন-সুজনের বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরিস্থিতি সব জেনেও সুজনের স্ত্রীকে ওসমানের কাছে পাঠানো হয় টাকা চাইতে! ভাগ্যিস ওসমান তাকে অন্যকিছু না করে সামান্য মারধর করে ফেরত পাঠায়! শেষে ছবির কাহিনির ‘গৎ’ অনুসারে ভাইয়ের হিস্যা বুঝে নিতে সুমন যায় কক্সবাজার। সেখানে তার সাথে দেখা হয় ওসমান, এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান খালেক সাহেব ও তার মেয়ে ইতির। প্রতিশোধের আগুন বুকে পুষে সুমন দুর্বল হতে থাকে ইতির প্রতি। তখন প্রতিশোধের চেয়ে প্রেমটাই সামনে চলে আসে!
ছবিটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু শেষ হয় না। ইতি আর সুমনের প্রেম তখন মুখ্য হয়ে ওঠে। কথা ছিল ইতি অন্য কারও বউ হবে না। কিন্তু ইতির বাবা খালেক চেয়ারম্যান সুমনকে বলে সে যেন ইতিকে ভুলে যায়! ঢাকায় ফিরে সুমন আর ইতিকে পায় না ফোনে। সুমন চলে যায় কক্সবাজারে। সেখানেও নেই ইতি। ইতি কি শেষমেশ সুমনকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেললো? ইতি কি সুমনকে সত্যি সত্যি কথা দিয়েছিল নাকি শেষমেশ অন্য কোনও বাস্তবতা অপেক্ষা করেছিল সুমনের জন্য?
শিরোনামেই বলা হয়েছে ছবির গল্প পুরনো ও পরিচিত, নির্মাণও তাড়াহুড়োময়। হয়তো তাড়াহুড়োর কারণেই আবহ সংগীতে ঢেকে গেছে সংলাপের অনেকাংশ। গানের কথাও অস্পষ্ট মনে হয়েছে। ছবিতে গানের দৃশ্য সামান্য উজ্জ্বল, অন্যান্য দৃশ্যগুলো তেমন নয়। বিরতির আগে ছবি যথেষ্ট ধীর গতিময়। ছবির হাস্যরসের দৃশ্যগুলোও নতুন কিছু নয়, যদিও এটা হিমেল আশরাফের দ্বিতীয় ছবি।
ধীর গতির ছবি হলেও বিরতির পর নায়ক নায়িকার বিচ্ছেদের রসায়নটাই হয়তো দর্শকদের হলে টেনেছে। ছবিতে নায়ক সুমন ওরফে শাকিব খানের এন্ট্রি দৃশ্য এবং সংলাপটা ফিল্মি হলেও ওসমান আর খালেক চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য চরিত্রগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তিন চারটা ছোটখাটো মারপিটের দৃশ্য ছাড়াও শাকিব খান খানিক ভালো অভিনয় করেছেন এই ছবিতে। তারপরও ইতি যখন তার বিয়ের মিথ্যে গল্প বলছে তখন কিংবা ইতির শেষ বিদায়ের দৃশ্যে অন্য এক শাকিব খানের দেখা মেলার কথা থাকলেও ‘নায়ক’-এর বৃত্ত ভেঙে তিনি বের হতে পারেননি! বৃদ্ধ বয়সের গেটআপে দরজা খুলে কবরের কাছে আসার দৃশ্যটা যা কিছু ব্যতিক্রম!
ছবিটি উৎসর্গ করা হয়েছে এর কাহিনীকার ফারুক হোসেনকে। ফারুক হোসেনের সাথে হিমেল আশরাফও এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন। এই ছবির ‘প্রিয়তমা’ ও ‘ঈশ্বর’ নামের গান দুটি আলোচনায় এসেছে। ‘প্রিয়তমা’ শিরোনামের গান লিখেছেন আসিফ ইকবাল এবং সংগীতায়োজন করেছেন আকাশ সেন। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন বালাম ও কোনাল। এছাড়া ‘ঈশ্বর’ শিরোনামের গানটি লিখেছেন সোমেশ্বর অলি এবং সুর করেছেন প্রিন্স মাহমুদ। গেয়েছেন রিয়াদ। প্রিন্স মাহমুদের গানটা যত ভালো, ছবিতে গানের চিত্রায়ন ততো ভালো মনে হয়নি! ‘কোরবানি’ শিরোনামের আরও একটি গান ব্যবহৃত হয়েছে এই ছবিতে।
তারপরও এটা সত্য যে, এই ছবি বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে হলমুখো করেছে। ছবি দেখার জন্য যে উৎসব উৎসব আমেজ, টিকিট সংগ্রহ করার জন্য যে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব, টিকেট কালোবাজারি কিংবা দর্শকদের উচ্ছ্বাস; সবটা বাংলা ছবির জন্য এক সুখ বার্তা।
জয় হোক বাংলা ছবির।
প্রিয়তমা: রেটিং ৬.৫/১০
ধরন: স্যাড রোমান্টিক
কাহিনি ও চিত্রনাট্য: ফারুক হোসেন ও হিমেল আশরাফ
পরিচালক: হিমেল আশরাফ
সুরকার: আকাশ সেন, প্রিন্স মাহমুদ ও সাজিদ সরকার
ব্যানার: ভার্সেটাইল মিডিয়া
পরিবেশক: টাইগার মিডিয়া
নির্মাণ ব্যয়: আড়াই কোটি
মুক্তি: ২৯ জুন,২০০২৩
দেশ: বাংলাদেশ
ভাষা: বাংলা
সমালোচক: রম্যলেখক, সাংবাদিক ও কবি
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব