X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজাল পণ্য কিনে হও ধন্য!

রেজানুর রহমান
২২ মে ২০১৮, ১৯:১৫আপডেট : ২২ মে ২০১৮, ১৯:১৬

রেজানুর রহমান শুধু উন্নত দেশ নয়, পৃথিবীর অনেক অনুন্নত দেশেও উৎসব-পার্বণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমে যায়। ওইসব দেশে ব্যবসায়ীরা বছরের ১১ মাস সৎ উপায়ে ব্যবসা করে উৎসবের একটি মাসে ব্যবসায় ছাড় দেয়। আর আমাদের দেশে অধিকাংশ ব্যবসায়ী বছরের ১১ মাস চুরি করে। আর পবিত্র রমজান মাস এলে চুরির বদলে ডাকাতি করে। তাও আবার গোপনে নয়, প্রকাশ্যে ডাকাতি করে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ডাকাতি করতে গিয়েও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কে কত বড় ডাকাত সেটা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
আজকের এই লেখাটি লিখতে গিয়ে অনেক কষ্ট হচ্ছে। কষ্টের কারণ পত্রপত্রিকা ও প্রচার মাধ্যমের নানামুখী সংবাদ। অধিকাংশ সংবাদই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দামের ঊর্ধ্বগতিকে ঘিরে। সরকার বলছে এই রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না। কিন্তু বাজারের পরিস্থিতি তা বলছে না। একটি পত্রিকায় পড়লাম কাঁচাবাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত আছে। ফলে দাম কমে যাওয়ার ভয়ে এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ছে না। এক্ষেত্রে হয়তো তাদের একটা ষড়যন্ত্র কাজ করছে। রমজান মাসে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকবেই। কাজেই গোপনে পেঁয়াজ মজুত করে কৃত্রিম সংকট দাঁড় করিয়ে পরে চড়া দামে বিক্রি করা যাবে। কত বড় হীন চিন্তা। তাও আবার পবিত্র রমজান মাসে। শুধু কী পেঁয়াজ? এই রমজানে সেমাই আর চিনি বেশি দরকার পড়ে। পত্রিকা বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিভিন্ন ভুয়া নামধারী প্রতিষ্ঠানের সেমাই বানানোর প্রক্রিয়া দেখে শুধু বিস্মিত নয়, ভীত হয়েছি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, নিম্নমানের ঘি ও ডালডার মিশ্রণে সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। লোভনীয় প্যাকেটে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। আমরা অনেকে সেই সেমাই খাচ্ছি। ভাবা যায় এর ফলে কী পরিমাণ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বো আমরা? প্রতি বছর ঈদ এলে পচা সেমাই বানানোর এমন অনেক প্রতিষ্ঠানের খবর গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ ও প্রচার হয়। ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে জেল-জরিমানাও হয়। তবু বছরের পর বছর ধরে জনপ্রিয় এই খাদ্যে ভেজাল চলছেই। এর কি কোনোই সমাধান নেই?

আম একটি রসালো ফল। গরমকাল মানেই আমের মৌসুম। সে কারণে গরমকাল অনেকের প্রিয়। অথচ আমভীতি শুরু হয়েছে সারাদেশে। চিন্তা করা যায় একটি মৌসুমি  ফলকেও রেহাই দিচ্ছি না আমরা। একটি টেলিভিশন চ্যানেলে আম পাকানোর প্রক্রিয়া দেখে আমার নিজেরই আমভীতি শুরু হয়েছে। বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম বাজারে ছাড়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন আমের আড়তে অভিযান চালিয়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল দেওয়া বস্তা বস্তা আম প্রকাশ্যে নষ্ট করে দিচ্ছেন। যার ফলে এখন আম দেখলেই ভয় লাগে! শুধু কি আম? কলার শরীরেও দেওয়া হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। একটি টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিবেদনে দেখলাম, কলার হাটে প্রকাশ্যে কলার কাদিতে বিষাক্ত কেমিক্যাল স্প্রে করা হচ্ছে। রিপোর্টার প্রশ্ন করলেন–ভাই এই যে জিনিসটা কলার গায়ে দিচ্ছেন আপনি কি জানেন এটা এক ধরনের বিষ? কলার শরীরে স্প্রে দেওয়া সেই লোকের নির্বিকার স্বীকারোক্তি–না ভাই জানি না। শুধু জানি স্প্রে করলে কলা পাকবে। সহজেই পচবে না।

চিন্তা করুন কী ভয়াবহ পরিস্থিতি? জেনে শুনে বিষ করছি পান। আম খাবো কলা খাবো তাতেও ভয়। প্রকাশ্যে ভয় দেখাচ্ছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী। প্রচার মাধ্যমে তা প্রচার ও প্রকাশও হচ্ছে। অথচ দোষী ব্যক্তিরা সাজা পাচ্ছে না। কখনও কখনও সাজা পেলেও আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে এসে দোর্দণ্ড প্রতাপে আবার অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে।

শুধু কি খাদ্যে ভেজাল? ভেজালের রাজত্ব চলছে সড়ক মেরামতের ক্ষেত্রেও। আমাদের দেশে বর্ষা মৌসুমে রাস্তাঘাট মেরামতের কাজ জোরেশোরে শুরু হয়ে যায়। ইট সুরকি আর সিমেন্ট বালুর রাস্তায় ইট,সুরকি আর বালু থাকলেও সিমেন্ট থাকে না বললেই চলে। ফলে এক বর্ষায় রাস্তা নির্মাণ করার পর অন্য বর্ষা পর্যন্ত সেই রাস্তা আর টেকে না। এটাও জানি এবং দেখি আমরা সবাই। কিন্তু ভেজাল রোধে কারও কোনও তৎপরতা নেই।

২১ মে সকালে যখন এই লেখাটি লিখছি তখন দেশের একটি বড় পত্রিকায় পুরো পাতাজুড়ে খাদ্যে ভেজালের নানামুখী খবর পড়ে যারপরনাই অবাক হলাম। শিরোনামগুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে– নাম জালিয়াতি করে নকল নুডলস তৈরি, চার লাখ টাকা জরিমানা, ৫ মাংসের দোকানকে ডিএনসিসির জরিমানা, নিউমার্কেটের ৮ ফাস্টফুড দোকানকে জরিমানা, বিষাক্ত কেমিক্যাল যুক্ত আম জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কলার কাদিতে বিষাক্ত কেমিক্যাল...।

তাহলে খাবো কী আমরা? আমে ভেজাল, জামে ভেজাল, কলায় ভেজাল, তরমুজেও নাকি ভেজাল মেশানো হচ্ছে। সেমাইয়ে ভেজাল তো চলছে প্রকাশ্যে। এর কি কোনোই প্রতিকার নেই?

গত পরশু একটি ইফতার পার্টিতে গিয়েছিলাম। ইফতার শেষে অধিকাংশের প্লেটে দেখলাম আম আর কলা ছোঁয়নি তারা। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আম যে খেলেন না। ভয়ার্ত কণ্ঠে তিনি উত্তর দিলেন–টেলিভিশনে দেখতেছেন না আম আর কলায় কী পরিমাণ বিষ মেশানো হচ্ছে! জেনে শুনে বিষ খাবো নাকি?

কিন্তু আমরা তো অনেকেই জেনে শুনে বিষ খাচ্ছি। না খেয়ে তো উপায় নাই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এভাবে কতদিন? রমজান হলো সংযমের মাস। অথচ আমরা অনেকে সংযমের বদলে অতিমাত্রায় সাধারণ মানুষকে ঠকানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছি। ফলে পবিত্র রমজানের মূল শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে।

অথচ আমরা তো এমন ছিলাম না। ছোটবেলায় দেখেছি ঈদ উৎসব এলে সত্যি সত্যি একটা আনন্দের ঢেউ খেলে যেতো। মানুষকে ঠকানোর এমন ক্ষতিকর মানসিকতা ছিল না কারও। বড়বেলায় এসে দেখছি তার উল্টোটা। আনন্দ আছে ঠিকই কিন্তু তা যেন স্বতঃস্ফূর্ত নয়। কে কাকে কীভাবে ঠকাবে তারই প্রতিযোগিতা চলছে যেন। এর শেষ কোথায়?

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক আনন্দ আলো

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ